নুরুল আমিন হেলালী, কক্সবাজার :::
পর্যটন নগরী কক্সবাজার সমূদ্র সৈকতের তীরবর্তী উপকূল জুড়ে জেগে উঠা উপকুলীয় বন বিভাগের মালিকানাধীন প্যারাবনে চলছে দখলের মচ্ছব। বন বিভাগ ওইসব প্রভাবশালীদের সিন্ডিকেট ও জবর দখলকারীদের বিরুদ্ধে এক বা একাধিক মামলা দিলেও তাদের দখল মচ্ছব থেকে রক্ষা করা যাচ্ছে না উপকূলীয় প্যারাবন। উপকূলে জেগে উঠা চরে প্রকৃতিক সুন্দর্য্যের চারণ ভূমি প্রভাবশালীরা দিনের পর দিন দখল করে সম্প্রসারিত করছে তাদের অবৈধ চিংড়ি ঘের ও লবণ মাঠ। উপকুলীয় বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজারের মোট উপকুলীয় বন ভুমির পরিমান ৯১ হাজার ৭৬০ একর। এখানকার স্থানভেদে প্রায় জায়গায় দখলবাজদের থাবায় বিলীন হতে চলেছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে আধাঁর এই প্যরাবন। অস্তিত্ব সংকটে বাংলাদেশের আরেক সুন্দরবন খ্যাত চকরিয়া সুন্দরবন। এছাড়া চিলখালী, কাউয়ারদিয়া, চৌফলদন্ডি, খুরুশকুল, গোমাতলী, পোকখালী, মহেশখালী ও বাকঁখালী নদীর উপকূলীয় সরকারী বনভূমি জবর দখল করে নিচ্ছে কিছু স্থানীয় প্রভাবশালীরা। উপকুলীয় বন বিভাগের আপত্তি থাকা সত্ত্বেও লবণ ও চিংড়ি চাষের জন্য উপকূলের জেগে উঠা চরভূমি, দৃষ্টিনন্দন প্যারাবন ও বনভূমি নামে মাত্র ইজারা- বন্দোবস্তীর নামে সরকারী উপকূলীয় বনভূমি দিনের পর দিন দখলে নিচ্ছে প্রভাবশালী ভূমি খেকোরা। উপকূলের চরভূমিতে প্রাকৃতিক ও কৃত্রিমভাবে সৃষ্ট ম্যানগ্রোভ বাগান স্থানীয় উপকূলবাসীর জানমাল, স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির রক্ষা কবজ হিসেবে ভূমিকা পালন করে এলেও এখন তা কিছু ভূমি খাদকের কবলে। সরকার উপকূলীয় এলাকায় ম্যানগ্রোভ বাগান সৃষ্টির মাধ্যমে জানমাল রক্ষা ও ভূমি স্থায়িত্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে জেলার উপকূলীয় এলাকায় জেগে উঠা চরে বন বিভাগ লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে বাগান তৈরী করেন। তবে অনেকের অভিযোগ জানমাল রক্ষা বাঁধ কিভাবে চিংড়িঘের ও লবণ চাষের জন্য লিজ নেয় প্রভাবশালীরা। ৯১ এর প্রলংকরী ঘুর্ণিঝড়ে উপকূলীয় ম্যানগ্রোভ ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় উপকূলীয় বনভূমি লিজ না দেয়ার সরকারী নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও জেলার চকরিয়ার কাউয়ারদিয়া, চিলখালী, মহেশখালী, সোনাদিয়া, কতুবদিয়া, চৌফলদন্ডি, খুরুশকুল, পোকখালী, গোমাতলীসহ উপকূলীয় প্যারাবন ধ্বংস করে লবণ উৎপাদন ও চিংড়িঘের করা হচ্ছে। বেহাত হয়ে যাচ্ছে সরকারী উপকুলীয় বন বিভাগের কোটি টাকা মূল্যের চরভুমি। অন্যদিকে কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদী তীরে গড়ে উঠা প্যারাবন দখল করে ঘের তৈরীর পাশাপাশি স্থাপনা গড়ে তুলেছেন প্রভাবশালীরা। বনবিভাগ ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাঁকখালী নদী দখলদারদের তালিকা হলেও উচ্ছেদের ব্যাপারে দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ এখনও নেয়া হয়নি। ফলে দিনদিন বেদখল হয়ে যাচ্ছে এসব উপকুলীয় বনভুমি। বিশ্বস্থ সূত্রে জানা যায়, যারা নামেমাত্র লিজ নিয়েছেন তারা শুষ্ক মৌসুমে নদীর কূলে জেগে উঠা চরে বাঁধ দিয়ে দখলীয় ভূমি প্রতি বৎসর সম্প্রসারণ করে চলছে। সরেজমিনে দেখা যায়, পাউবি’র আওতাধীন চৌফলদন্ডী-খুরুশকুল উপকূলীয় বাঁধের উপর গাছ কেটে ঝুপরি ঘর তৈরী করে বসবাস করছে কিছু দরিদ্র মানুষ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েক জন জানান, তারা জায়গা গুলো স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীদের কাছ থেকে দশ-বিশ হাজার টাকায় ক্রয় করে বসবাস করছেন। অনতি বিলম্বে এসব এলাকার উপকূলীয় প্যারাবন কেটে তৈরী করা লবণ মাঠ ও চিংড়িঘের নির্মাণ কারীদের বিরুদ্বে যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে জলবায়ূর বিরুপ প্রতিক্রিয়ায় পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে স্থানীয় উপকূলবাসী।
পাঠকের মতামত: