ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

ছোট বোনকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় বড় ভাইকে দিগম্বর করে মারধর

chakaচকরিয়া প্রতিনিধি :::

কক্সবাজারের চকরিয়ায় অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছোটবোনকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় বড়ভাইকে দিগম্বর করে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক পিটিয়েছে দুই বখাটে। এ ঘটনায় মারধরের শিকার ওই ছাত্রীর বড়ভাই বাদী হয়ে দুই বখাটের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন গতকাল শুক্রবার।

অভিযুক্ত দুই বখাটের নাম রাসেল চন্দ্র সুশীল (২৪)। সে উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের সুশীল পাড়ার মৃত সাধন চন্দ্র সুশীলের ছেলে। অপরজনের নাম মো. রিয়াদ (২৫)। সে পৌরসভার বাঁশঘাটা এলাকার মোহাম্মদ মধুর ছেলে। অভিযোগ আছে এই দুই বখাটে চকরিয়া কলেজ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিয়ে এলাকায় নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড সংঘটিত করে।

পৌরসভার চার নম্বর ওয়ার্ডের ভরামুহুরী গ্রামের স্বপন কান্তি দে’র পুত্র রুবেল কান্তি দে’র থানায় করা অভিযোগ থেকে জানা গেছে, তার ছোটবোন লিজা রাণী দে চকরিয়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। বিদ্যালয়ে আসাযাওয়ার পথে প্রতিনিয়ত লিজাকে কুপ্রস্তাব ও প্রেম নিবেদনসহ উত্যক্ত করে আসছিল তারা। গত বুধবার রাত সাড়ে ৯ টার দিকে প্রাইভেট শিক্ষকের কাছ থেকে রিকশায় করে ভরামুহুরীস্থ বাড়িতে লিজাকে নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু তাদের পিছু নেয় মোটর সাইকেল আরোহী বখাটে রাসেল ও রিয়াদ। এক পর্যায়ে লিজাকে বাড়িতে রেখে বের হয়ে এর প্রতিবাদ করলে রুবেলকে (বাদী) দিগম্বর করে তারা মোটর সাইকেলে তুলে বালিকা বিদ্যালয় সড়কের সামনের ওশান সিটি মার্কেটের দোতলায় তুলে একটি কক্ষে নিয়ে যায়। এর পর রুবেলকে আটকে রেখে বেধড়ক মারধর করে। কেড়ে নেয় সাড়ে ১৩ হাজার টাকা মূল্যের একটি স্যামসাং মোবাইল ও নগদ ১১ হাজার ২৫০ টাকা। প্রায় দুইঘণ্টা ধরে রুবেলকে মারধর করার পর ছেড়ে দেয়। মারধরের সময় রুবেলের বাঁ চোখেও আঘাত লাগে। পরে সে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়।

লিজার বড়ভাই রুবেল অভিযোগ করেন, ওই রাতে তাকে মারধর ও টাকাসহ মালামাল কেড়ে নেওয়ার বিষয়টি কাউকে বললে তার বোন লিজাকে অপহরণ করারও হুমকি দেয় বখাটে রাসেল ও রিয়াদ। এতে বোনের পড়ালেখার ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত পরিবারের সদস্যরা।

রুবেল বলেন, ‘থানায় অভিযোগ করায় রাসেল ও রিয়াদ মুঠোফোনে হুমকিধামকি দিচ্ছে। এমনকি স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালীও থানায় দেয়া অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দিচ্ছেন। এসব বিষয় পুলিশকে জানানো হয়েছে।’

অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মহির উদ্দিন খান উজ্জ্বল বলেন, ‘স্কুলছাত্রীকে উত্যক্তের প্রতিবাদ করায় ভাইকে মারধরের বিষয়টি তদন্ত এবং দুই বখাটেকে আটক করতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।’

থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুল আজম বলেন, ‘স্কুলছাত্রীকে উত্যক্ত ও ভাইকে মারধর করার বিষয়টি প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেলে মামলা নেয়া হবে।’ এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এম এ আরিফুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘রাসেল কলেজ ছাত্রলীগের কেউ নয়। সে ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে নানা অপকর্ম করে। তবে রিয়াদ কলেজ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হলেও রাসেলের সঙ্গে থেকে বখে গেছে। তাই তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ প্রসঙ্গত গত ২ জানুয়ারি পৌরসভার চিরিঙ্গা হিন্দুপাড়ার একটি কুলিং কর্ণারের সামনে ইয়াবা ব্যবসার টাকার ভাগের বিরোধ নিয়ে কথিত ছাত্রলীগের দুইপক্ষের সংঘর্ষ হয়। তন্মধ্যে একপক্ষে আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্রশস্ত্রসহ নেতৃত্ব দেয় রাসেল। এ সময় দুইপক্ষের ছোড়া ইটের আঘাতে গুরুতর জখন হন প্রবীণ শিক্ষক চিরিঙ্গা হিন্দুপাড়ায় বাসিন্দা হৃদয় রঞ্জন দাশ।

 

পাঠকের মতামত: