ঢাকা,রোববার, ১০ নভেম্বর ২০২৪

বাঁকখালী নদী এখন আবাসিক এলাকা

সৈয়দুল কাদের, কক্সবাজার :: বাঁকখালী নদী এখন আবাসিক এলাকা। দেখলে মনে হয় বঙ্গোপসাগর ও বাঁকখালী নদীর তীরে গড়ে উঠেছে আর একটি শহর। নদী দখল করে নির্বিঘ্নে বহুতল ভবন নির্মাণ হলেও যেন দেখার কেউ নেই। এতে বাঁকখালী নদী অস্তিস্থ হারাতে চলেছে। এসব বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য নদী দখল করে কাটা হয়েছে প্যারাবনের অসংখ্য গাছ। এই অবৈধ আবাসন এলাকায় দেওয়া হচ্ছে বিদ্যুৎ সংযোগ। নদীর জমি পরিমাপ করলেই বেরিয়ে আসবে কোন দখলবাজ কত জমি দখল করেছে।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, কক্সবাজার শহরের কস্তুরাঘাটে কক্সবাজার মৌজার বিএস ১ নং খাস খতিয়ানের বিএস ২২৬২ দাগে নদী শ্রেনীর ৫৪ একর ০৪ শতক, ২২৬২/২২৭০ দাগে খাল শ্রেণির ১ একর ৬৬ শতক, ১০০০১ দাগে বালুচর শ্রেণির ১ একর ৫১ শতক, ১০০০২ দাগে নদী শ্রেণির ৬৬ একর ৪০ শতক এবং ১০০০৩ দাগে বালুচর শ্রেণির ২২ একর ৯০ শতক জমির অধিকাংশ প্রকাশ্যে দখল করে প্যারাবন ধ্বংস করে ভরাট ও স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।
পেশকার পাড়ায় বসবাসরত আইনজীবী এড. নজরুল ইসলাম জানান, ২০২২ সাল ছিল বাঁকখালী দখলের মহোৎসবের বছর। একাধিকবার প্রশাসনকে অবহিত করা হলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সরকারি নদীর জমিতে প্রায় দুই শতাধিক প্লট তৈরী করে প্রকাশ্যে বিক্রি করা হচ্ছে। নির্মাণাধীন ভবনে লাগানো হয়েছে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড পর্যন্ত। বিগত সময়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এর নেতৃত্বে ঘটনাস্থলে গিয়ে উচ্ছেদ না করে দখলদারদের কাগজপত্র নিয়ে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। এমন নির্দেশনার এক বছর পুর্ণ হলেও কোন সুরাহা হয়নি। বাঁকখালী নদী দখল করে যারা আবাসন গড়ে তুলেছেন তার কোন আইনগত ভিত্তি নেই।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ ও ১৯৯৭ মহানগরী, বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরের পৌর এলাকাসহ দেশের সকল প্রকার পৌর এলাকার খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন, ২০০০ বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড আইন, ২০০০ বাংলাদেশ পানি আইন,২০১৩ জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আইন, ২০১৩, বন্যপ্রণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ ইমারত নির্মাণ আইন, ইসিএ সহ বিভিন্ন আইন ও বিধিমালা অনুসারে- নদীর জোয়ার-ভাটা বন্ধে দেয়া বাঁধ অপসারণ, প্যারাবন নিধন বন্ধ, বালি উত্তোলন করে নদী কেন্দ্রিক বিভিন্ন ছড়া ভরাট বন্ধ, জলাশয় ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ এবং অপসারণের ক্ষমতা প্রশাসনের রয়েছে। এই দখলদারদের কেন উচ্ছেদ করা হচ্ছে না তা আমার জানা নেই।

পরিবেশ বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘এনভায়রনমেন্ট পিপল’-এর প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, নদী এবং প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় জোয়ার-ভাটায় বাঁধ দিয়ে জলাশয় ভরাট ও প্যারাবন ধ্বংসের কর্মকান্ড বছরের পর বছর অব্যাহত রয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে মানববন্ধন, সভা, স্মারকলিপি প্রদান সহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করা হয়েছে। কিন্তু জেলা প্রশাসন ও ভূমি প্রশাসন আজ পর্যন্ত কোনো উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেনি। এতে দখলদাররা অপরাধ কর্মকান্ডে উৎসাহিত হচ্ছে। গত এক বছরে বাঁকখালী নদী ও নদী তীরের ১০০ একর জমি দখল করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান’কে ক্ষুদেবার্তায় এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি নোট করেছেন বলে ফিরতি বার্তায় জানান।

পাঠকের মতামত: