এম.শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার :::
চলে গেছো তুমি দৃষ্টির, অগোচরে প্রতিবাদ করিনি একবারও, অস্পৃশ্য তুমি অন্য জগতে! কষ্টের খোরাক মাত্র, অস্ফুট এই কষ্ট,লুকিয়ে আলতো করে আমি ডাকছি। জানি আসবেনা তবু যেন আজও…..‘নেই ’ অ্যালবামে তাহসানের কথা, কন্ঠ ও সুরে গানের মতো করেই শেষ পর্যন্ত পরিচয় গোপন রেখে কক্সবাজারে আত্মহত্যা করেন ওয়ান-ইলেভেনের সময় ৫০ জন আমলা, রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীকে সন্দেভাজন দুর্নীতিবাজের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ও তা প্রকাশ করে আলোচিত হওয়া দুদকের সাবেক সচিব দেলোয়ার হোসেন (৬০)। উদ্ধার করা হয় ইংরেজিতে লেখা আট পৃষ্টার একটি সুসাইড নোট। দুর্দান্ত প্রতাপশালী এই সচিবের মরদেহ পরদিন বেওয়ারিশ হিসাবেই স্থানীয় বড় কবরস্থানে (কক্সবাজার কেন্দ্রীয় কবরস্থান) দাফন করা হয়। গত ১ মার্চ সোমবার কক্সবাজার শহরতলির কলাতলী এলাকার সী-হ্যাভেন গেস্টহোমে পরিচয় গোপন রেখে আট পৃষ্টার সুসাইড নোট লিখে তিনি আত্মহত্যা করেন। পরে তার পরিচয় মিলে। একমাত্র ছেলে রাজিব হোসেন পিতার কবর কক্সবাজারেই রাখার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
জানা যায়, কক্সবাজার শহরতলির কলাতলি এলাকার সী-হ্যাভেন গেস্টহোমের ১০১ নং কক্ষে হাসান শাহরিয়ার হৃদয় (৬০) নাম ধারন করে আত্মহনন করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক সচিব দেলোয়ার হোসেন। ৮ পৃষ্ঠার সু-সাইড নোট লিখে তিনি আত্মহত্যা করলেও নিজের আসল পরিচয় দেননি। তার মরদেহ ২ মার্চ পৌর কর্তৃপক্ষ কক্সবাজার কেন্দ্রিয় বড় কবরস্থানে বেওয়ারিশ হিসাবে দাফন করেন। পরে আত্মীয় স্বজন ফোন করে পুলিশকে আসল পরিচয় প্রকাশ করেন। গত ৩ মার্চ বৃহস্পতিবার তার একমাত্র ছেলে রাজিব হোসেন কক্সবাজারে এসে পিতার কবর জেয়ারত এবং আত্মহত্যার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি পিতার কবর কক্সবাজারেই রাখতে চান বলে জানিয়েছেন কবরস্থান কমিটিকে।
ওয়ান-ইলেভেনের সময় দুদকের আলোচিত সচিব ছিলেন দেলোয়ার হোসেন। তার বাড়ি চাঁদপুরের কচুয়ায়। হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা এই মেধাবী কর্মকর্তা ওয়ান-ইলেভেনের সময় ৫০ জন আমলা, রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীকে সন্দেভাজন দুর্নীতিবাজের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ও তা প্রকাশ করে আলোচিত হন।
তিনি ২৭ দিন ধরে ওই হোটেলের ১০১ নং কক্ষে হাসান শাহরিয়ার হৃদয় নামধারন করে অবস্থান করছিলেন। কক্সবাজার সদর মডেল থানা পুলিশ কর্তৃক ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা ইংরেজিতে লেখা সুসাইড নোটে ‘তিনি তার মৃত্যুর জন্য কাউকে দায়ী করেননি’। সুসাইড নোটে তিনি উল্লেখ করেন ‘বেঁচে থাকা অর্থহীন, মরে যাওয়াও নিরর্থক, জীবনে বেঁচে থেকে কী লাভ।’
সুসাইড নোটে তিনি আরো লিখেন ‘আজ হলেও মরব, কাল হলেও মরব। একটু আগে মরে গেলে অসুবিধা কী?’। এভাবে তিনি তার মৃত্যু বা আত্মহত্যা নিয়ে বিভিন্ন ‘আধ্যাত্মিক’ কথা লিখেছেন বলে জানান কক্সবাজার সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আসলাম হোসেন।
তিনি আরো জানান, সাবেক সচিব দেলোয়ার হোসেন তার আত্মহনন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কোন কথা লিখে যাননি। কোন পরিচয় না পাওয়ায় উদ্ধার হওয়া মৃত দেহটি ২ মার্চ মঙ্গলবার বিকালে কক্সবাজার পৌরসভার উদ্যোগে বেওয়ারিশ হিসাবে শহরের বড় কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
তিনি জানান, লাশ দাফনের পর তার কাছে পূর্বে পাওয়া এক মোবাইল নম্বর থেকে তিনি ভূমি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব বলে জানান। তিনি ১/১১ এর সময় দুদকের সচিব ছাড়াও পরবর্তীতে সাভারের বিপিএটিসির রেজিস্ট্রার পদেও ছিলেন।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আলী হোসেন আত্মহত্যাকারী ব্যক্তি দুদকের সাবেক সচিব দেলোয়ার হোসেন এ কথা নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনার পর তার কোন ছেলে মেয়ে আমাদের সাথে যোগাযোগ করেনি। তবে এক আত্মীয় যোগাযোগ করেছে। পুলিশ জানায়, পোস্ট মর্টেম করে লাশ দাফন করা হয়েছে। তবে রিপোর্ট এখনো পাওয়া যায়নি।
জানাগেছে, দুদকের সাবেক সচিব দেলোয়ার হোসেনের এক ছেলে ও দুই কন্যা সন্তান রয়েছে। স্ত্রীর সাথে ভালো সর্ম্পক ছিল না তার। একমাত্র ছেলে রাজিব হোসেন গত বৃহস্পতিবার পিতার কবর দেখতে কক্সবাজারে আসেন। এসময় তিনি তার পিতার কবরটি কক্সবাজারে রাখারই সিদ্ধান্ত প্রদান করেন। পিতার কবরে পাকা ঘেরা দেয়ার বিষয়েও কবরস্থান পরিচালনকারী কর্তৃপক্ষের সাথে তিনি আলাপ করেন বলে জানা যায়। পরে তিনি পিতার আত্মহত্যার ঘটনাস্থল সী-হ্যাভেন গেস্টহোমের ওই ১০১ নং কক্ষও পরিদর্শন করেন।
পাঠকের মতামত: