ঢাকা,মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর ২০২৪

পেকুয়ায় কাল ৩১ মার্চ সাত ইউনিয়নে নির্বাচন নিয়ে শংকায় নৌকার প্রতীকের প্রার্থীরা

Chakariaএম.শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার ॥

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার সাত ইউনিয়নের কাল ৩১ মার্চ অনুষ্টিত হচ্ছে ইউপি নির্বাচন। আর পেকুয়ার সাত ইউনিয়নের বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্টদের বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসার হিসেবে নির্বাচনী দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পেকুয়া উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. সাখাওয়াত হোছাইন উপজেলার প্রভাবশালী এক বিএনপি নেতার কাছ থেকে মোটা অংকে ম্যানেজ হয়ে বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ততা আছে এমন বিতর্কিত ব্যক্তিদের নির্বাচনী দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন ক্ষমতাসীন দলের নৌকা প্রতীকের বেশ কয়েকজন প্রার্থী।

পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এটিএম বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, ‘পেকুয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের নির্বাচনে ভরাডুবির পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতেই বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়েই তাদের দলীয় লোকজনকে নির্বাচনী দায়িত্ব দিয়েছে। তিনি অবিলম্বে বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্টদের নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দিতে নির্বাচন কমিশনের সহায়তা কামনা করেছেন।

পেকুয়ার তৃণমূলের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেছেন, কাল ৩১ মার্চ অনুষ্টিত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে পেকুয়ায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের পরাজয় নিশ্চিত করতে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা গভীর চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রে মেতেছে। ভোট গ্রহনের দিন আ’লীগের প্রার্থীদের দুর্বল রাখতে এ চক তৈরি করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকমীরা অবিলম্বে পেকুয়ার নির্বাচন কর্মকর্তার অপসারণও চান।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যে উপজেলার সাত ইউনিয়নের সবক’টি কেন্দ্রে প্রিসাইডিং, সহকারি প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসারদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এসব নিয়োগকৃত নির্বাচনী কর্মকর্তারা ৩১ মার্চ অনুষ্টিত নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করবেন। পেকুয়া উপজেলা নির্বাচন অফিসের নিয়োগকৃত এসব নির্বাচনী কর্মকর্তদের মধ্যে অধিকাংশরা হচ্ছে বিএনপি-জামাতের রাজনীতির সাথে সরাসরি জড়িত রয়েছে। ইউপি নির্বাচনে ভোট গ্রহন সময়ে ওই কর্মকর্তারা পেকুয়ার সবক’টি ইউনিয়নে তাদের দলীয় বিভিন্ন প্রার্থীদের পক্ষে কাজ চালানোর জন্য এসব রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্যসুত্র জানিয়েছেন। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা নির্বাচনে সুকৌশলে আ’লীগের প্রার্থীদের পরাজিত করতে একটি নীলনকশা তৈরি করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় প্রত্যেক ইউনিয়নের ভোট কেন্দ্রগুলোতে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের উল্লেখিত পদে সরাসরি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পেকুয়ায় স্থানীয় প্রশাসন এখনো বিএনপি-জামাত নিয়ন্ত্রিত। সারাদেশে আ’লীগের ক্ষমতা চললেও পেকুয়ার বেলায় এর ঠিক উল্টো। এখানকার প্রশাসন নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে বিএনপি-জামাতের ইশারায়।

একাধিক নির্ভরযোগ্য সুত্র জানিয়েছেন, শিলখালীতে বিএনপির প্রার্থীকে জেতাতে বিএনপি নেতাদের সাথে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী কর্মকর্তাদের কয়েকদফা গোপন বৈঠক হয়েছে। একইভাবে পেকুয়া সদর ও মগনামার বিএনপি প্রার্থীদের নিয়েও প্রশাসনের কয়েকদফা বৈঠক হয়েছে। মগনামায় বিএনপির প্রার্থীকে জেতাতে এক বিএনপি নেতার অস্থিত্বের লড়াই হয়েছে। ওই প্রার্থী বিত্তশালীও। বারবাকিয়ায় আ’লীগ প্রার্থীকে পরাজিত করতে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সরাসরি বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সাত ইউনিয়নে যেসব ব্যক্তিকে নির্বাচনী দায়িত্ব দেয়া হয়েছে এরা সরাসরি বিএনপি-জামাতের রাজনীতির সাথে জড়িত। এদের মধ্যে পেকুয়া সদরের পূর্ব গোঁয়াখালী ভোট কেন্দ্রে পোলিং অফিসার করা হয়েছে উজানটিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও উজানটিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার অফিস সহকারী মাষ্টার আরিফ আহমদকে। পেকয়া কমিউনিটি সেন্টার ভোট কেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে সাবেক শিবির নেতা ও উপজেলা প:প: কর্মকর্তা মো. আতিক উল্লাহকে। পেকুয়া জিএমসি ইনষ্টিটিউশন ভোট কেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে চকরিয়ার সহ: শিক্ষা অফিসার ও বিএনপি পন্থী আনোয়ারুল কাদেরকে। পেকুয়ার বাগগুজারা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে রাজাখালী মাদ্রাসার প্রভাষক বিএনপিপন্থী ওবায়দুল্লাহ খানকে। বারবাকিয়া ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি নুরুন্নবীকে উজানটিয়ার একটি ভোট কেন্দ্রে সহকারি প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। উজানটিয়া আহমদিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা ভোট কেন্দ্রে পেকুয়া বিএমআই কলেজের বিএনপিপন্থী শিক্ষক শাহাব উদ্দিনকে প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি সাবেক মন্ত্রী সালাহ উদ্দিন আহমদের অনুগত লোক। মগনামার ৬ নং ওয়ার্ড়ের মটকাভাঙ্গা ইফদা সাইক্লোন সেন্টার ভোট কেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে পেকুযা শহীদ জিয়া বিএমই কলেজের প্রভাষক সুজন কান্তি নাথকে। তিনিও ওই মন্ত্রীর অনুগত।

মগনামার মধ্য মগনামা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সাবেক শিবির নেতা ও উজানটিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার আরবী প্রভাষক আবদুল মান্নানকে। তার সাথে মগনামা ইউনিয়নের জামায়াতের চেয়ারম্যান প্রার্থী শহিদুল মোস্তাফার সাথে বিশেষ দহরম-মহরম সর্ম্পক রয়েছে। উজানটিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম উজানটিয়া জুনিয়র হাই স্কুলে প্রিসাইডিং অফিসার হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে জামায়াতের রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট ও পেকুয়া মেহেরনামা আলমাছিয়া মাদ্রাসার সুপার মৌলভী ছগির আহমদকে। উজানটিয়া ইউনিয়নের দারুল উলুম মাদ্রাসা ভোট কেন্দ্রে উপজেলা পরিবার কল্যান কর্মকর্তা বিএনপিপন্থী বিধান কান্তি রুদ্রকে প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। জানা গেছে, বিধান কান্তি রুদ্র গেল ইউপি নির্বাচনে পেকুয়ায় একটি কেন্দ্রে সরাসরি বিএনপির পক্ষে কাজ করেছিল অভিযোগ রয়েছে। শিলখালী ইউনিয়নের শিলখালী উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বারবাকিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিএনপিপন্থী আজিজুল হককে। শিলখালী ইউনিয়নের লম্বামূরা সবুজ পাড়া ফোরকানিয়া মাদ্রাসা ভোট কেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিবির নেতা ও টইটং উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রাশেদুল ইসলামকে। শিলখালী কাসেমুল উলুম মাদ্রাসায় প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে রাজাখালী ফৈজুন্নেসা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বহুল আলোচিত-সমালোচিত বিএনপি পন্থী নুরুল আবছারকে।

রাজাখালী বদিউদ্দিন ইলাহিয়া এবতেদায়ী মাদ্রসা ভোট কেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্বে দেওয়া হয়েছে জামাত নেতা মৌলভী নিজাম উদ্দিনকে। তিনি মৌলভী বাজার ফারুকীয়া মাদ্রাসার ইংরেজী প্রভাষক। রাজাখালী ইউনিয়নের সিকদার পাড়া ফোরকানিয়া মাদ্রাসা ভোট কেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে পেকুয়া আনোয়ারুল উলুম মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও জামায়াতের রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট মৌলনা আমিনুর রশিদকে। বকশিয়া ঘোনা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বারবাকিয়া ফাযিল মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ ও জামায়াতের রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট মাওলানা আবুল মনসুর মো. নোমানকে। রাজাখালী ফাতেমা খাতুন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রিসাইডিং অফিসার হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে জামায়াতপন্থী শিক্ষক মাওলানা শামশুল আলমকে। এছাড়াও বারবাকিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রিসাইডিংয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে জিয়া কলেজের শিক্ষক সন্তোষ দেবকে। তাকে চাকুরি দিয়েছেন সাবেক মন্ত্রী সালাহ উদ্দিন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাত ইউনিয়নের অধিকাংশ কেন্দ্রে জামাত-বিএনপি সমর্থিত ব্যক্তিরা প্রিসাইডিং, সহকারি প্রিসাইডিং ও পোলিংয়ে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ভোটের দিন ওই কর্মকর্তাদের যোগসাজসে বিএনপির প্রার্থীরা ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং মাধ্যমে জয়ী হওয়ার চেষ্টায় তৎপর রয়েছেন। বিভিন্ন ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা অভিযোগ করেছেন, সরকার দলীয় প্রার্থীদের ভরাডুবি করতে প্রশাসন নেপথ্যে থেকে সরাসরি কাজ করছে বিএনপি-জামাত প্রার্থীদের অনুকুলে।

নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা গেছে, পেকুয়া নির্বাচন কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন তারই অফিসের অফিস সহকারী নুরুল হুদা যোগসাজসে স্থানীয় বিএনপির এক প্রভাবশালী নেতার কাছ মোটা অংকে ম্যানেজ পেকুয়া অধিকাংশ ভোট কেন্দ্রে বিএনপি-জামায়াতের প্রার্থীদের জয় নিশ্চিত করতে বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট লোকজনের নির্বাচনী দায়িত্বের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে পেকুয়া নির্বাচন অফিসের অফিস সহকারী তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেছেন।

বিএনপি জামায়াত পন্থীদের পেকুয়ার সাত ইউনিয়নে নির্বাচনী কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয়ে জানতে পেকুয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. সাখাওয়াত হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন ‘আমি এখন নির্বাচনী দায়িত্বে খুব ঝামেলায় আছি। যাচাই-বাচাই করে নির্বাচনী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কে জামায়াত করে বিএনপি করে সেটা আমার দেখার বিষয় নই বলে এ কর্মকর্তা মন্তব্য করেছেন।

পাঠকের মতামত: