ঢাকা,শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

পিএমখালী খাল খনন কাজে ব্যাপক অনিয়ম

555-300x196কক্সাবাজার প্রতিনিধি :::

কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালীতে খাল খননের নামে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি চলছে। কক্সবাজার কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন আওতায় কৃষি কাজে স্থানিয়দের পানি প্রাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে খাল খননের কাজ চললেও তা ঠিকাদারদের গাফেলতিতে নামে মাত্র মাটি উত্তোলন করে যেনতেনভাবে কাজ শেষ করে দিয়েছে। আর সামনের বর্ষা মৌসুমে সেই মাটি আবার খালে পড়ে ভরে যাবে বলে আশংকা করছে স্থানিয়রা। স্থানিয়দের অভিযোগ কৃষি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নিজেই ঠিকাদারী করছে তাই তারা কোন অভিযোগ শুনছে না।
পিএমখালী সুইস গেইট এলাকার নুরুল হুদা বলেন, পাতলী খালটি ছিল এই এলাকার কৃষি বিপ্লবের মূল কারন। প্রায় অর্ধশত বছর আগের এই খালটি এক সময় পানিতে ভরপূর ছিল। তবে মাঝখানে দখলে আর দূষনে খালটি ভরাট হয়ে গেছে আর বেশির ভাগ জমি দখল হয়ে গেছে। সম্প্রতি এই খালটি পূর্ণ খননের দায়িত্ব নেয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। সে লক্ষ্যে আমার জানা মতে সেই দপ্তর হতে  প্রায় ২২ লাখ টাকার প্রকল্প নিয়ে ৪ কিলোমিটার খাল খননের উদ্যোগ নেয়। যার ফলে এলাকার মানুষ খুবই খুশি হয়েছিল। কিন্তু যে সব ঠিকাদার কাজ পেয়েছে তারা যেভাবে খাল কেটেছে তা খুবই বাজে অবস্থা। ড্রেজার দিয়ে মাটি তুলে রেখেছে মাত্র ১ ফুট। দুরের পাড়ে তাতে সামনের বৃষ্টির পানিতে সেই মাটি আবার খালে পড়ে গিয়ে খাল ভরে যাবে এটা নিশ্চিত।
পাতলী এলাকার মোঃ রফিক বলেন, মাস খানেক আগে থেকে খাল খননের কাজ শুরু হয়েছে যতটুকু জানি খালটি ১০ ফুট গভীর করার কথা, কিন্তু তারা খুব বেশি হলে ৫/৬ ফুট মাটি কেটে চলে আসছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে তারা ৪ কিলোমিটার খাল করতে গিয়ে কমপক্ষে কয়েক কোটি টাকার ফসল নষ্ট করেছে। তারা কোন কৃষককে কোন কিছু না জানিয়ে ড্রেজার নিয়ে মাটি কাটা শুরু করেছে আর সব মাটি ক্ষেতের উপর ঢেলে দিয়ে সব ফসল নষ্ট করে দিয়েছে। এসব বিষয়ে ঠিকাদারকে স্থানিয় লোকজন অভিযোগ করলেও তিনি প্রথমে পাত্তা না দিয়ে কাজ চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে পরে লোকজন বেশি এসে অভিযোগ করলে তারা নানান ভাবে তাদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করে।
পিএমখালী গোলার পাড়ার এহসান বলেন, খাল খননের ড্রেজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া সবজি ক্ষেতের মালিকরা কান্নারত অবস্থায় আমাদের কাছে নালিশ করে। পরে আমরা সবাই বলেছি তাদের সবজিগুলো তোলার সময় দেওয়ার জন্য কিন্তু তারা স্থানিয় কিছু প্রভাবশালীদের মাধ্যমে গরীব কৃষকদের হুমকি দিয়ে তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে চুপ করে রেখেছে। বাংলাবাজার নয়াপাড়া এলাকার নুরুল হুদা বলেন, শুরু থেকেই শুনছি খাল খননে ব্যাপক অনিয়ম হচ্ছে। এটি আমাদের আশা ভরসা আবার কখন খাল খনন হবে জানিনা, তাই আমরা এলাকার জনপ্রতিনিধিসহ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের কাছে অভিযোগ দিলে সেখান কার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তরা উল্টো ঠিকাদারের পক্ষে সাফাই গাইতে শুরু করেছে। তারা বলেছে অনেক কষ্ট করে ঠিকাদার জোগাড় করেছি আর ঠিকাদারী কাজে টুকটাক কিছু সমস্যা হয় এগুলো মেনে নিতে হবে। এ সময় আমরা হতাশ হয়ে বের হয়ে আমার সাথে সাথে এক কর্মচারী বলেন আমাদের বড় কর্তারা ঠিকাদারদের কাছ থেকে আগেই মোটা অংকের টাকা নিয়েছে তাই এখানে অভিযোগ করে কোন লাভ হবে না। আর যদি কাজ চান তাহলে ঢাকা হেড অফিসে অভিযোগ দিতে হবে। আর খোঁজ নিয়ে জানা গেছে কক্সবাজার কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের সহকারী প্রকৌশলী ডালিম কুমার মজুমদার রমিজ মেম্বার নামের কুমিল্লার নিজের এক আত্মিয়কে দিয়ে নিয়ম ভেঙ্গে ২ কিলোমিটার কাজ দিয়েছে যার ব্যায় প্রায় ১১ লাখ টাকা। তাই তিনি কোন পদক্ষেপ নেওয়ার প্রশ্নই আসে না।
৩০ জানুয়ারী সরজমিনে গুলারপাড়াতে গিয়ে কাজ দেখা কালে ড্রেজার চালক মাসুম বলেন, আমি শুনেছি ১০ ফুট গভীর আর প্রস্থ কত তা বলতে পারবো না, গভীরতা নিয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন আমাকে ঠিকাদার যত টুকু কাটতে বলেছে ততটুকু কাটছি। আর ঠিকাদার হিসাবে আবুল কালাম আর কুমিল্লার রমিজ মেম্বার নামের ২ জন কাজ আছে।
ঠিকাদার আবুল কালাম বলেন, আমি নিয়ম অনুযায়ী কাজ করছি, আর সব কাজ আমার না বাকি কাজের বিষয়ে আমি বলতে পারবো না।
এ ব্যাপারে পিএমখালী ইউপি সদস্য আবুল হোসেন বলেন খান খননের কাজে যে অনিয়ম হচ্ছে সেটা ঠিক বিষয় টি নিয়ে আমরা কয়েক বার ঠিকাদার আবুল কালামকে বলেছি একই সাথে তার সহযোগিকে বলেছি তবে অনিয়ম বন্ধ হয় নি।
পিএমখালী ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ শহিদুল্লাহ বলেন, স্থানিয় লোকজন আমার কাছেও বহু বার খাল খননের কাজে অনিয়মের অভিযোগ করেছে। যার প্রেক্ষিতে আমি নিজে গিয়ে তাদের কাছে সিডিউল চাইলে দিতে পারি নি। পরে আমার কাছে সিডিউল নিয়ে আসার জন্য বললেও আজ কাল করে সময়ক্ষেপন করছে। এতে সাধারণ মানুষ খুব উত্তেজিত হয়ে কয়েক বার আমার কাছে আসলেও আমি তাদের শান্ত করেছি।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের সহকারী প্রকৌশলি ডালিম কুমার মজুমদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমি জেলার বাইরে কুমিল্লা আছি তাই এখন কোন তথ্য দিতে পারবো না। – See more at: http://www.dainikcoxsbazar.net/?p=81379#sthash.eXVQaQkd.dpuf

পাঠকের মতামত: