ঢাকা,বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪

টেকনাফে নির্যাতিত হচ্ছে শিশু শ্রমিকরা

গিয়াস উদ্দিন ভুলু,  ::teknaf news pic 30,04,17,3

টেকনাফের বিভিন্ন এলাকায় শিশু শ্রমিকদের উপর চলছে অমানিবক নির্যাতন। ঠিকমত পাচ্ছে না তাদের পারিশ্রমিক। এই সমস্ত শিশু শ্রমিকদেরকে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করে সুবিধা আদায় করছে অর্থ লোভি ব্যবসায়ীরা।

টেকনাফ পৌর শহর ও উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ইট, কংক্রিট, ভাঙ্গা থেকে শুরু এমন কোন বিপদ জনক কাজ নেই যা শিশুদেরকে ব্যবহার করছে না।

সরেজমিনে আরো দেখা যায়, টেকনাফ পৌর শহরের বিভিন্ন হোটেল, রেস্তোরায় যে সমস্ত শিশুরা জীবনের তাগিদে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে বেশির ভাগ শিশু হচ্ছে রোহিঙ্গা। কারন এই রোহিঙ্গা শিশুরা টাকা কম হলেও  যে কোন ঝুঁকিপুর্ণ কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করে। আর সেই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে কম টাকার বিনিময়ে এই সমস্ত শিশুদেরকে ঝুঁকিপুর্ণ কাজে ব্যবহার করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। অথচ প্রতি বছর এই দিবসটি এলে শ্রমিকদের  উপর নির্যাতন ও জুলুম থেকে বাচাঁতে এবং শ্রমিকদের ন্যার্য পাওনা আদায় করতে লম্বা লম্বা গঠন মুলক বক্তব্য দিয়ে শ্রমিক নেতারা দিবসটি পালন করে থাকে। কিন্তু এই দিবসটি শেষ হওয়ার ঠিক ২৪ ঘন্টার পর নির্যাতিত শ্রমিকদের অধিকার আদায় করতে ও অসাধু ব্যবসায়ীরা যেন ঝুঁকিপুর্ণ কাজে শিশু শ্রমিক ব্যবহার করতে না পারে। সেই প্রতিবাদ আর সেই বক্তব্য চোখে পড়ে না। এই ভাবে দিনের পর দিন চলছে শ্রমিকদের উপর নির্যাতন। এদিকে টেকনাফ স্থলবন্দরেও ঠিক একই অবস্থা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে শ্রমিকরা হচ্ছে আহত হচ্ছে নিহত। অথচ সরকার এই বন্দর থেকে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করছে। সেই রাজস্ব আদায়ে সর্ব প্রথম ভুমিকা রাখছে বন্দর শ্রমিকরা। কিন্তু সে পরিমাণ পারিশ্রমিক পাচ্ছে না এবং তাদের উপর অমানবিক নির্যাতন হচ্ছে বলে দিনের পর দিন অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

বন্দরের শ্রমিকদের কাছ থেকে খবর নিয়ে জানা যায়, প্রতি বছর ভারী মালামাল উঠানামা করতে গিয়ে অনেক শ্রমিক নিমর্মভাবে প্রাণ হারাচ্ছে। আর টেকনাফের স্থানীয় শ্রমিকদের বাদ দিয়ে বন্দরের অসাধু মাঝিরা কম টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গা শ্রমিকদের দিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

এব্যাপারে স্থানীয় গরীব, দুঃখী, মেহনতী শ্রমিকরা অভিযোগ করে আরো বলেন, টেকনাফ স্থল বন্দরে লোভী মাঝিদের কারণে আমরা সঠিকভাবে আমাদের পারিশ্রমিক আদায় করতে পারচ্ছি না। উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনেক সময় মাঝিদের সাথে আমাদের অনেক ঝগড়া বিবাদ সৃষ্টি হয়।

উল্লেখ্য যে, পহেলা মে আসলে মনে পড়ে সে দিনটির কথা। ১৮৮৬ সালের এদিনে যুক্তরাষ্ট্রে শিকাগো শহরে হে মাকের্টের সামনে সর্বোচ্চ ৮ ঘন্টা কাজ ও শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা দাবীতে কঠোর আন্দোলন করেছিল শ্রমিকরা। তাদের সেই দাবী অযোক্তিক ছিল না। তখনকার শোষক এক শ্রেনীর পুলিশের গুলিতে আন্দোলনে আসা শ্রমিকদের রক্তে শিকাগো শহর ভেসে গিয়েছিল লাল রক্তের বন্যায়। এঘটনার খবর সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়লে সারা বিশ্বের দিনমজুর শ্রমিকরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাদের সে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ সারা বিশ্বে বিভিন্ন দেশে শ্রমিকদের জন্য আলাদা আইন হয়েছে এবং হয়েছে নীতিমালা। এদিনটি এখন আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৮০টি দেশে এদিন জাতীয় ছুটি হিসেবে পালন করা হয়। এদিনটি এলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে শ্রমিক সংঘঠনের নেতারা শ্রমিকদের দাবী নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ে। মিছিলে ও শ্লোগানে রাজপথ মুখরিত করে ফেলে। তারা দেশবাসীকে বোঝাতে চায় আমরা খুবই শ্রমিক বান্ধব। শ্রমিকের অধিকার আদায়ের জন্য নানান প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে। দিনটি শেষ হওয়ার সাথে সাথেই শ্রমিকদের কথা  তাদের আর মনে থাকে না। অথচ এ শ্রমিকরাই বাংলাদেশে অর্থনৈতিক আয়ের মূল চাবিকাঠি।

টেকনাফ উপজেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি ও সদর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শাহাজাহান মিয়া বলেন, যে সমস্ত শ্রমিকরা নির্যাতিত হবে সেই খবরটি শুনার সাথে সাথে টেকনাফ উপজেলার শ্রমিকলীগ তাদের পাশে থাকবে। এবং তাদের ন্যায্য অধিকার আদায় করতে ভুমিকা রাখবে। আর যে সমস্ত অসাধু ব্যবসায়ীরা ঝুঁকিপুর্ণ কাজে শিশু শ্রমিকদের ব্যবহার করছে। সেই সমস্ত ব্যবসায়ীদের প্রতি শিশু শ্রমিকদের ঝুঁকিপুর্ণ কাজ না করানোর জন্য আহবান জানান।

পাঠকের মতামত: