ঢাকা,শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪

জেলায় অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা সনাক্তে শুমারি হচ্ছে ৩ ক্যাটাগরিতে খানা তালিকা তৈরীর কাজ শুরু কাল

mlsy22jpg-300x192দেশে অবস্থানরত অনিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের (মিয়ানমারের নাগরিক) সংখ্যা নির্ণয় করতে প্রথমবারের মতো শুমারি করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রথম ধাপে আগামীকাল শুক্রবার থেকে কক্সবাজার জেলায় মাঠ পর্যায়ে খানা (পরিবার) তালিকার কাজ শুরু হচ্ছে। এরপর আগামী মার্চের শেষ সপ্তাহে চূড়ান্ত শুমারি অর্থাৎ সনাক্ত করা রোহিঙ্গাদের গণনার কাজ শুরু হবে। এসব তথ্য জানিয়েছেন জেলা পরিসংখ্যান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ওয়াহিদুর রহমান।
বর্তমানে উখিয়া উপজেলার কুতুপালং শরনার্থী শিবির ও টেকনাফ উপজেলার নয়াপাড়া শরনার্থী শিবিরে প্রায় ৩৩ হাজার নিবন্ধিত রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসবাস করছে মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করা বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা।
জেলা পরিসংখ্যান কার্যালয় সূত্রমতে, ‘বাংলাদেশে অবস্থানরত অনিবন্ধিত মিয়ানমার নাগরিক শুমারি ২০১৬’ শীর্ষক প্রকল্পটি পরিচালনা করছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো, বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের ছবি ও সাধারণ তথ্যসংবলিত একটি তথ্যসম্ভার প্রণয়ন। তাদের বর্তমান অবস্থান এবং বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের আগে মিয়ানমারে মূল বাসস্থানের ঠিকানা প্রণয়ন। এ ছাড়া অনুপ্রবেশের অন্তর্নিহিত কারণ চিহ্নিত করা এবং রোহিঙ্গাদের আর্থসামাজিক ও জনমিতি-সংক্রান্ত পরিসংখ্যান প্রণয়ন।
প্রকল্পটির জেলা শুমারি সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করছেন জেলা পরিসংখ্যান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ওয়াহিদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘খানা তালিকার কাজ করতে কক্সবাজার জেলাকে ৪৯টি জোনে ভাগ করা হয়েছে। ১১০ জন সুপারভাইজার ও ১ হাজার ৯০ জন গণনাকারী তালিকা করবেন। শুক্রবার থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত খানা তালিকার কাজ চলবে।’
জেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘শুধু কক্সবাজার নয়, শুমারির আওতায় চট্টগ্রাম, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও পটুয়াখালী জেলায় থাকা রোহিঙ্গাদেরও গণনা করা হবে। এই শুমারির মাধ্যমে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের কোন অঞ্চল থেকে এসেছে, কেন এসেছে, বাংলাদেশে তাদের
জীবিকা নির্বাহ হয় কীভাবে, পরিবারের সদস্য কতÑএইসব তথ্য সংগ্রহ করা হবে। ফলে দেশের অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের আত্মীয়-স্বজনদের খুঁজে বের করা সহজ হবে।’
সূত্রমতে, রোহিঙ্গা শুমারির জন্য ‘বি’ ‘এম’ ও ‘এক্স’Ñএই তিনটি ক্যাটাগরিতে খানার তালিকা করা হবে। ‘বি’ ক্যাটাগরি হচ্ছে, যে খানার প্রত্যেক সদস্যই বাংলাদেশি। এম ক্যাটাগরি হচ্ছে, যে খানার প্রত্যেক সদস্যই বাংলাদেশে অবস্থানরত অনিবন্ধিত মিয়ানমারের নাগরিক। এক্স ক্যাটাগরি হচ্ছে, যে খানায় বাংলাদেশি ও অনিবন্ধিত মিয়ানমারের নাগরিক বসবাস করছেন। অর্থাৎ যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে বিয়ে করেছেন, তাঁরা এক্স ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত হবেন। এক্স ক্যাটাগরির অনিবন্ধিত নাগরিকদের বের করাটা কিছুটা কঠিন হবে ধারনা করা হচ্ছে।
বাস্তবায়নাধীন ‘বাংলাদেশে অবস্থানরত অনিবন্ধিত মিয়ানমার নাগরিক শুমারি ২০১৬’ প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে,  সঠিক কোনো হিসাব না থাকলেও মিয়ানমারের ৩ থেকে ৫ লাখ নাগরিক অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। সীমান্তে কড়াকড়ি সত্বেও প্রতিদিন গড়ে আট থেকে দশজন মিয়ানমারের নাগরিক বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে। এসব রোহিঙ্গা দেশের বনভূমি ধ্বংস করে বাসস্থান গড়ে তুলে পরিবেশের ক্ষতি করছে। পাশাপাশি বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ছে। এ ছাড়া স্থানীয় শ্রমবাজার ও উপকূলীয় সমুদ্রবেষ্টনী প্রকল্পে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে তারা।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে অবৈধভাবে প্রবেশ করা মিয়ানমারের নাগরিকদের মানবিক চাহিদা পূরণে আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে বাংলাদেশের প্রতি অব্যাহত অনুরোধ রয়েছে। এর প্রেক্ষিত বিগত ২০১৪ সালে মন্ত্রিপরিষদে ‘মিয়ানমার নাগরিক-সম্পর্কিত জাতীয় কৌশলপত্র’ অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে কৌশলপত্র বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। ওই বছরের ১৫ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত টাস্কফোর্সের সভায় মিয়ানমারের অনিবন্ধিত নাগরিকদের তথ্যভান্ডার প্রণয়নের জন্য বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

পাঠকের মতামত: