ঢাকা,বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রতিবন্ধী ও দরিদ্র রোগীদের মাঝে বিনামূল্যে ভ্রাম্যমাণ থেরাপি

889db155272fc17825b437310eb9c9efছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া ::

দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ প্রতিনিয়ত বাত ব্যথা, হাটু ব্যথা, কোমর ব্যথা, প্যারালাইসিস, হঠাৎ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ধরে যাওয়াসহ (স্ট্রোক) এ ধরনের নানা উপসর্গে ভোগে থাকেন। উচ্চ ও মধ্যবিত্ত পরিবারের আক্রান্ত এমন রোগী নিজেদের টাকায় থেরাপি চিকিৎসা নিতে পারলেও দরিদ্র ও হতদরিদ্র (প্রতিবন্ধীসহ) মানুষগুলোর পক্ষে প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা (১৫০ থেকে ২০০) দিয়ে চার আইটেমের এক থেকে দেড়ঘন্টা থেরাপি চিকিৎসা নেওয়া সম্ভবপর হয়ে উঠেনা।

তবে আশার কথা হচ্ছে, এ ধরনের রোগে আক্রান্ত নিম্ন আয়ের মানুষগুলোর থেরাপি চিকিৎসায় এগিয়ে এসেছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন। গত ১৬ জানুয়ারি থেকে কক্সবাজারের চার উপজেলা পেকুয়া, চকরিয়া, উখিয়া ও টেকনাফে পর্যায়ক্রমে ভ্রাম্যমাণ (মোবাইল) থেরাপি সেবা ক্যাম্পিংয়ের মাধ্যমে এই চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি সেবাকেন্দ্রে উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে থেরাপি চিকিৎসা নিতে। এ পর্যন্ত তিনটি ভ্রাম্যমাণ সেবাকেন্দ্র থেকে থেরাপি চিকিৎসা নিয়েছেন হাজারের বেশি নারীপুরুষ রোগী (প্রতিবন্ধীসহ)। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিনামূল্যে থেরাপি সেবা প্রদান কার্যক্রম নাম দেওয়া হলেও এই সেবা শুধুমাত্র প্রতিবন্ধীদের জন্য সীমাবদ্ধ থাকেনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন সারাদেশে জাতীয় প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশন প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র নামে ১০৩টি কেন্দ্র খুলেছে। তন্মধ্যে কক্সবাজার জেলায় স্থাপিত দুটি কেন্দ্রের একটি জেলা সদরের বায়তুশ শরফ রোডে ও অপরটি টেকনাফ সদরে। বর্তমানে চলমান এই ভ্রাম্যমাণ থেরাপি সেবাকেন্দ্র তত্ত্বাবধান করা হচ্ছে উপজেলা সমাজ সেবা কার্যালয় থেকে। গত ১৬ জানুয়ারি থেকে তিনদিন পেকুয়ায়, ১৯ জানুয়ারি থেকে তিনদিন চকরিয়ায়, ২৩ জানুয়ারি থেকে সোমবার পর্যন্ত এই সেবা কার্যক্রম চলে উখিয়া উপজেলা সদরে। গত মঙ্গলবার থেকে দ্বিতীয়দফায় তিনদিন ধরে এই সেবা কার্যক্রম ফের চালু করা হয়েছে চকরিয়ায়।

এর পর আগামী ২ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনদিন ধরে টেকনাফেও চলবে এই থেরাপি সেবাক্যাম্প।

জানা গেছে, প্রতিবন্ধী, দরিদ্র ও হতদরিদ্র মানুষগুলোর ভ্রাম্যমাণ থেরাপি চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম চালু করার আগেই সংশ্লিষ্ট উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের পক্ষ থেকে উপজেলাজুড়ে ব্যাপক মাইকিং করা হয়। এ সময় নির্দিষ্ট জায়গায় এ ধরনের চিকিৎসা নিতেও অনুরোধ করা হয়। এতে ব্যাপকভাবে সাড়া পড়ে যায় প্রত্যন্ত এলাকায়ও। বিনামূল্যে চিকিৎসা নিতে সকাল থেকেই ভিড় করতে থাকে এসব নারীপুরুষ। আর কাভার্ড ভ্যানের আদলে একটি কক্ষেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামাদি নিয়ে উপস্থিত সকল রোগীকে পর্যায়ক্রমে থেরাপি সেবা দেওয়া হচ্ছে। থেরাপি সেবাক্যাম্পে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ফিজিও কনসালট্যান্ট ডা. মেহেদী হাসান। সাথে আছেন থেরাপি সহকারী গোলাম মওলা, টেকনিশিয়ান১ মোক্তার হোসেন ও সহায়ক শিমুল মিয়া।

চকরিয়া সমাজসেবা কার্যালয়ের সামনে ভ্রাম্যমাণ থেরাপি সেবাক্যাম্পে চিকিৎসা নিতে আসা উপজেলার লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের ছিকলঘাট এলাকার আনোয়ারা বেগম (৬০) স্থানীয় ভাষায় বলেন, ‘প্রায় ৫ বছর ধরে কোমরের ব্যথা নিয়ে মারাত্মক সমস্যায় ভুগছিলাম। এতে সংসারের কাজকর্মও করতে পারি না। তাছাড়া পরিবারে অভাবঅনটন থাকায় সাধ্য হয়ে উঠেনি প্রতিদিন নির্দিষ্ট টাকা খরচ করে থেরাপি দেওয়া।’

ভ্রাম্যমাণ থেরাপি সেবাক্যাম্পের নেতৃত্ব দেওয়া ফিজিও কনসালট্যান্ট ডা. মেহেদী হাসান বলেন, ‘তিন উপজেলায় এ পর্যন্ত হাজারের বেশি আক্রান্ত রোগী (নারীপুরুষ) বিনামূল্যে থেরাপি সেবা পেয়েছেন। তন্মধ্যে শতাধিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিও রয়েছেন। থেরাপি সেবা দেওয়ার পর প্রত্যেককে একটি করে ব্যবস্থাপত্র দেওয়া হচ্ছে। ওই পত্রে বিভিন্ন পরামর্শ সাথে কিছু ওষুধ কিনে নিয়মমাফিক খাওয়ার জন্য এবং চলাফেরা ও ব্যায়াম করতেও নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘যারা ভ্রাম্যমাণ ক্যাম্পে এসে থেরাপি সেবা নিয়েছেন, তারা যদি জেলা সদর বা টেকনাফ সেবাকেন্দ্রে গিয়ে যোগাযোগ করেন তাহলে সেখানেও থেরাপি সেবা মিলবে। এজন্য কোন টাকার প্রয়োজন পড়বে না।’চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমান সরকার চিকিৎসাক্ষেত্রে যুগান্তকারী বিপ্লব ঘটিয়েছেন। যার দৃষ্টান্ত উদাহরণ বিনামূল্যে ভ্রাম্যমাণ থেরাপি সেবাক্যাম্প খোলার বিষয়টি। এ বিষয়ে আমার সঙ্গে জাতীয় প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে জনসংখ্যা অনুপাতে চকরিয়া উপজেলায় তিনদিন করে দুই দফা এই সেবাক্যাম্প চালু রাখার জন্য বলি। ইতিমধ্যে প্রথমদফায় তিনদিন এই সেবাক্যাম্প সম্পন্ন হয়েছে।

 

পাঠকের মতামত: