এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::
পেকুয়া উপজেলায় আওয়ামীলীগের জনপ্রিয় নেতারা মনোনয়নে বাদ পড়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে তৃণমূল পর্যায়ে ক্ষোভ ও হতশা বিরাজ করছে। এই দলটিতে বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যাও বেড়ে যেতে পারে। পুনর্বিবেচনা করে মনোনয়ন পরিবর্তন করা না হলে বিজয় অর্জন করা কঠিন হয়ে উঠবে। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা সম্ভাবনাময়ী নেতাদের মনোনয়ন দেয়ার দাবী জানিয়েছেন। আগামী ৩১ মার্চ ২য় ধাপের নির্বাচনে কক্সবাজার জেলায় শুধু মাত্র পেকুয়া উপজেলার সাত ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্টিত হতে যাচ্ছে।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারী আওয়ামীলীগ পেকুয়া উপজেলার ৭ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মনোনয়ন দিয়ে নাম ঘোষণা করা হয়েছে। মনোনয়ন ঘোষণার পরপর পেকুয়ায় তৃণমুল পর্যায়ে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। পেকুয়া উপজেলায় বিভিন্ন ইউনিয়নে মনোনয়ন বঞ্চিত কয়েকজন সম্ভাব্য প্রার্থীর পক্ষে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। বেশ কয়েকজন নেতা তাদের প্রার্থীতাও ঘোষনা দিয়েছেন। প্রায় ইউনিয়নে একাধিক প্রার্থী নির্বাচন অফিস থেকে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহও করেছেন। মগনামা ইউনিয়নের মনোনয়ন বঞ্চিত সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুচ সতন্ত্রভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করারও ঘোষণা দিয়েছেন। তাকে গত ২৯ ফেব্রুয়ারী শতশত মানুষ গাড়ী বহর নিয়ে বরণ করে নেন।
জানা গেছে, পেকুয়া সদর ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেয়েছেন প্রবীন আওয়ামীলীগ নেতা এড. কামাল হোসেন। ১৯৯৭ সালের ইউপি নির্বাচনে তিনি খুবই কম ভোট পেয়েছেন। ওই পরাজয়ের পর প্রায় ১৮ বছর ধরে তিনি কোন কর্মকান্ডে নেই। গত ইউপি নির্বাচনে তিনি সরাসরি বিএনপি প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন করেছেন। দক্ষিণ মেহের নামার মন্ছুর আলম জানান; পেকুয়া সদরে ১৯৯৭ সালের ইউপি নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নেতা সাংবাদিক জহিরুল ইসলাম নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন। ২০১১ সালের নির্বাচনেও সাংবাদিক জহিরুল ইসলাম নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন। সর্বমোট ভোটে আওয়ামীলীগের অন্যান্য প্রার্থীদের চেয়ে সাংবাদিক জহিরুল ইসলাম এগিয়ে রয়েছেন। তা ছাড়া সাংবাদিক জহিরুল ইসলাম পেকুয়ায় গত বছরের ভয়াবহ বন্যায় বেড়িবাঁধের প্রায় ২৩টি ভাঙ্গন পুনঃনির্মাণ করে আমন চাষের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থাকে নিয়ে গিয়ে তিনি নিজ হাতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের প্রায় ১ (এক) কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন। বন্যার সময় বেড়িবাঁধ কেটে বন্যার পানি বের করে দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন। এমনকি তিনি পেকুয়ার মানুষের জন্য, এলাকার জন্য সবসময় কাজ করে গণ মানুষের একজন হয়ে উঠেন। সব কিছু মিলিয়ে তিনি পেকুয়া সদর ইউনিয়নে এবার বিজয়ী হয়ে আসার প্রচুর সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে তিনি বঞ্চিত হয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিশ্চুক এক আওয়ামীলীগ নেতা দাবী করেছেন; পেকুয়া উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীকে বিজয়ী করার উদ্দেশ্যে এড. কামাল হোসেন প্রার্থী হয়েছিলেন। ওই নির্বাচনে তিনি ভোট পেয়েছিলেন ২ হাজার ৫শত। উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ছাদেকুর রহমান ওয়ারেচী পেয়েছিলেন ২৮ হাজার ভোট। এ নির্বাচনে অল্প ভোট বেশী পেয়ে বিএনপির প্রার্থী বিজয়ী হয়েছিলেন। এবারের ইউপি নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী হয়ে দলের বিরুদ্ধে একই ‘সাবোটেজ’ করছেন অভিযোগ উঠেছে। আওয়ামীলীগ নেতা আবু তালেব জানান; টৈটং ইউনিয়নে এবারের জনপ্রিয় ব্যক্তি ছিলেন দুইবাবের সফল সাবেক চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি শহীদুল্লাহ বি.এ। তার পরিবর্তে মনোনয়ন পেয়েছেন, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী। এলাকাবাসী জানায়; জাহেদুল ইসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে খুনসহ একাধিক মামলা রয়েছে। মগনামা ইউনিয়নে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান খাইরুল এনাম। স্থানীয় একাধিক আওয়ামীলীগ নেতা জানান; তিনি বিএনপি ক্ষমতা থাকা অবস্থায় বিএনপিতে যোগদান করেছিলেন। ওই এলাকায় জনপ্রিয় ব্যক্তি সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুচ ও গত নির্বাচনে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী মোজাম্মেল হক বাদ পড়ে গেছেন। রাজখালী ইউনিয়নেও জনপ্রিয় নেতারা মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শিলখালী ইউনিয়নে নিজেরাই উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতা কাজীউল ইনসানকে একক প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। উজানটিয়া ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান এটিএম শহীদুল ইসলাম চৌধুরী ও বারবাকিয়া ইউনিয়নে যুবলীগের নেতা জি.এম আবুল কাশেমকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তারা দু’জনই সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন বলে এলাকাবাসী জানান। অন্যান্য ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের প্রার্থী পরিবর্তন করা না হলে বিজয়ের সম্ভাবনা খুবই ক্ষীন বলে এলাকাবাসীর ধারণা। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা সম্ভাবনাময়ী নেতাদের মনোনয়ন দেয়ার দাবী জানিয়েছেন।
পাঠকের মতামত: