মোঃ রেজাউল করিম, ঈদগাঁও, কক্সবাজার ::
ঈদগাঁওতে নদী দখল করে স্থাপনা নির্মাণ অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন স্থানে একের পর এক গড়ে উঠছে নতুন স্থাপনা। দখলবাজির কারণে ঈদগাঁও নদীর পানির স্বাভাবিক গতি প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। দখলকৃত স্থানে নদীর আয়তন ও পরিধি ক্রমে সংকুচিত হয়ে আসছে। অন্যদিকে নদীতে প্রাকৃতিকভাবে এবং পোনা অবমুক্তির মাধ্যমে উৎপাদিত মৎস্য ভান্ডার ক্রমশঃ কমে যাচ্ছে। সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, বৃহত্তর ঈদগাঁওর প্রাচীনতম নদীর মধ্যে ঈদগাঁও নদী সর্বজন পরিচিত একটি প্রাণবন্ত নদী। এ নদীকে ঘিরে রয়েছে অনেক কাহিনী যা লোকমুখে শোনা যায়। এক কালের জীবন্ত ও খর¯্রােতা এ নদীটি দখলবাজির কারণে এখন মৃতপ্রায়। নদীর উপর খাড়ার ঘা’র মতো চলছে অবৈধ বালি উত্তোলন, আবর্জনা নিক্ষেপ, মলমূত্র ত্যাগ, বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উচ্ছিষ্টাংশ ফেলানো এবং নানা পয়েন্টে দখলবাজি। এ নদীতেই এখনো শত শত পরিবারের লোকজন নিত্য নৈমিত্তিক গোসল-আসল সারায়। সকালে এবং বিকেলে পালপাড়া, কানিয়াছড়া, ভোমরিয়াঘোনা, গজালিয়া, খাদেমার চর, জলদাশ পাড়া, হিন্দু পাড়ার দরিদ্র লোকজন নিয়মিত পানি ব্যবহার ও অযু-গোসল করে থাকেন। আবার এ নদী নির্ভর অনেক মৎস্য শিকারীও রয়েছেন। নদীতে পাওয়া যায় হরেক রকমের মিষ্টি পানির সুস্বাদু মাছ। সাঁতার না জানায় এ নদীতে অনেকের মৃত্যুও হয়েছে। স্থানীয় লোকজন যাকে ‘ডালি’ নিয়েছে বলে অভিহিত করে থাকেন। রাবার ড্যাম বসানোর পূর্বে ঐতিহ্যবাহী এ নদীতে নৌকা চলাচল করতো। এখনো ক্ষুদ্র পরিসরে স্লুইচ গেইট দিয়ে বর্ষাকালে নৌকা পারাপার করে। চলতি শুষ্ক মৌসুমে নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়ায় রাবার ড্যাম চালু হলেও বোরো চাষাবাদ চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। রাবার ড্যাম পানি ব্যবস্থাপনা সমিতির সভাপতি জাফর আলম এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ বিষয়টি স্বীকারও করেছেন। নদীতে বৈধ-অবৈধভাবে নানা পয়েন্টে বালি উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। দীর্ঘদিন ড্রেজিং না থাকায় বর্ষাকালে প্রবল বন্যা ও পাহাড়ী ঢলে নদীর পাানি দু’কুল ছাপিয়ে পাশর্^বর্তী এলাকাকে পানিতে নিমজ্জিত করে। একাধিক স্থানে নদীর ভাঙ্গনের ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকায় বসবাসকারীদের চলাচলে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়। সর্বোপরী বিভিন্ন স্থানে নদী দখল এখন আশঙ্কাজনকহারে বেড়ে যাচ্ছে। বাঁশঘাটা সেতু, জলদাশ পাড়া, বাজার এলাকা, বাসস্টেশনসহ নদীর বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় প্রভাবশালীরা নদীর পাড় দখল করে দোকান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ নানা স্থাপনা গড়ে তুলছে। যার কারণে মৃত প্রায় এ নদীটি তার জৌলুস হারাচ্ছে। নদীর আয়তন ক্রমশঃ ছোট হয়ে যাওয়ায় জীব বৈচিত্র্য ও মৎস্যকূলের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। ভয়াবহ বিষয় হলো কতিপয় মাছ শিকারী নদীতে বিষ প্রয়োগ করে মাছ শিকারে নামে। এতে সর্ব প্রকার মাছের উপর মারাত্মক বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। বাসস্টেশনের আশেপাশে নদীর দখল এখন অতিশয় দৃশ্যমান একটি বিষয়। ওখানকার টিনের ছাউনীর স’মিলটির ৪/৫ হাত জায়গা সম্পূর্ণ নদীর পাড়ে পড়েছে। যা বাসস্টেশনের লাল ব্রীজ থেকে লক্ষ্য করলে যে কেউ দেখতে পাবেন। এভাবে নদী দখল, দূষণ ও ব্যক্তিস্বার্থে নদীর ব্যবহার অব্যাহত থাকায় চিরচেনা এ নদীটি তার প্রকৃত রূপ হারিয়ে ফেলছে। গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টি নিয়ে যেন কারো মাথাব্যাথা নেই। খবর নেই পরিবেশবাদী ও সচেতন মহলের। দখল, জবরদখল, দূষণ অব্যাহত থাকলে নানা স্মৃতি বিজড়িত এ নদীটি এক সময় তার অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলতে পারে। বিধায় ওয়াকিবহাল মহলকে এখনি এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় প্রকৃতি আমাদের ভিন্নভাবে শিক্ষা দিয়ে ছাড়বে।
পাঠকের মতামত: