মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া :::
কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় উকিল আহমদ হত্যা মামলার প্রধান আসামি টইটংয়ের আলোচিত দা-বাহিনীর প্রধান নাছির উদ্দিন ওরফে দা-নাছির দেশ থেকে গত কয়েক বছর পুর্বে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর চোঁখকে ফাঁকি দিয়ে অতি ও কৌশলে গোপনে মালয়েশিয়া পালিয়ে গেছেন। বর্তমানে নাছির কুয়ালালামপুরের একটি রাবার ফ্যাক্টবিতে চাকুরী করছেন আর পরিবার ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের সাথে নিয়মিত মোবাইলের মাধ্যমে যোগাযোগও রাখছেন। বৃদ্ধ উকিল আহমদ নিশৃংসভাবে খুন হওয়ার পর ওই ঘটনায় তার ছেলে টইটং ইউপির ১নং ওয়ার্ড়ের সাবেক ইউপি সদস্য ও যুবলীগ নেতা আব্দুল জলিল বাদি হয়ে পেকুয়া থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু করে। যার মামলা নং-২৫/১৪।
এদিকে টইটংয়ের চাঞ্চল্যকর ওই হত্যা মামলার অগ্রগতি চলছে বর্তমানে ধীর গতিতে। উকিল আহমদ হত্যা মামলার চার্জর্শীটও নিয়ে তদন্তকারী সংস্থা ও তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চরম গড়িমসির অভিযোগ তুলেছেন নিহতের পরিবারসহ স্বজনরা। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দীর্ঘ এক বছর ৪ মাস ওই মামলার তদন্ত করেছেন। নিহতের পরিবার অভিযোগ করেছেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রভাবশালী আসামীদের কাছ থেচে মোটা অংকের অর্থের ঘুষ নিয়ে তাদের মামলার চার্জশীট থেকে বাদ দেওয়ার চক্রান্ত করেছিল। আর নিহতের পরিবার ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়েও শংকায় রয়েছে। জানা গেছে, গত ২০১৪সালের ২৫জুলাই টইটংয়ের বটতলি স্কুল পাড়া এলাকার মৃত.শরিয়ত উল্লাহর ছেলে বৃদ্ধ উকিল আহমদ খুন হন।
জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২৭জুলাই ওই মামলাটি পেকুয়া থানায় হত্যা মামলা হিসেবে রেকর্ড় হয়। মামলায় টইটংয়ের পন্ডিতপাড়া এলাকার মৃত.আবুল হোসেনের ছেলে ও দা-বাহিনীর প্রধান নাছির উদ্দিনকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। মামলায় ২৪জনকে নাম উল্লেখ করে আসামি করে। এছাড়া আরো ১০-১২জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। এদিকে চাঞ্চল্যকর এ হত্যা কান্ডের ঘটনায় অভিযুক্ত হওয়ায় টইটংয়ের বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডের হোতা নাছির উদ্দিন দেশান্তর হয়েছে।
নির্ভরযোগ্য সুত্র জানিয়েছেন, নাছির উদ্দিন বর্তমানে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন। প্রশাসন ও পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে ওই দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী নিজেকে রক্ষা করতে মালয়েশিয়ায় পাড়ি দিয়েছেন বলে সুত্র জানিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে মামলার প্রধান আসামি নাছির উদ্দিন ঘটনার কয়েকমাস পর দেশান্তর হয়েছেন। সাগর পথে অবৈধ উপায়ে ওই নাছির মালয়েশিয়ায় অনুপ্রবেশ করেছেন। চাঞ্চল্যকর উকিল আহমদ হত্যা মামলায় পুলিশ কয়েকজন আসামিকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠায়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পেকুয়া থানার সাবেক অফিসার ইনর্চাজ আবদুর রকিব ওই মামলার অভিযোগপত্র গত ২০১৫ ইংরেজী ২২মার্চ আদালতে প্রেরন করেন। অভিযোগ পত্রে মামলার এজাহার নামীয় ছয়জন আসামিকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছিল। এদের মধ্যে টইটং ইউনিয়ন আ’লীগ সাধারন সম্পাদক জাহেদুল ইসলাম চৌধুরীও বাদ যান। জানা গেছে মামলাটির অধিকতর তদন্তের জন্য বর্তমানে সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়েছে।
নিহত বৃদ্ধ উকিল আহমদের পুত্র ও চট্টগ্রাম সরকারী সিটি কলেজের ইংরেজী বিভাগের মেধাবী ছাত্র মো. আবুল কালাম আজাদ অভিযোগ করেছেন, তার পিতার হত্যা মামলাটি সিআইডির কক্সবাজার কার্যালয়ের এস আই হাসান মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর দীর্ঘ এক বছর ৪ মাস তদন্ত করেন। তদন্তের সময় মামলার গুরুত্বপূর্ণ আসামীদের বাদ দিয়ে গত ১৬/১০/১৬ ইংরেজী তারিখে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার, চট্টগ্রামের কাছে এপি প্রেরণ করেন এসআই হাসান জাহাঙ্গীর। আর তারা জানতে পেরে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপারের কাছে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন করে মামলাটি পুন: তদন্তের জন্য আবেদন করেন। আর সিআইডির পুলিশ সুপার তাদের আবেদন মঞ্জুর করে মামলাটি পুন তদন্তের সিআইডির কক্সবাজার অফিসের অন্য এক কর্মকর্তাকে তদন্তের দায়িত্ব দেন। আবুল কালাম আরো অভিযোগ করেছেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হাসান জাহাঙ্গীর মামলার আসামীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন।
মামলার এজারহার ও ঘটনার বিবরনে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২৫ জুলাই দিন দুপুরে দা-বাহিনীর প্রধান নাছির উদ্দিনের নেতৃত্বে একদল দুর্বৃত্তরা বৃদ্ধ উকিল আহমদের টইটংয়ের বটতলী স্কুল পাড়াস্থ বসতবাড়ি থেকে টানা হেঁচড়া করে বের করে পার্শ্ববর্তী বটতলি মাঠে নিয়ে যায়। পরে তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে খুনীরা বীরদর্পে অস্ত্র উঁিচয়ে চলে যায়। খবর পেয়ে কক্সবাজারের সহকারি পুলিশ সুপার ও পেকুয়া থানার সাবেক ওসি আবদুর রকিব সেই সময় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তখন বটতলি মাঠে শতশত লোকজনকে উকিল আহমদ হত্যা কান্ডের সাথে জড়িতদের দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন পুলিশ কর্মকর্তারা। এদিকে উকিল আহমদের পরিবার দাবি করেছেন, তারা হত্যা কান্ডের বিষয়ে আইনি সহায়তা থেকে উপেক্ষিত হচ্ছেন। সিআইডি পুলিশ তাদের সাথে চরম বিমাতাসূলভ আচারণ করেছেন। পেকুয়া থানা সেই সময় মামলার এজাহার নামিয় ছয়জন আসামিকে পুলিশ মোটাংকের টাকা নিয়ে অব্যহতি দিয়েছেন। মামলা হওয়ার পর তাদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও এখন আতংকের মধ্যে রয়েছেন। মূল আসামিরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকায় এ মামলার অগ্রগতি নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন।
পাঠকের মতামত: