ঢাকা,বুধবার, ৯ অক্টোবর ২০২৪

পাহাড়ের অপহরণ একটা লাভজনক ব্যবসা

পাহাড়মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি ঃ

স্বাধীনতা সংগ্রামের পরপরই পার্বত্য চট্টগ্রামে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রিত একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী সংগঠনের উদ্ভব হয়। এই সংগঠনটির নাম শান্তিবাহিনী। দীর্ঘদিন তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করার পর ১৯৯৭ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী সফল রাষ্ট্রনায়ক জননেত্রী শেখ হাসিনা একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে নাম পরিবর্তন করে এই সংগঠনটি পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি নামে পরিচিতি লাভ করে।

প্রধানমন্ত্রী চাইলে সেনাবাহিনীকে দিয়ে গণহত্যা চালিয়ে সকল সন্ত্রাসীদের নির্মূল করতে পারতেন। কিন্তু, প্রধানমন্ত্রী শান্তি চেয়েছিলেন। তাই তিনি চুক্তি করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। সেই অনুযায়ী ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর সরকারের সাথে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী সংগঠন শান্তিবাহিনীর সাথে এক ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

এই চুক্তিটিতে সরকারের পক্ষ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটির আহবায়ক আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন এবং শান্তিবাহিনীর পক্ষ থেকে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন শান্তিবাহিনী নেতা জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে শন্তু লারমা। এই চুক্তিটি শান্তিচুক্তি নামে পরিচিত। এই চুক্তির সময়ে শান্তিবাহিনীর সদস্যরা তাদের অস্ত্র জমা দিয়েছে। কিন্তু, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সকলে এই চুক্তিটি মেনে নেয়নি। তাদের বৃহৎ একটি অংশ এই চুক্তির বিরোধিতা করে। চুক্তি বিরোধিরা রাজনৈতিক দল ইউপিডিএফ হিসেবে আতœপ্রকাশ করে। আর শান্তিবাহিনী রাজনৈতিক দল জেএসএস হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

এই দলগুলো আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিত। এই চুক্তিটি যদিও পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে করা হয়। কিন্তু, কখনো এই চুক্তি বাংলাদেশ ও বাঙ্গালীদের জন্যে কল্যাণ বয়ে আনেনি। এই চুক্তির পরে নামটাই শুধু বদলেছে। বদলায়নি তাদের কোন কার্যক্রম। বেড়েছে হত্যা, চাঁদাবাজি এবং অপহরণ। সাথে যুক্ত হয়েছে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন।

এই চুক্তির বাস্তবায়নের ফলে দৃশ্যমান হয় রাষ্ট্রের ভিতরে অন্য একটি রাষ্ট্রকে। যা রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের জন্যে হুমকি। বর্তমানে ইউপিডিএফ এবং জেএসএস দুই দলই সশস্ত্র রাজনীতি করে। সাম্প্রতিক সময়ে জেএসএস সংস্কার নামে আরো একটি রাজনৈতিক দলের আতœপ্রকাশ করে।

সেই দলটিও সশস্ত্র রাজনীতি করে। ৩ দলেরই রয়েছে পরস্পর বিরোধী অবস্থান। মাঝে মাঝে এরা আবার সশস্ত্র যুদ্ধেও নামে। তাতে স্ব-জাতীয় ও ভিন্ন দলের লোকেরা মরেও। আর পাহাড়ে বসবাসকারী সাধারণ পাহাড়ি ও বাঙ্গালীদের কাছ থেকে চাঁদা নেয়াটা পার্বত্য চট্টগ্রামের সংস্কৃতি হয়ে দাড়িয়েছে। এই চাঁদাবাজি ইউপিডিএফ, জেএসএস এবং জেএসএস সংস্কার ৩ দলই করে।

চাদা দিতে যদি কেউ অস্বীকৃতি জানায় তবে সহ্য করতে হয় নির্যাতন। কখনো কখনো হতে হয় খুন বা গুম। অপহরণটা পাহাড়ের একটা লাভজনক ব্যাবসা। এই অপহরণের শিকার হয় পর্যটক, সরকারি কর্মকর্তা, ব্যাবসায়ী এবং রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। মুক্তি মিলে মুক্তিপণের বিনিময়ে। শান্তিচুক্তির উদ্দেশ্য যদি হয় পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠা। তবে কোথায় সেই শান্তি। যেখানে হত্যা, অপহরণ, চাঁদাবাজি এবং ধর্ষনের মত ঘটনা ঘটছে। যদি শান্তিচুক্তি পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে না পারে। তবে সেই চুক্তি থেকেই বা কি লাভ।

পাঠকের মতামত: