ঢাকা,সোমবার, ৭ অক্টোবর ২০২৪

পেকুয়া খালে বাঁধ দিয়ে পানি প্রবাহে বাধা, অনিশ্চয়তায় বোরো চাষ

a635faac4c4ead3064c18d3dfe41b2bf-22চকরিয়া প্রতিনিধি :::

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার টৈটং ইউনিয়নের মিয়াজীর ঘোনা এলাকায় খালে বাঁধ দিয়ে পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে প্রায় ১ হাজার ৮০০ একর জমিতে বোরো চাষ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কৃষকদের অভিযোগ, খালের মিয়াজীর ঘোনা এলাকায় বাঁধ দিয়ে জমি শুকিয়ে রেখে ইটভাটায় ফসলি জমির মাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
কৃষকেরা জানান, বারবাকিয়া ইউনিয়নের মৌলভীবাজারের বড় খাল থেকে সেচ–সুবিধার জন্য শত বছর আগে মিয়াজীর ঘোনা হয়ে ছলখাইয়্যা কালভার্ট পর্যন্ত কৃষকেরা একটি খাল কাটেন। বর্তমানে সেটিতে জোয়ার-ভাটা হয়। শুষ্ক মৌসুমে টৈটং ইউনিয়নের নাপিতখালী রাবার ড্যামে পানি আটকে বারবাকিয়া ও টৈটং ইউনিয়নের অন্তত তিন হাজার একর জমিতে বোরো চাষ করা হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, ছলখাইয়্যা কালভার্ট থেকে একটু পশ্চিমে খালের মধ্যে পরপর দুটি বাঁধ দেওয়া হয়েছে। একটি থেকে আরেকটির দূরত্ব আনুমানিক ৩০০ ফুট। বাঁধ দেওয়ার ফলে মিয়াজীর ঘোনা, কাদিমাকাটা ও সোনাইছড়ি এলাকায় খালে পানির প্রবাহ নেই। কৃষকেরা বোরো চাষে সেচ দিতে পারছেন না।
কৃষক সাকের আহমদ, মো. আব্বাস, ছৈয়দ নুর, মো. নেছার, আবুল বশর ও ফরিদ আহমদ জানান, চলতি বোরো মৌসুমে মিয়াজীর ঘোনা খালের পানি দিয়ে বোরো চাষ করতে অন্তত দেড় হাজার কৃষক মাঠে নামেন। কিছুদিন আগে রাতের আঁধারে খননযন্ত্র দিয়ে মাটি কেটে খালের দুই অংশে দুটি বাঁধ দেন ইটভাটার মালিক সাহাবউদ্দিন। এতে বন্ধ হয়ে যায় পানি চলাচল।
কৃষকেরা আরও বলেন, গত ২৪ জানুয়ারি মিয়াজীর ঘোনা এলাকার কৃষকেরা একত্র হয়ে একটি বাঁধের কিছু অংশ কেটে দেন। ওই সময় ভাটার মালিক সাহাবউদ্দিন পুলিশের কাছে অভিযোগ দেন।
জানতে চাইলে পেকুয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বিপুল চন্দ্র রায় বলেন, কৃষকেরা বাঁধ কেটে দিয়ে সাহাবউদ্দিন তাঁর মালিকানাধীন ইটভাটার ক্ষতি করেছেন, এমন দাবি করে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে গত শনিবার দুই পক্ষের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল কিন্তু এক পক্ষ না আসায় হয়নি। এখন দুই পক্ষকে নিয়ে আগামী শুক্রবার বৈঠকে বসার দিন ধার্য আছে।
টৈটং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘সাহাবউদ্দিন ফসলি জমি ও লোকালয়ে ইটভাটা স্থাপন করে এমনিতে ক্ষতির সম্মুখীন করছেন স্থানীয়দের। এখন নতুন করে শুষ্ক মৌসুমে বোরোর আবাদ অনিশ্চয়তায় ফেলে দিয়েছেন।’ চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘তিনি (সাহাবউদ্দিন) নিজে বাঁধ সরিয়ে না নিলে কৃষকদের নিয়ে আমিই সেই বাঁধ কেটে দেব।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইটভাটার মালিক সাহাবউদ্দিন বলেন, ‘ইটভাটায় মাটি নিতে আমি জমি ভাড়া নিয়েছি। আমার জমির ওপর বাঁধ দিয়েছি। ওখানে কারও ক্ষতি হচ্ছে না। শত্রুতাবশত কিছু ব্যক্তি ঝামেলা পাকাচ্ছেন। তাঁরা বাঁধের কিছু অংশ কেটে দিয়ে আমার ক্ষতি করেছেন। আমি থানা-পুলিশের আশ্রয় নিয়েছি।’
পেকুয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান রব্বানী বলেন, ‘এ রকম খালের দুই পাশে অনেকের জমি আছে। তাই বলে কেউ খালে বাঁধ দিতে পারবে না। কৃষকেরা আমাকে জানানোর পর বিষয়টি নিয়ে আমি উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করেছি। শিগগির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পাঠকের মতামত: