ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সরদার শরিফের অনিয়মের তদন্ত শুরু

coxs logoবিশেষ প্রতিবেদক:
অনিয়ম-দুর্নীতিতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম। প্রায় চার বছর ধরে একই কর্মস্থলে থাকার সুবাদে তার অনিয়ম-দুর্নীতি কক্সবাজারের প্রায় সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানকে ছাড়িয়ে গেছে। তার সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত শুরু করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক মোঃ আলমগীর সম্প্রতি কক্সবাজারে দু’দিন অবস্থান করে সরেজমিন অভিযোগ তদন্ত করেছেন। কিন্তু এরপরও থামছে না তার অনিয়ম-দুর্নীতি। তদন্ত প্রক্রিয়া চলছে এবং দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হবে বলে নিশ্চিত করেছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক ও তদন্ত কর্মকর্তা মোঃ আলমগীর।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সর্দার শরিফুল ইসলাম প্রায় চার বছর ধরে কক্সবাজার কার্যালয়ে কর্মরত। প্রচার রয়েছে- নানা অভিযোগের পরও তিনি অধিদপ্তরের উপর মহলকে খুশি করেই কক্সবাজারে নির্বিঘেœ দুর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, কক্সবাজারে কোন হাসপাতাল, ক্লিনিক, প্যাথলজি পরিবেশ ছাড়পত্র না পেলেও মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলীর সংশ্লিষ্ট চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ফুয়াদ আল খতিব হাসপাতালকে মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে পরিবেশগত ছাড়পত্র প্রদান করা হয়েছে। ইট ভাটাগুলো থেকে এককালিন ও মাসিক চাঁদা আদায় করা হয়। পাহাড় কেটে গড়ে উঠা কথিত বেশ কয়েকটি আবাসন প্রকল্প থেকে একাধিক প্লট নেন তিনি। পাহাড় কাটা বিরোধী অভিযানে গিয়ে প্রমান পাওয়ার পরও রহস্যজনক কারণে ব্যবস্থা না নেয়া, সেন্টমার্টিন দ্বীপে পরিবেশ অধিদপ্তরের রেস্টহাউজ ভাড়া দিয়ে ব্যক্তিগত তহবিলে লাখ লাখ টাকা আদায়, আইনগত ও আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও সেন্টমার্টিন দ্বীপে ইটসহ নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনে উৎকোচের বিনিময়ে অনুমতি দেয়া, মামলার ভয় কিংবা চার্জশীট থেকে বাদ দেয়ার কথা বলে উৎকোচ আদায়, গুরুত্বপূর্ণ আসামীদের চার্জশীট থেকে বাদ দেয়া, পরিবেশ বিধ্বংসী বিভিন্ন কর্মকান্ডে নোটিশ দিয়ে ব্যবস্থা না নিয়ে উৎকোচ আদায়,পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ে আর্ট স্কুল পরিচালনা করা, এসটিপি না থাকার পরও তার ভাইরা চাকুরীর সুবাদে হোটেল সী-গালে পরিবেশগত ছাড়পত্র প্রদান এবং সব কাগজ-পত্র ঠিক থাকার পরও আবেদনের দুই বছর পরও ছাড়পত্র প্রদান না করা সহ বিভিন্ন অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে। এসব অভিযোগের বেশ কিছু তথ্য প্রমাণ পেয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা।
সুত্র জানায়, সরদার শরিফুল ইসলাম পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ে যোগদানের পর থেকে নানা অনিয়ম দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতিতে জড়িয়ে পড়েন। এতে কক্সবাজারের পরিবেশ সংরক্ষণ তো দূরের কথা উল্টো তার উৎসাহে কিংবা নিরবতায় হুমকির মুখে পড়েছে পর্যটন শহর কক্সবাজারের পরিবেশ-প্রতিবেশ। শুধু তাই নয়, দীর্ঘ চার বছর কক্সবাজারে চাকুরীর সুবাদে পরিবেশ বিধ্বংসী বিভিন্ন লোকজনের সাথে তার গড়ে উঠেছে মধুর সখ্যতা। যার কারণে ২০১৬ সালের ২ মে ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি (ইয়েস) কক্সবাজারের প্রধান নির্বাহী ইব্রাহিম খলিল মামুন অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করেন সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে। বর্তমানে এর তদন্ত চলছে। সরেজমিন তদন্তকালীন সময়ে তদন্ত কর্মকর্তা পাহাড় কেটে তৈরী আবাসন প্রকল্প পরিদর্শন করেন। এসব আবাসন প্রকল্পে কোথায় কোথায় শরিফুল ইসলামের প্লট রয়েছে তাও তিনি সরেজমিন পরিদর্শন করে তদন্তের আওতায় নেন। অভিযানের নামে গাড়ি ভাড়া, জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতে ভুয়া বিল-ভাউচার বানিয়ে সরকারের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ, অভিযানে জব্দকৃত মালামাল আত্মসাৎ, সরকারী গাড়ি আত্ত্বীয়-স্বজনের কাজে ব্যবহার সহ আরও একাধিক অনিয়মও আসছে তদন্তের আওতায়। এছাড়া নীতিমালা লঙ্গন করে কলাতলীতে অর্ধশত হোটেল-গেষ্ট হাউসকে পরিবেশ ছাড়পত্র দিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনাও তদন্ত করছেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অভিযোগকারী ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি (ইয়েস) কক্সবাজারের প্রধান নির্বাহী ইব্রাহিম খলিল মামুন বলেন, ‘অভিযোগের তদন্ত শুরু হওয়ার পর আরও বেপরোয়া আচরণ করছেন সর্দার শরিফ। তদন্ত ধামাচাপা চেষ্টার পাশাপাশি তিনি এখন অভিযোগকারী ও স্বাক্ষীদের ফাঁসানোর নানা চেষ্টা চালাচ্ছেন।’
অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে কক্সবাজার সোসাইটির সভাপতি কমরেড গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘কক্সবাজারের পরিবেশ ধ্বংসের পেছনে সর্দার শরিফের অনিয়ম-দুর্নীতি অন্যতম কারণ। কয়েক মাস আগে মানববন্ধন, স্মারকলিপিসহ বিভিন্ন আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা তার অপসারণ ও শাস্তির দাবী করেছি। এসব ঘটনা আমরা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপর মহলকেও অবহিত করেছি। ’
কক্সবাজার জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘সর্দার শরিফের অনিয়ম-দুর্নীতি ওপেন সিক্রেট। প্রকাশ্যে পাহাড় কেটে পিকআপে করে মাটি বহন করা হলেও তিনি ব্যবস্থা নেন না। এমনকি পাহাড় কাটার সময় গাড়ি জব্দ করা হলেও তা টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে অহরহ।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযোগ অস্বীকার করে তার বিরুদ্ধে আনিত সব অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেন সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম।

 

পাঠকের মতামত: