ঢাকা,মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর ২০২৪

টেকনাফ সদরে আওয়ামীলীগে বিদ্রোহ,সুবিধায় বিএনপি

আমান উল্লাহ আমান, টেকনাফ:Teknaf-Election-Pic-15-3-16
জমে উঠেছে টেকনাফের ৬ ইউপির নির্বাচন। স্থানীয় সরকারের অধীনে প্রথম ধাপের ২২ মার্চ নির্বাচনে হোয়াইক্যং, হ্নীলা, সাবরাং, টেকনাফ, বাহারছড়া ও সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের প্রার্থী ও সমর্থকরা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে প্রচার প্রচারণায়। ঝড় উঠেছে চায়ের কাপে। চেয়ারম্যান, মেম্বার ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের প্রার্থীরা প্রতীক পাওয়ার পর নির্বাচনী প্রচারনায় কোমর বেঁধে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। ব্যস্ত সময় পার করছেন পথসভা ও গণসংযোগের মাধ্যমে। পোষ্টার ও ব্যানারে চেয়ে গেছে স্ব স্ব ইউনিয়ন, ওয়ার্ড এবং গ্রাম। এবারের নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী দলীয়ভাবে হওয়ায় বেশ জমেছে। কয়েকটি ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী থাকলেও বিএনপিতে কোন বিদ্রোহী প্রার্থী নেই। প্রার্থীদের পক্ষে চলছে বিভিন্ন শ্লোগানে মাইকিং, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, স্থানীয় ওয়েব পোর্টাল গুলোতেও চলছে ডিজিটাল প্রচারণা।

এদিকে এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধীতায় রয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মাদক নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের তালিকাভূক্ত একাধিক ইয়াবা ব্যবসায়ী প্রার্থী। ফলে নির্বাচনে ইয়াবা একটি ফ্যাক্টরে পরিনত হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ে তালিকায় থাকলেও এরা আসন্ন ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। সচেতন ভোটারেরা সংবাদকর্মীদের কাছে অভিযোগ করেন, ইয়াবা ব্যবসায়ী ও মানবপাচারকারী প্রার্থীরা কালো টাকার ও পেশী শক্তি ব্যবহার করে নির্বাচনে বিজয়ী হতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এরা নির্বাচিত হলে ইয়াবা ও মানবপাচার ব্যবসা আরো সয়লাব হয়ে যাবে এবং যুব সমাজ এর প্রতি আরো ধাবিত হবে। এমন আশংকাও করছেন সচেতন ভোটারেরা। এছাড়াও অনেকে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা ‘ইয়াবা’ নামক কলংক থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। তাছাড়া যারা প্রার্থী হয়নি তারা নেপৈথ্যে চেয়ারম্যান এবং মেম্বার প্রার্থীদের পক্ষ অবলম্বন করে প্রচুর অর্থ যোগান দিয়ে যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে আগামী ২২ মার্চ টেকনাফ সদর ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। টেকনাফ উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নের মধ্যে অন্যতম ৩ নং টেকনাফ সদর অতি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিয়ন। পৌরসভার পাশাপাশি অবস্থান ও তিন দিক দিয়ে সীমানা সংযুক্ত থাকায় এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিকভাবে সদর ইউনিয়নের গুরুত্ব অপরিসীম। এই ইউনিয়নে রয়েছে উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদ, উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক মোঃ আবদুল্লাহ ও যুবলীগের সভাপতি নুরুল আলমের বাড়ী। ফলে উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়নের চেয়ে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের কদর রয়েছে। অত্র ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৭ জন প্রতিদ্বন্ধীতা করছেন। এরা হচ্ছে আওয়ামীলীগের মনোনিত, টেকনাফ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান নৌকা প্রতীকের নুরুল আলম, বিএনপির মনোনিত ও উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক মোঃ আবদুল্লাহর ছোট ভাই ধানের শীষ প্রতীকের জিয়াউর রহমান জিহাদ, উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদের পুত্র এবং উপজেলা জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আনারস প্রতীক নিয়ে শাহাজান মিয়া, জাতীয় পার্টির মনোনিত লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে মোঃ ইসমাইল কালু, স্বতন্ত্র প্রার্থী টেলিফোন প্রতীক নিয়ে আবদুর রহমান, অটোরিক্সা প্রতীক নিয়ে দিদার মিয়া, ঘোড়া প্রতীক নিয়ে মোক্তার আহমদ।

তম্মধ্যে ৩ হেভিয়েট প্রার্থীর মধ্যে তুমুল ভোট যুদ্ধের আশংকা করছেন ভোটাররা। এরা হচ্ছে আওয়ামীলীগের মনোনিত নৌকা প্রতীকের উপজেলা যুবলীগ সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান নুরুল আলম, বিএনপি মনোনিত ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ছাত্রদল নেতা জিয়াউর রহমান জিহাদ, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আনারস প্রতীক নিয়ে উপজেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদের ছেলে শাহজাহান মিয়া। তম্মধ্যে আবদুর রহমান ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ও দিদার মিয়া আনারস প্রতীক প্রাথীর ভাই। তাদের মধ্যে নুরুল আলম, জিয়াউর রহমান জিহাদ ও শাহাজান মিয়ার মধ্যে ত্রি-মূখী ভোট লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই তিন হেভিয়েট প্রার্থীরা গ্রাম থেকে গ্রামাঞ্চলে ছুঁটছেন। মিলিত হচ্ছেন আবাল-বৃদ্ধা, তরুন ভোটারসহ সর্বস্তরের ভোটারদের সাথে। তাদের প্রতিশ্রুতির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ভয়াবহ মাদক থেকে টেকনাফবাসীর দূর্নাম ঘুচাতে প্রতিরোধ গড়ে তুলা, শিক্ষা দীক্ষায় অবহেলিত গ্রামকে শিক্ষার আলোতে আলোকিত করা, সমাজে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা, বেকারত্ব দূরীকরণে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুঁটছেন।

এদিকে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে জেলা ও উপজেলা বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মাঠে চষে বেড়াচ্ছেন। ধানের শীষকে বিজয়ী করতে দলের নেতাকর্মীদের রাত দিন তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করার জন্য গ্রাম থেকে গ্রামাঞ্চলে চষে বেড়া ও ভোট প্রার্থনার জন্য দলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে তাগিদ দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। ফলে জেলা ও উপজেলার সকল নেতাকর্মীরা এক যোগে কাজ করে যাচ্ছেন।

বিএনপির মনোনিত ধানের শীষের প্রার্থী তরুন ও উদীয়মান নেতা, সাবেক চেয়ারম্যান আলী আহমদের সুযোগ্য কনিষ্ট পুত্র ও উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক মোঃ আবদুল্লাহর ভাই জিয়াউর রহমান জিহাদ বলেন, অত্র ইউনিয়নের বাসিন্দাদের সাথে আমার পরিবার ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাছাড়া আমি বিএনপির মনোনিত প্রার্থী। ধানের শীষের প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহন করায় বিএনপি ঘরনার পরিবার ও তৃণমুলের নেতাকর্মীরা আমার পক্ষে নির্বাচনে গনসংযোগ ও প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। উখিয়া-টেকনাফের সাবেক সাংসদ শাহজাহান চৌধুরী বার বার আমার এলাকায় এসে মানুষের দ্বারে দ্বারে ছুঁটছেন ধানের শীষকে জয়যুক্ত করার জন্য। তাঁর একটি ভোট ব্যাংক ও আলাদা ইমেজ থাকায় আমি শতভাগ আশাবাদী নির্বাচনে জয়লাভ করব ইনশআল্লাহ। তিনি আরো বলেন, প্রতিবারই প্রার্থীরা এলাকার সাধারন মানুষের জীবন যাত্রার উন্নয়ন ও তাদের নিরাপত্তার বিষয়ে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান। কিন্তু নির্বাচিত হয়ে ভোটারদের সাথে প্রতারণা করেছে। আমি এই ধারা পরিবর্তনে ভোটারদের কাছে একটিবার সুযোগ চাই। আমি নির্বাচিত হলে এই অবহেলিত জনপদ থেকে আমার উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু হবে। এতদাঞ্চলের অবহেলিত মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নত মানের করা হবে। বর্তমানে সমাজে মাদকের প্রসার বৃদ্ধি পেয়েছে। মাদককে প্রতিরোধ করে শিক্ষার প্রসার ঘটানো হবে।

তিনি আশংকা প্রকাশ করে বলেন, আদৌ সূষ্টু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে কিনা। ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্ভিগ্নে যার ভোট সে দিতে পারবে কি? তিনি নির্বিগ্নে ভোট দেয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করতে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগীতা কামনা করেছেন।

আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান মিয়া বলেন, তিনি নির্বাচিত হলে মাদকমূক্ত ও নিরক্ষরমূক্ত সমাজ গঠন, সমাজে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা, সূষম উন্নয়ন, ন¤্র ও বিনয়ী আচরনের মাধ্যমে সদর ইউনিয়ন বাসীকে সাথে নিয়ে মডেল ইউনিয়নে পরিণত করবেন।

অপরদিকে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান নুরুল আলমেরও রয়েছে শক্ত অবস্থান। তারও রয়েছে প্রচুর সমর্থক। তিনি নেতাকর্মীদের নিয়ে এলাকার প্রত্যেক ভোটারের কাছে চষে বেড়াচ্ছেন।

ফলে নির্বাচন অভিজ্ঞমহলরা বলেছেন এবারের সদর ইউপি নির্বাচন হবে ত্রি-মূখী ও হাড্ডাহাডি লড়াই। অবশেষে কে জিতবে তা দেখতে আগামী ২২ মার্চ সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করছেন ভোটাররা।

এদিকে নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে চেয়ারম্যান মেম্বার ও মহিলা মেম্বার প্রার্থীরা ততই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। রাতদিন ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করছেন তারা। এছাড়া বিভিন্ন ওয়ার্ডে উঠান বৈঠক করেও ভোটারদের কাছে জনপ্রিয়তা তুলে ধরছেন প্রার্থীরা। তাছাড়া বিভিন্ন এলাকায় শোডাউন করেও শক্ত অবস্থান ধরে রাখছেন প্রার্থীরা। ৩নং টেকনাফ সদর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৭ জন ছাড়াও সংরক্ষিত ১নং মহিলা আসনে ২ জন। সংরক্ষিত ২নং মহিলা আসনে ৫ জন। সংরক্ষিত ৩নং মহিলা আসনে ২ জন। সংরক্ষিত ৩টি মহিলা আসনে মোট ১০ জন। সাধারণ ১নং ওয়ার্ডে ৯ জন। সাধারণ ২নং ওয়ার্ডে ৯ জন। সাধারণ ৩নং ওয়ার্ডে ৫ জন। সাধারণ ৪নং ওয়ার্ডে ৮ জন। সাধারণ ৫নং ওয়ার্ডে ৭ জন। সাধারণ ৬নং ওয়ার্ডে ১২ জন। সাধারণ ৭নং ওয়ার্ডে ৩ জন। সাধারণ ৮নং ওয়ার্ডে ৪ জন। সাধারণ ৯নং ওয়ার্ডে ৬ জন। সাধারণ ৯টি ওয়ার্ডে মোট ৬৩ জন। পুরো ইউনিয়নে মোট ৮০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধীতা করছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য মতে টেকনাফ উপজেলার ৬ ইউনিয়নে মোট ৫০৬ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। তম্মধ্যে চেয়ারম্যান পদে এক নারীসহ ৪২ জন, সংরক্ষিত মহিলা আসনে ৭৭ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ৩৮৭ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। সর্বমোট মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছিল ৬১০টি। উল্লেখ্য, টেকনাফ সদর ইউনিয়নে ৯ টি কেন্দ্রে মোট ২৫ হাজার ৯৭১ ভোটার রয়েছে। তম্মধ্যে পুরুষ ১৩ হাজার ১৯০ জন ও মহিলা ১২ হাজার ৭৮১ জন ভোটার। কেন্দ্রগুলো হচ্ছে, লম্বরী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় (মিঠাপানিরছড়া), উত্তর লেঙ্গুরবিল বড় মাদ্রাসা, দক্ষিন লেঙ্গুরবিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নতুন পল্লান পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মহেশখালীয়া পাড়া বড় মাদ্রাসা, গোদারবিল বায়তুশ শরফ মাদ্রামা, ছোট হাবিবপাড়া ওমরবিন খাত্তাব মাদ্রাসা, বড় হাবিবপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বরইতলী টিএন্ডটি কেন্দ্র।

পাঠকের মতামত: