ঢাকা,সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

বদরখালী সমিতির নির্বাচনী প্রচারণা শেষ হচ্ছে আজ মধ্যরাতে, বুধবার ভোটগ্রহণ

ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া :
দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম সমবায়ী প্রতিষ্ঠান কক্সবাজারের চকরিয়ার বদরখালী সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতির বহুল প্রতিক্ষিত ত্রি-বার্ষিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ৫ অক্টোবর বুধবার। সেই হিসেবে ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা শেষ হচ্ছে আজ সোমবার মধ্যরাতে। এবারের নির্বাচনে সভাপতি, সহ-সভাপতি, সম্পাদক ও সদস্যসহ মোট ১২টি পদে প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী রয়েছেন ৪৪ জন। তন্মধ্যে সভাপতি পদে ৪ জন, সহ-সভাপতি পদে ৩জন, সম্পাদক পদে ৩ জন ও সদস্য পদে ৩৪ জন প্রার্থী নির্বাচনী মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন সভ্যদের (ভোটার) মন জয়ের লক্ষ্যে।
এদিকে অভিযোগ উঠেছে, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করা সভাপতি ও সম্পাদক পদের একাধিক প্রার্থী কোটি টাকা নিয়ে মাঠে নেমেছেন। ইতিমধ্যে কোন কোন প্রার্থী সর্বনিন্ম ৩ হাজার এবং সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত গোপনে সভ্যদের মাঝে বিলি করছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বদরখালী ইউনিয়নের এক ও দুই নম্বর ব্লকের বেশ কয়েকজন ভোটার বলেন, ‘তিন বছর পর পর আমাদের (ভোটার) মূল্যায়ন হয় ভোট আসলেই। এবারও সভাপতি ও সম্পাদক পদের একাধিক প্রার্থী ভোট পাওয়ার জন্য তালিকা করে সর্বনিন্ম ৩ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিলি করেছেন।’
সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্ধি এক প্রার্থী অভিযোগ করেছেন, নুরুল আমিন জনি নামের সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্ধিতায় থাকা এক প্রার্থী শনিবার মধ্যরাত থেকে টাকা বিলি শুরু করে দিয়েছেন। ইতোমধ্যে ওই প্রার্থী ইউনিয়নের এক নম্বর ব্লকের তেচ্ছাপাড়া, কুতুবদিয়া পাড়া ও দুই নম্বর ব্লকের শহরিয়া পাড়া, সাতডালিয়া পাড়া, কুতুবনগরসহ বিভিন্ন পাড়ার সভ্যদের কাছে মোটা অংকের টাকা বিলি করেছেন। বিষয়টি প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কালোটাকা বিতরণকারী প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রশাসন কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় ভোটের ফলাফলে প্রভাব পড়তে পারে বলে প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীদের অভিযোগ।
অবশ্য সম্পাদক প্রার্থী নুরুল আমিন জনি টাকা বিতরণের অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘ভোটের বাজারে প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী একে অপরের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে। তাই টাকা বিলি করছি আমি ভোটারদের মাঝে, এটিও আমার বিরুদ্ধে একটি অপপ্রচার।’
সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী হাজি নুরুল আলম সিকদার ও তার ছেলে একই পদের প্রার্থী ছরওয়ার আলমও একইভাবে টাকা বিলি শুরু করেছেন। তাদের নির্বাচনী কার্যালয় এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিনিয়ত সভ্যরা টোকেন দিয়ে টাকা নিয়ে যাচ্ছেন বলে সচেতন ভোটার ও প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীরা অভিযোগ করেছেন।
সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করলেও মাঠে দেখা যাচ্ছে না সমিতির সাবেক সম্পাদক একেএম ইকবাল বদরীকে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেশ কয়েকজন সচেতন ভোটার দৈনিক চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘ইকবাল বদরীকে নির্বাচনী মাঠ থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে এলাকার কিছু অপশক্তি চেষ্টা চালিয়েছিল। কিন্তু উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক তিনি প্রার্থীতা ফিরে পেয়ে সম্পাদক পদে নির্বাচন করছেন। ওই অপশক্তি ইতিপূর্বেও তাকে (ইকবাল বদরী) হয়রাণিমূলক মামলায় জড়িয়ে দিয়েছেন। তাই প্রকাশ্যে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালাতে না পারলেও ঠিকই সচেতন ভোটারেরা তাকে এই পদে নির্বাচিত করে দেখিয়ে দেবেন কোন অপশক্তির স্থান বদরখালীতে হবে না।’
মুঠোফোনে জানতে চাইলে সম্পাদক প্রার্থী একেএম ইকবাল বদরীচকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে বদরখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলাম, পরবর্তীতে সমিতির সভ্যদের বিপুল ভোটে সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলাম। এই সময়ের মধ্যে আমি চেষ্টা করেছি সমিতির সভ্যদের সুখে-দুঃখে পাশে থাকতে। সমিতির কোন কর্মকা-ে সভ্য বা ভোটারেরা হয়রাণি হয়েছেন তেমন কোন কর্মকা-ে আমি লিপ্ত ছিলাম না। অতীতে যে সুযোগ-সুবিধা আমার কাছ থেকে পেয়েছেন, তার বিনিময়ে সভ্যরা এবারের নির্বাচনেও আমাকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করবেন বলে আশা করি।’
এ ব্যাপারে বদরখালী সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভাপতি এবং উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাহবুব-উল করিম গতরাতে দৈনিক চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘কোন পদের কোন প্রার্থী টাকা বিলি করছেন তাদের ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে তথ্য-প্রমাণসহ লিখিত অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
নির্বাচনী এই কর্মকর্তা বলেন, ‘ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী (আজ সোমবার) মধ্যরাত পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারবেন। এর পর বন্ধ হয়ে যাবে প্রচার-প্রচারণা। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন করতে যাবতীয় প্রস্তুতি চুড়ান্ত করা হয়েছে। নিয়োগ করা হয়েছে ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তা প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসারদেরও। বদরখালী কলোনিজেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের মোট ৯টি বুথে ভোটগ্রহন চলবে।’
সরজমিন নির্বাচনী মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, জাতীয় ও স্থানীয় সরকার পরিষদ নির্বাচনকেও হার মানিয়েছে বদরখালী সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতির এই নির্বাচন। যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই রঙিন নির্বাচনী পোষ্টার, ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড, তোরণ নির্মাণসহ এমন কিছু বাদ নেই নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায়। আবার ভোটারদের মন জয়ের জন্য আঞ্চলিক ভাষায় গান রচনা করে পাড়ায় পাড়ায় গাড়ি নিয়ে নিজের পক্ষে ভোট প্রার্থনা করছেন অনেক প্রার্থী। এতে নির্বাচনীয় জ্বরে কাপছে পুরো বদরখালী।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এবারের নির্বাচনে ১২টি পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন সর্বমোট ৪৪ জন প্রার্থী। এসব প্রার্থীর মধ্য থেকে ১২টি পদের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন ১৫০০ ভোটার। সদস্য পদ ছাড়া সম্পাদকীয় পদে যারা নির্বাচন করছেন তারা হলেন সভাপতি পদে হাজি নুরুল আলম সিকদার (চেয়ার), মোহাম্মদ আলী চৌধুরী (হারিকেন), মৌলানা আবদুল মান্নান (দোয়াত কলম) ও ছরওয়ার আলম (প্রজাপতি)। সহ-সভাপতি পদে আলী মোহাম্মদ কাজল (বাই সাইকেল), আলী আজম বাহাদুর (মই) ও ছালেহ আহমদ (কলসি)। সম্পাদক পদে সাবেক সম্পাদক একেএম ইকবাল বদরী (আনারস), নুরুল আমিন জনি (চাকা) ও এম ওয়াইজ উদ্দিন (গোলাপ ফুল)। এছাড়াও সদস্য পদে ৩৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। বদরখালীর ৫০ হাজার মানুষ সমিতির ভাগ্যন্নোয়নের উপর নির্ভরশীল।

পাঠকের মতামত: