পেকুয়ায় হচ্ছে টেকসই বেড়িবাঁধ। উপকুল রক্ষায় কক্সবাজারের পানি উন্নয়ন র্বোড (পাউবো) ব্যাপক উদ্যেগ হাতে নিয়েছে। উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নের ৬৫/২বি পোল্ডারে চলছে বেড়িবাঁধ সংস্কার বাস্তবায়ন কাজ। গত এক সপ্তাহ আগে থেকে কুতুবদিয়া চ্যানেল ও ছনুয়া নদীর মোহনায় চলছে বেড়িবাঁেধ মাটি ভরাট কাজ। এদিকে পাউবো নিয়ন্ত্রিত বেড়িবাঁধ সংস্কার হওয়ায় রাজাখালী ইউনিয়নের বকশিয়াঘোনা এলাকায় অন্তত শতাধিক পরিবার উচ্ছেদ হচ্ছে। বেড়িবাঁধ সংশ্লিষ্ট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রনাধিন জায়গায় এসব পরিবার বিগত ১৯৯২সালে বসতি স্থাপন করে। নদী ভাঙ্গন, ছিন্নমুল ও ভুমিহীন পরিবারের এসব সদস্যরা বেড়িবাঁেধ আশ্রয় নিয়ে মাথাগুঁজার ঠাঁই পেয়েছে। সম্প্রতি উপকুল রক্ষা বেড়িবাঁধ সংস্কার হওয়ায় এসব পরিবারের একমাত্র মাথাগুঁজার স্থান টুকু উচ্ছেদ হচ্ছে। বকশিয়াঘোনা এলাকায় মাটি ভরাট কাজ চলমান রয়েছে। গত কয়েকদিনের ব্যবধানে বেড়িবাঁধের নিকট অবস্থানরত ২০টির অধিক বসতি গুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। মাটি কাটার বিশেষ যন্ত্র (স্কেবেটার) দিয়ে কাটছে মাটি। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার মাটি ভরাট করার সময় ছিন্নমুল মানুষের কুঁেড়ঘর গুলোতেও মাটি ফেলাচ্ছে। মাটি চাপা পড়ায় এ পর্যন্ত নুরুল হোসেন, শফিউল আলম, মোকতার আহমদ, পাখি বেগম, নুরুল আলম ও শামারুক বেগমের ৬টি বাড়ি বেড়িবাঁধের তলায় মাটির নিচে চাপা পড়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসিরা জানায় কুতুবদিয়া চ্যানেল রক্ষা বেড়িবাঁধ সংস্কার হওয়ায় পশ্চিম রাজাখালী নতুনঘোনা ও বকশিয়াঘোনার শতাধিক পরিবার উচ্ছেদের মধ্যে পড়েছে। জানা গেছে শফিউল্লাহ, জসিম উদ্দিন, কালা পুতু, রাশেদা, খালেদা, আনছার মিয়া, ফিরোজ আহমদ, আবুল বশর, আবু তাহের, হান্নান মেস্ত্রী, আহমুদুল করিম, নুরুল ইসলাম, বকতিয়ার, মোস্তাক, আবুল মরিফ, রাশেদা, শামারুক, নুরুল হক, শহর বানু, রেহেনা, বুড়ি, আসমা, লতিফা, রেজিয়া, আনোয়ারা,মহিউদ্দিন, জাকের, আমির হোসেন, ইউসুপ, নেজাম, জসিম, আজিজুর রহমান, আনিছ উল্যাহ, ছৈয়দনুর, আমান উল্লাহসহ শতাধিক পরিবার বিগত ২৪বছর ধরে বেড়িবাঁেধর জায়গায় বসবাস করছে। তারা দিন মজুর ও অনেকে ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করে। একইভাবে কিছু পরিবার সাগর থেকে মৎস্য আহরন করে সংসার চালায়। বেড়িবাঁধে যেসব পরিবার বসতি স্থাপন করেছেন তাদের সাথে পাউবোর চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। ইমবেকমেন্ট সেটেলার (ই-এস) হিসেবে এসব পরিবারকে স্বীকৃতি দেয় পাউবো। বাঁধ রক্ষানাবেক্ষন, বৃক্ষ রোপন, ও পরিচর্যার জন্য উপকুলীয় বাঁধ পুর্নবাসন প্রকল্পের আওতায় এসব পরিবারের সাথে চুক্তিপত্র সিইআরপি শিরোনামে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন র্বোড তাদের সাথে চুক্তিপত্র সম্পাদন করে। ইএস কোটায় পাউবো এসব পরিবারকে ভাতা প্রদান করতেন। যা পারিতোষিক ভাতা হিসেবে গন্য হত। চুক্তিপত্রের ধারা ৬ (গ) ষ্পষ্ট উল্লেখ আছে বাঁধ পুনঃনির্মান হলে ইএসকে বসতি স্থাপনের জন্য অগ্রাধিকার দেয়া হবে এবং নির্ধারিত সুযোগ সুবিধার অধিকার নিশ্চিত করবে পাউবো। চুক্তির গ) তে উল্লেখ করা হয়েছে বাঁেধ বসবাসকারী ইএস গনের উন্নত জীবন যাপনে সহায়তা দেবে পাউবো। সুত্র জানিয়েছে দীর্ঘ পরিকল্পনার আওতায় পাউবো বেড়িবাঁধ সংস্কার কাজ বাস্তবায়ন করছেন পেকুয়ায়। গত অর্থ বছরে বিধ্বস্থ বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ( একনেক) টাকা ছাড় দেয়। প্রধান মন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি প্রকল্পের আওতায় রাজাখালীসহ পেকুয়া উপজেলায় এ কাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে। জানা গেছে ৬৫/২বি পোল্ডারের ওই কাজের কার্যাদেশ পান ঠিকাদারি প্রতিষ্টান সোহেল কনস্ট্রাকশন। বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্টান মাটি ভরাট কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। রেজিয়া বেগম, শামারুক, রশিদা বেগম, লতিফা, খালেদা বেগম জানায় আমরা ভিক্ষুক। এ জায়গা ছাড়া আমাদের আর জায়গা নেই। একমাত্র মাথাগুজার ঠাইটুকু চলে গেলে খোলা আকাশের নিচে থাকা ছাড়া আর পথ নেই। নুরুল হোসেন, শফি আলম, নুরুল আমিন, পাখি বেগম জানায় এখন আমরা খোলা মাঠে দিন কাটাচ্ছি। গত দু’দিন আগেই আমাদের বাড়িতে মাটি চাপা দেয়া হয়েছে। সরকারের কাছে আমাদের দাবি হয় পুর্নবাসন করতে হবে। না হলে বাধেঁর সাথে আমাদেরও মাটি চাপা দিয়ে মেরে ফেলুন। আবুল হাসেম, শফিউল্লাহ, আবু তাহের, শহর বানু জানায় পুর্ব প্রস্তুতির জন্য আমাদেরকে কোন ধরনের আগাম বার্তা দেয়া হয়নি। তারা যেভাবে করছে মনে হচ্ছে আমাদের সাথে শত্রুতামি আছে। কোথায় গিয়ে আশ্রয় নেব আমরা। আমরা সরকারের কাছে দাবি করছি আমাদেরকে সহায়তা দিন। না হলে প্রায় এসব পরিবারের প্রায় ৫/৬শ মানুষের জীবন চরম হুমকির মধ্যে থাকবে। রাজাখালী ইউপির চেয়ারম্যান ছৈয়দ নুর জানায় তারা অত্যন্ত অসহায়। যাদের জায়গা জমি নেই এরাই বাঁেধ আশ্রয় নিয়েছিল। উচ্ছেদ হচ্ছে এসব অসহায় ছিন্নমুল মানুষ। সরকার তাদের বিষয়ে উদ্যেগ না নিলে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে তারা। পানি উন্নয়ন র্বোড কক্সবাজারের এরিয়া কর্মকর্তা গিয়াস উদ্দিন জানায় তারা আমাদের ইএস ভুক্ত। বেড়িবাঁধ সংস্কারের সময় ২/১ মাসের জন্য সরে যেতে হবে। বেড়িবাঁধ সংস্কার কাজ শেষ হলে তারা পুনরায় সেখানে অবস্থান করতে পারবে। আমাদের করার কিছুই নেই।
পাঠকের মতামত: