ঢাকা,মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর ২০২৪

নির্বাচন থেকে সরে যাচ্ছে বিএনপি?

UP-Election-bnp20160222192723বাংলামেইল :

চলমান ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ভোট ডাকাতি ও ব্যাপক সহিংসতার অভিযোগ এনে অবশেষে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার কথাই চিন্তা করেছে বিএনপি। এমনটাই আভাস পাওয়া যাচ্ছে দলের নেতাদের আলোচনায়। তবে নির্বাচনে ব্যর্থ হয়ে লজ্জা ঢাকতেই বিএনপি নির্বাচন থেকে বেরোনোর চিন্তা করছে বলে অভিযোগ আওয়ামী লীগের।

এ নির্বাচনে বিএনপির আর থাকা ঠিক হবে কি না, আলোচনা করে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। অন্যদিকে একই কথা জানিয়েছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

রোববার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনে এক আলোচনা সভায় নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘ইউপি নির্বাচনে আমাদের কিছু করা লাগে না। আওয়ামী লীগ নিজেরা নিজেরা লড়াই করে ৪২ জন মেরে ফেলেছে। এই খুন-অনাচার-ভোট কারচুপি, এটা আমাদের জন্য সম্মানজনক না। ভোট ডাকাতি, কেন্দ্র দখল, বিএনপির প্রার্থীদের বিজয় ছিনিয়ে নেয়া ও সহিংসতার পর আমাদের জন্য ভোটে থাকা কতটা সম্মানজনক হবে, আলোচনা করে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

তিনি বলেন, ‘মানুষজন আগে বিশ্বাস করতো না যে, আওয়ামী লীগ কী জিনিস? কিন্তু এখন গ্রামের লোকেরা তা বুঝতে পারছে। ভোট দিতে গিয়ে দেখে, ভোট দেয়া হয়ে গেছে অথবা ব্যালট পেপার কেড়ে নেয়া হচ্ছে। তাদের চোখের সামনে ক্ষমতাসীনরা এই ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘দেশটাকে লুটের মালের মতো যে যেভাবে পারছে খাবলাইয়া খাবলাইয়া খাচ্ছে। এই জন্যই কি আমরা দেশটা স্বাধীন করেছিলাম? যারা মুক্তিযুদ্ধে ছিল না তারা দেশটাকে খাবলাইয়া খাবলাইয়া খাবে- এই জন্য কি আমরা যুদ্ধ করেছিলাম? এই জন্যই কি দেশের মানুষ জীবন দিয়েছিল? এ জন্যই কি আমাদের লক্ষ লক্ষ মা-বোন ইজ্জত দিয়েছিলেন?’

নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আজকে এমন একটি সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন, জনগণের প্রতি যাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। আমি-আপনি ভোটে নির্বাচিত না হলে জনগণের প্রতি দায়িত্ব কী? এই রকম একটা পরিস্থিতিতে সময় কাটছে। এভাবে একটি রাষ্ট্র চলতে পারে না।’

অন্যদিকে নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘এখনও দেশজুড়ে সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। আওয়ামী সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের ঝনঝনানি ও তাণ্ডবে দেশজুড়ে ভয়াবহ আতঙ্ক বিরাজ করছে। নির্বাচনে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলায় ৪২ জন নিহত হয়েছে।’

বিএনপি পরবর্তী ধাপগুলোর ইউপি নির্বাচন বর্জন করবে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব এসময় বলেন, ‘চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির থাকা না থাকা নিয়ে আজ রাতে নীতি-নির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারেন বেগম খালেদা জিয়া। আলোচনার পর এ বিষয়ে জানানো যাবে।’

এদিকে বিএনপি নির্বাচনে ব্যর্থ হয়ে লজ্জা ঢাকতে নির্বাচন থেকে বেরোনোর চিন্তা করছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে বিএনপি জনগণের কাছে যেতে ব্যর্থ হয়েছে। সে কারণে তাদের চরম ভরাডুবি হয়েছে। তাই লজ্জার হাত থেকে বাঁচতে তারা এখন নির্বাচন থেকে বেরোনোর চিন্তা করছে। আর কেউ যদি ব্যর্থ হয়ে নির্বাচন বর্জন করতে চায় তাহলে তো অন্য কারো কিছু বলার থাকে না। তবে বিএনপিকে সুস্থ রাজনৈতিক ধারায় ফিরে আসতে হলে এ ব্যর্থতা মেনে নিতে হবে।’

বিএনপি জনগণের জ্বালাও-পোড়াও করে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছিল, সেজন্যই জনগণ সাথে নেই মন্তব্য করে হানিফ বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে এখানে প্রতিটি জনগণ ও রাজনৈতিক দলের অধিকার আছে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ও বর্জনের। সে হিসেবে নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে যে কেউই।’

পাঠকের মতামত: