আবহমান সবুজ বাংলার কালের সাক্ষী প্রাচীণতম মাতামুহুরী নদী চরম নাব্যতা সংকটে পড়েছে। শুধু সংকট নয়, ধু ধু বালুচরে পরিণত নদীতে এখন আর পত-পত করে ডিঙ্গি নৌকার পাল উড়েনা। পুরো বিস্তির্ণ এলাকা জুড়ে দেখে মনে হয়, সাহারা মরুভূমি। পরিবেশ বিশ্লেষকদের মতে, শৈত্য মওসুমে এটি যেন অঘোষিত নৌ অবরোধ। সরেজমিন ও তথ্য সূত্রে জানা যায়, বান্দরবান জেলার সীমান্তবর্তী আসাম রাজ্য এবং পর্যটন সমৃদ্ধ কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলা টেকনাফ ও মিয়ানমারের সীমানা নির্ণনয়ক নাফ নদী ঘেষে উৎপত্তির কেন্দ্রবিন্দু প্রমত্তা মাতামুহুরী নদীটি আলীকদম-লামা হয়ে চকরিয়ার সাথে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়। একসময় এ মাতামুহুরী নদীই ছিল পার্বত্য উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকার নৌ-পথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। সেই মাতামুহুরীর নৌ পথে আসতো বাঁশ, গাছ ও বেতসহ রকমারি কুটির শিল্পের নির্মাণ সামগ্রী। মাঝি-মাল্লারা জাল ফেলে ধরতো বোয়াল, রুই, কাতালসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। নাইতে নামতো গাঁয়ের বধুরা। দু’পাড়ে দেখা মিলতো সুজলা, সুফলা, শষ্য-শ্যামল সবুজ সম্ভারের এক অপূর্ব নিদর্শণ। এখন তা আর চোখে পড়ে না। বিলীন হয়ে গেছে চোখ জুড়ানো নয়নাভিরাম এ দৃশ্য। অনেকের মতে, নদীটি রাক্ষুসেও। স্থানীয়রা জানান, সাধারণত রাক্ষুসে বলা হয় এ জন্য, বর্ষায় খর¯্রােতা এ নদীর পানিতে দু’কূল প্লাবিত হয়ে ঘরবাড়ি, বিভিন্ন স্থাপনাসহ প্রাণ হারানোকে। এমনই নদী এখন প্রাণ হারিয়ে ধু ধু মরুভূমির বালুচরে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে কালের বিবর্তণে পাহাড়ি বনজ সম্পদ উজাড় হওয়া ও বিষ্পোরণ ঘটিয়ে পাথর উত্তোলনের কারণে বর্ষা মওসুমে পাহাড় ধসে পলি জমা পড়ে নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় মাতামুহুরী হারায় তার নাব্যতা। সৃষ্ট চরে চাষাবাদও করে ফসল ফলায় কৃষকরা। এদিকে বর্ষা মওসুমে প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে নাব্যতা হারানো মাতামুহুরী নদীর দু’কূল প্লাবিত হয়ে বিস্তির্ণ এলাকার ঘরবাড়ি, চাষাবাদের জমি তলিয়ে গিয়ে হচ্ছে একাকার। ঘটছে প্রাণহাণির মতো ঘটনাও। এতে দুর্ভোগে পড়ে নদীর দু’কূলে বসবাসকারী অসংখ্য মানুষ। এতে ক্ষয়ক্ষতিও হয়ে যায় অপূরণীয়। সচেতন মহল মনে করেন, সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উদ্যোগে প্রতি বছর নাব্যতা হারানো এ নদীটি যথাযথ ড্রেজিং ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে না আসায় বর্ষা মওসুমে দু’কূলের বসবাসকারী হাজার-হাজার মানুষ প্রাকৃতিক দুর্যোগে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের সম্মুখীন হচ্ছে। তাই দু’কূলের মানুষের দুঃখ-দূর্দশা লাঘবে মাতামুহুরী নদীতে ড্রেজিং কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে সরকারের উর্ধ্বতন মহল সু-দৃষ্টিপূর্বক বাস্তবায়নে সচেষ্ট হবেন এমনটাই প্রত্যাশা সচেতন মহলের।
পাঠকের মতামত: