নিউজ ডেস্ক ::
দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনের পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে দ্বীপের যত্রতত্র অবকাঠামো নির্মাণ বন্ধের পাশাপাশি পর্যটকের অবাধে বিচরণ বন্ধসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে নানা সুপারিশ করা হয়েছে। সে সুপারিশ অনুযায়ী এরই মধ্যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। দেশের জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশের পর সেন্টমার্টিন দ্বীপ রক্ষায় সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে তদন্ত কমিটি গঠনসহ নানা সুপারিশ করা হয়।
টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে ঝুঁকিপূর্ণ নৌপথের বিষয়টি তদন্তে নৌপরিবহন অধিদপ্তর একটি কমিটি গঠন করে। গত ৫ মার্চ নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের (ডিজি) কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন তদন্ত দলের প্রধান অধিদপ্তরের নটিক্যাল সার্ভেয়ার ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিন। তদন্ত দলের অন্য সদস্যরা ছিলেন অধিদপ্তরের ঢাকা নদীবন্দরের সার্ভেয়ার মির্জা সাইফুর রহমান, মুখ্য পরিদর্শক শফিকুর রহমান ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শামসুল আলম।
গত ৩ মার্চ তদন্ত দল টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে চলাচলকারী ছয়টি জাহাজ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে এলসিটি কুতুবদিয়া ও এলসিটি কাজল নামে দুটি জাহাজ। জাহাজ দুটির চলাচলের সক্ষমতা নেই। এ দুটি জাহাজের চলাচল বন্ধ করার সুপারিশ করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে।
এদিকে, সেন্টমার্টিন-টেকনাফ নৌপথে অত্যাধুনিক বাতি বয়া বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআইডবি্লউটিএ আলোর দিশারী নামে একটি জাহাজে করে চারটি অত্যাধুনিক বয়া সেন্টমার্টিনে নিয়ে আসে। ওই নৌপথে একটি বয়া বসিয়েই বাকি তিনটি চট্টগ্রামে নিয়ে যায় তারা। তিনটি বয়া বসাতে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে জানিয়ে বিআইডবি্লউটিএর সহকারী পরিচালক নয়ন শীল বলেন, ড্রেজিং না করা এবং প্রকৃতিগত কারণে নৌপথ পরিবর্তন হয়ে মিয়ানমার সীমানায় পড়ে গেছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে মিয়ানমারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা না করে সেখানে বয়া বসানো যাবে না।
সেন্টমার্টিনে নির্মিত এবং নির্মাণাধীন আবাসিক হোটেলসহ সব অবৈধ স্থাপনার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক। গত মঙ্গলবার জেলা প্রশাসকের পক্ষে পর্যটন সেলের সহকারী কমিশনার এহেছানুল মোরাদ টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, টেকনাফ সহকারী কমিশনার (ভূমি), টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ও সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে লিখিতভাবে এ নির্দেশনা দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, ‘আদালতকে আমি সব সময় সম্মান করি, তাই সেন্টমার্টিন নিয়ে আদালতের যে নির্দেশনা রয়েছে, তা বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছি।’
এ বিষয়ে কক্সবাজারের পরিবেশবাদী সংগঠন ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটির (ইয়েস) প্রধান নির্বাহী এম ইব্রাহিম খলিল মামুন বলেন, উচ্চ আদালতের রায় বাস্তবায়ন করলে দ্বীপে পরিবেশ ও প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাবে।
জানা গেছে, সেন্টমার্টিনে তিন বছরের জন্য সাময়িকভাবে পর্যটন বন্ধ করে দ্বীপটি পুনর্গঠনের সুপারিশ করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। পরিবেশ অধিদপ্তর মনে করছে, মাত্রাতিরিক্ত পর্যটনের কারণে সেন্টমার্টিনে পরিবেশ বিপর্যয় রোধ করতে সেখানে অন্তত আগামী তিন বছর সব পর্যটন কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হবে। এ সময় দ্বীপটি পুনর্গঠন তথা জীববৈচিত্র্য প্রতিস্থাপনের পর নিয়ন্ত্রিত এবং পরিকল্পিত পর্যটন চালুর মাধ্যমে দ্বীপকে রক্ষা করা যেতে পারে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার কার্যালয় থেকে ঢাকায় পাঠানো এক লিখিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, সেন্টমার্টিনের অবস্থা এতটাই নাজুক যে সেখানে পর্যটন সম্পূর্ণ বন্ধ রেখে জীববৈচিত্র্য সহায়ক প্রকল্প বাস্তবায়ন না করলে দ্বীপটি সাগরে বিলীন হয়ে যেতে পারে।
কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ১৯৯৯ সালের ১৯ এপ্রিল সেন্টমার্টিনকে পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করে। কিন্তু এ ঘোষণার সঙ্গে আনুষঙ্গিক ও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় শুধু ঘোষণার মধ্যেই কার্যক্রম সীমাবদ্ধ থাকে। কক্সবাজারে পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যালয় না থাকা এবং বিভাগীয় কার্যালয়ে অল্প লোকবল নিয়ে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সেন্টমার্টিন দ্বীপের দেখভাল করা কঠিন।’
দ্বীপের সার্বিক পরিবেশ বিপর্যয়ের কথা চিন্তা করে পরিবেশ অধিদপ্তর ‘সেন্টমার্টিন দ্বীপের জীববৈচিত্র্য রক্ষা প্রকল্প’ নামে ১৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে বলে জানান শরিফুল ইসলাম। এ প্রকল্পে কেয়াবন পুনর্নির্মাণ, কোরালের রিজেনারেশন ও কনজারভেশন, কোরাল সংগ্রহকারীদের বিকল্প কর্মসংস্থানসহ নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। খবর সমকাল।
পাঠকের মতামত: