১৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। বিশেষ করে চকরিয়ার ৩৬ কিলোমিটার এলাকায় গত এক মাসে দুর্ঘটনায় শিশু, নারীসহ অন্তত ২০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন অর্ধ শতাধিক।
জানা গেছে, ১৯৯৬-’৯৭ অর্থবছরে নতুন করে ওই মহাসড়ক নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। এরই অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত সড়ক বাঁকমুক্ত করতে একটি নকশাও চূড়ান্ত করা হয়েছিল। পরবর্তীতে বিএনপি ক্ষমতায় এসে এই মহাসড়ক নির্মাণকাজ বাস্তবায়নে হাত দেয়। দোহাজারী থেকে চকরিয়া পর্যন্ত অংশের কাজ পায় ইসলাম ট্রেডিং কনসোর্টিয়াম লি. (আইটিসিএল)। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কাজ করতে গিয়ে রহস্যজনক কারণে চকরিয়া অংশে অসংখ্য ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক রেখেই কাজ শেষ করে। মূলত এর পর থেকেই সড়কের চকরিয়ায় শুরু হয় ‘মৃত্যুর মিছিল’। একইভাবে সড়কের অন্য অংশেও রয়েছে শতাধিক ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক।
এ প্রসঙ্গে চকরিয়া সার্কেলের বিদায়ী সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. মাসুদ আলম (বর্তমানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার) বলেন, ‘চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অতি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন পর্যটকদের যেতে হয় সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার ও বান্দরবানে। এছাড়া সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের সেন্টমার্টিন যেতেও পর্যটকরা ব্যবহার করেন এই সড়ক। কিন্তু সেই তুলনায় সড়কটি তৈরি হয়নি বিজ্ঞানসম্মতভাবে। এ কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। ’
সড়ক ও জনপথ বিভাগের চকরিয়া কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবু আহসান মো. আজিজুল মোস্তফা জানান, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া অংশের একেবারে যে কয়টি বিপজ্জনক বাঁক রয়েছে তা নতুন করে নকশা করার জন্য ‘রুট সেফটি টিম’ পরিদর্শন করে গেছে। তাছাড়া, এসব স্থানের দুই পাশেও সড়ক প্রশস্ত করা হয়েছে যাতে দুর্ঘটনা না ঘটে। ইতোমধ্যে যেসব দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে সেগুলো ঘটেছে অদক্ষ চালক, ঘুমচোখে গাড়ি চালানো এবং নিয়ম না মেনে লবণবাহী ট্রাক-পিকআপ চলাচল করায় সড়ক পিচ্ছিল হওয়ায়। আর এসব দুর্ঘটনা সংঘটিত হয় গভীর রাতে ও ভোররাতে। তবে ভবিষ্যতে এই মহাসড়ক চারলেন করার জন্য কারিগরি সমীক্ষা (টিএ) চালানো হয়েছে। আশা করি চারলেন বাস্তবায়নের সময় একেবারে দূর হবে গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কের সমস্যা, বিজ্ঞানসম্মতভাবে তৈরি হবে ব্যস্ততম এই মহাসড়ক।
চকরিয়া থানা ট্রাফিক সার্জেন্ট মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘ছোট গাড়ি বিশেষ করে নোহ্া, মাইক্রোবাসের মতো গাড়ি ব্যবহার করার কারণে বার বার দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন পর্যটকেরা। এর ওপর যোগ হয়েছে মহাসড়কে লবণ পরিবহনের সময় গলে পড়া পানি। ’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দূরপাল্লার যাত্রী পরিবহনের একটি বাসের চালক বলেন, ‘পরিবহন জগতে যেমন দক্ষ, সৎ এবং ভালোমানের চালক-হেলপার রয়েছেন, তেমনি অসৎ, নেশাগ্রস্ত ও অদক্ষ চালকের অভাব নেই। তাদের কাছে জীবনের কোনো মায়া নেই! এ কারণে তারা মহাসড়কে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালান। তাই বার বার দুর্ঘটনা ঘটে। ’
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জহিরুল ইসলাম খান বলেন, ‘সরাসরি ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ৪২০ কিলোমিটার যাত্রায় ভালোমানের দূরপাল্লার বাস মোটামুটি নিরাপদ। একেবারে ছোট গাড়িগুলো নিয়ে এতদূর পথ পাড়ি দেওয়ার মানে হচ্ছে প্রাণ হাতে নিয়ে খেলা করা!’
নিরাপদ সড়ক চাই চকরিয়ার সভাপতি মো. সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া অংশের ৩৬ কিলোমিটারে বেশি দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে গত একমাসে। ’
মহাসড়কের বানিয়ারছড়াস্থ চিরিঙ্গা হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ আবুল হাসেম মজুমদার ও মালুমঘাট হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ মো. সেলিম মিয়া বলেন, দূরপাল্লার বাসগুলো মহাসড়কের চকরিয়া অংশের ঢোকার আগমুহূর্ত থেকে অসম প্রতিযোগিতায় থাকে। এতে ছোট যানগুলো বড় বাসের খপ্পড়ে পড়ে। এর ওপর লবণ পানিতে সড়ক পিচ্ছিল থাকায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনায় পতিত হয়। ’
পাঠকের মতামত: