ঢাকা,মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর ২০২৪

পেকুয়ায় আহত শিক্ষার্থীর পক্ষে কথা বলায় ছাত্রলীগ নেতাকে ধমকালেন খোদ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক!

kaisar_1-431x540-431x540মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া :::

কক্সাবাজারের পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী ফৈজুন্নেসা উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্টানের বাচাই পর্বে ওই বিদ্যালয়ের ৬ষ্ট শ্রেণীর এক ছাত্রের মাথায় লোহার গোলকের আঘাতে গুরুতর আহত হয়। ঘটনাটি ঘটে, গত ১৫ জানুয়ারী। এরপর স্থানীয়রা ওই ছাত্রকে প্রথমে পেকুয়া সরকারী হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে পেকুয়া সরকারীে হাসপাতালের চিকিৎসকরা। তাকে চমেক হাসপাতালে রেফার করেন। এরপর থেকে ওই ছাত্র চমেক হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন রয়েছে।

 খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার টইটং ইউনিয়নের ধনিয়াকাটা নুরুল ইসলামের ছেলে মো: কাইছার (১২) রাজাখালীস্থ তার নানার বাড়িতে থেকেই ফৈজুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ট শ্রেনীতে পড়ালেখা করছিল। গত ১৫ জানুয়ারী ওই বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার বাঁচাই পর্বে লোহার গোলক নিক্ষেপের খেলায় শিক্ষকদের অবহেলায় আরেক ছাত্রের ছুড়া গোলকের আঘাতে কাইছার এর মাথায় মারাত্মক আঘাত লাগে। এরপরে ওই ছাতুকে চমেকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও চরম আর্থিক সংকটের কারণে ছাত্রের দরিদ্র পরিবার চিকিৎসার ব্যয় নির্বাহ করতে দারুণ হিমশিম খাচ্ছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে চিকিৎসার আর্থিক ব্যয়ে সহযোগিতা না করার অভিযোগ করেছেন আহত ছাত্রের পরিবার।

 ছেলের সাথে চমেক হাসপাতালে অবস্থান করা তার মাতা হালিমা বেগম এ প্রতিনিধিকে জানান, আমার স্বামী অটোরিক্সা চালায়। সংসারে নুন আনতে ফানতা ফুরায়। এ অবস্থায় ছেলে স্কুলের খেলায় মাথায় লোহার গোলকের আঘাত পেয়ে মারাত্মক আহত হয়। আমরা চমেক হাসপাতালে নিয়ে আসার পর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাত্র ১হাজার টাকা দিয়েছেন। আমরা চিকিৎসার জন্য টাকা সহযোগিতা না পেলে ছেলেকে বাঁচাতে পারবনা।

 এছাড়াও সর্বশেষ গত ২৫ জানুয়ারী পেকুয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো: এহেতেসামুল হক ওই ছাত্রের চিকিৎসার অবহেলা ও প্রধান শিক্ষক নুরুল আবছারের অশ্লীল মন্তব্য নিয়ে তার ফেইসবুক ‘এমডি এহেতেসাম পেকুয়া কক্স, (ইংরেজিতে) ওয়ালে ওই আহত ছাত্রকে নিয়ে একটি হৃদয়স্পর্শী মন্তব্য লিখে পোস্ট করেন। তার এ পোস্ট নিয়ে ইতিমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। পাঠকদের জন্য ছাত্রলীগ নেতার ওই পোস্টটি হুবুহু তুলে ধরা হল

‘হুমকি ও অপমানিত কত তীব্রতর এবং আরফাতের মত কত মৃত্যুতে রক্ষা পাবে; আমার ছোটভাই কাইছার !!! না আরো…আমরা জানি, শিক্ষকরা হচ্ছে মানুষ করার কারিগর। তারাই হচ্ছেন সমাজ তথা দেশ তথা জাতির সর্বোত্তম ব্যক্তি। কিন্তু ব্যতিক্রম শ্রদ্ধেয় প্রধান শিক্ষক জনাব নুরুল আবছার!

বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে কাইছারের বিষয় অবগত হয়ে; অভিভাবকের সাথে যোগাযোগ করি গত ২৪ জানুয়ারী। আমি পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নের ফৈজুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রধান শিক্ষককে না পেয়ে সিনিয়র স্যার প্রদীপ স্যারের শরণাপন্ন হই বিস্তরিত জানার জন্য। প্রাথমিক কথাবার্তা শেষে, উনার পরামর্শানুযায়ী সামনে থেকেই আবছার স্যারকে ফোন করি। কথোপকথন নি¤েœবর্ণিত:

সালাম স্যার। আমি এহতেশাম সা.সম্পাদক পেকুয়া উপজেলা ছাত্রলীগ। বিভিন্ন সামাজিক অনলাইনে আপনার স্কুলের ৭ম শ্রেণীর ছাত্র টৈটং ধন্যাকাটার ছেলে কাইছার বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা গোলক নিক্ষেপের খেলায় গত ১৫/০১/’১৭ তারিখে গোলকের আঘাতে মারাত্মক আহত হয়ে চট্রগ্রাম মেডিকেলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবে কাতরাচ্ছে। তাতে আপনাদের ভূমিকার অবস্থানটা জানতে চাচ্ছিলাম।

স্যার রেগেই প্রথমে বলা শুরু করল তুর খবর নেওয়ার দরকার কি! তুই আমার স্কুলে কি! তুর এত মায়াকান্না কেন! তুকে কেন বলতে হবে! তুর নেহায়াত কিছু জানতে হলে তুর বাড়ী থেকে জানবি! এরকম বছরে ৭/৮টা ঘটনা ঘটে আমার স্কুলে! এগুলো আমার মত করে আমি শেষ করি! কৈয় তখন ত কেউ জানতে আসেনা! এটা নিয়ে কেন তুর মত সবার এত মাথাব্যথা! কিছু বলবনা! এটাও আমি আমার মত শেষ করব! দেখি কে কি করতে পারে! এটার শেষের শেষ কি আমি দেখব!

তখন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে আমি ফোন করলাম স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি জনাব এ জে এম গিয়াস উদ্দীন মামাকে। বিস্তারিত বলার পর উনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানালেন। কিন্তু অদ্যবধি পর্যন্ত দেখার কিছু নেই। কাইছার আগের অবস্থানে।

আরবশাহ বাজারে এসে বিভিন্ন অভিভাবকের সাথে কথা বলে প্রধান শিক্ষকের ব্যাপারে জানা কিছু বিষয়:

 গত ১৬/০২/১৬তারিখে আরফাতুল ইসলাম নামের ৭ম শ্রেণীর আরেক ছাত্রের ব্রেইন স্ট্রোকে মৃত্যু হয়। তার অপরাধ মাথায় নেইমার কাটিং দেওয়া। শাস্তি হিসেবে নাপিত এনে মাঠে নিয়ে মাথা ন্যাড়া করা, সবার সামনে স্কুলের পুকুরে নির্দিষ্ট পরিমাণ মাথা চোপানো যেন দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে। ৫/৬ মাস পর বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। যা বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশ হয়।

 ৬ষ্ঠ-১০ম শ্রেণীর এমপিও ভুক্ত এই অন্যতম বিদ্যাপীঠে অধ্যায়নরত আছে ১০০০ অধিক শিক্ষার্থী। তাতে কিভাবে সম্ভব, এহেন চরিত্রের লোকের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে অব্যাহত থাকা! তার নেতৃত্বে কিভাবে চলতে পারে এই বিদ্যাপীঠ! তার এত ক্ষমতার উৎস কি! তার ক্ষমতার জাল কি এত বড় যে কোন ব্যবস্থা নেওয়া যাবেনা!

 আমি যথাযথ কর্তৃপক্ষ সম্মানিত স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটি, প্র্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ, সম্মানিত জনপ্রতিনিধি, সম্মানিত উপজেলা শিক্ষা অফিসার (মাধ্যমিক), সম্মানিত উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা নির্বাহী মহোদয় সহ জেলা, বিভাগ,মহাপরিচালক (শিক্ষা)মাধ্যম হয়ে মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রীর আশু সুদৃষ্টি আকর্ষণ করছি;যেন যথাযথ ব্যবস্থা কার্যকরীভাবে গৃহীত হয়।

 এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক নুরুল আবছারের মোঠোফোনে কল করলে রিসিভ না করায় অনেকবার চেষ্টা করি। সর্বশেষ স্কুলে গিয়েও তাকে না পেয়ে অন্যান্য শিক্ষদের সাথে এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে তারা প্রধান শিক্ষক ও স্কুল সভাপতির সাথে কথা বলার জন্য অনুরোধ করেন। এরপরও মোঠোফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

পাঠকের মতামত: