বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত হেনেছে। শনিবার দুপুরের দিকে আঘাত হানা এ ঘূর্ণিঝড় উপকূলের সন্দ্বীপ, কুতুবদিয়া, কক্সবাজার, সীতাকুণ্ড, বাঁশখালী, আনোয়ারাসহ বিস্তীর্ণ এলাকা লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে যায়। ঘণ্টায় প্রায় ১২৭ কিলোমিটার গতিতে আঘাত হানে এ ঘূর্ণিঝড়। ঝড়ো বাতাসে গাছ উপড়ে পড়েছে। বিধ্বস্ত হয়েছে ঘরবাড়ি এবং অনেক স্থানে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকা। স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়েও চার থেকে পাঁচ ফুট বেশি উচ্চতা ছিল সমুদ্রে। মানুষের সহায় সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়–ক্ষতি হয়েছে। সম্ভাব্য দুর্ঘটনার আশঙ্কায় শনিবার সকাল ১১টা থেকে সারাদিন পুরো নগরীতে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রেখেছিল বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। জেলার অধিকাংশ গ্রামেও বিদ্যুৎ সরবরহ বন্ধ ছিল সারাদিন। শনিবার ভোর রাত থেকে শক্তিশালী হয়ে ওঠা ঘূর্ণিঝড়টি সারাদিন বৃষ্টি ঝরিয়ে বিকালের দিকে দুর্বল হয়ে পড়লেও গাছ ও বিধ্বস্ত ঘরবাড়ির নিচে চাপা পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন বেশ কয়েকজন। রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ১৫ জন নিহত হবার খবর পাওয়া গেছে। এরমধ্যে নগরীর ষোলশহরে এক পথশিশু, হালিশহরে দুই চিংড়ি ঘেড় কর্মচারী, বোয়ালখালীতে ১জন, সীতাকুণ্ডে মা–ছেলে এবং বাঁশখালীতে ৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বাঁশখালীতে নিহতদের মধ্যে খানখানাবাদে ৬ জন, গণ্ডামারায় ২ জন এবং ছনুয়ার ১ জন রয়েছে।
নগরীর হালিশহরে চিংড়ি ঘেরে পানির তোড়ে ভেসে গিয়ে মারা যাওয়া দুই ভাই হচ্ছেন আবুল হোসেন (৪৮) ও নুরুল কাদের (৫৩)। তাদের বাড়ি বাঁশখালীর গণ্ডামারা। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর জানান, এই দুই ভাই বেড়িবাঁধের পাশে জমি নিয়ে চিংড়ি ঘের করেছিল। চিংড়ি ঘেরে পানি উঠায় মাছ রক্ষা করতে গিয়ে পানির তোড়ে ভেসে যায় তারা। পরবর্তীতে অনেক দূরে তাদের লাশ পাওয়া যায়।
অপরদিকে ষোলশহর চিটাগং শপিং কমপ্লেক্সের পেছনে আম কুড়ানোর সময় মাথার ওপর ইট পড়ে রাকিব নামে এক কিশোর নিহত হয়েছে। এই ব্যাপারে পাঁচলাইশ থানার পুলিশ জানায়, ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার পর প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়ার মধ্যে ছেলেটি গাছের নিচে আম কুড়াতে গিয়েছিল। এসময় তিনতলা একটি ভবনের ওপর থেকে ঝড়ো হাওয়ায় ইট এসে তার মাথার ওপর পড়ে। গুরুতর আহত রাকিবকে দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়িতে দায়িত্বরত নায়েক জাহাঙ্গীর আলম। নিহত কিশোর রাকিবের পরিচয় নিয়ে আর বিস্তারিত কোন তথ্য দিতে পারেনি পুলিশ। বোয়ালখালী উপজেলায় দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে খালে মাছ ধরতে নেমে আনোয়ার কবির ভুট্টু (২৮) নামে এক যুবকের প্রাণহানি ঘটেছে। শনিবার (২১ মে) সকাল ১১টার দিকে উপজেলার কধুরখীল ইউনিয়নের পশ্চিম কধুরখীল গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। পেশায় দিনমজুর আনোয়ার কবির ভুট্টু পশ্চিম কধুরখীল গ্রামের লালা দিঘির পাড়ের মোহাম্মদ নূরু মিঞার ছেলে। স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, সকাল ১১টার দিকে ভুট্টু বাড়ির পাশে একটি খালে মাছ ধরতে যায়। বিকেল পর্যন্ত তার খোঁজ না মেলায় ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়া হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল খালে তল্লাশি চালিয়ে তার মরদেহ উদ্ধার করে।
সীতাকুণ্ড উপজেলার জঙ্গল ছলিমপুরের পাহাড়ি এলাকা কালাপানিয়া লোকমানের ঘোনা এলাকায় ঘরের উপর গাছ ভেঙে পড়লে এতে চাপা পড়ে মা–ছেলের মৃত্যু হয় বলে জানান ইউএনও নাজমুল ইসলাম ভুঁইয়া। নিহতরা হলেন– স্থানীয় মোহাম্মদ রফিকের স্ত্রী কাজল বেগম (৪৮) ও তার ছেলে বেলাল হোসেন বাবু (১০)। স্থানীয়রা জানান, পাকা খুঁটি ও বেড়া দিয়ে তৈরি ঘরে থাকতেন কাজল বেগম। ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ঝড়ো হাওয়ায় একটি গাছ ভেঙে ওই ঘরের ওপর পড়ে।
বাঁশখালীর খানখানাবাদে নিহতরা হলেন সৈয়দ আহমদের পুত্র আবু ছিদ্দিক(৭০), শাহ আলমের কন্যা মরজান বেগম(৮), মো. ইসমাইলের কন্যা জান্নাতুল মাওয়া(৩) ও শাহ আলমের দুই কন্যা। অন্যজন অজ্ঞাত পরিচয়। গণ্ডামারায় শহর মুল্লুকের দুই পুত্র নুরুল কাদের(৫৬) ও আবুল হোসেন(৪০) ও ছনুয়ায় মো. তাহেরের স্ত্রী তাহেরা বেগম(৩৫)।
এদিকে নগরীর আগ্রাবাদ বনানী কমপ্লেক্সের সামনে একটি বহুতল ভবন থেকে থাই গ্লাস পড়ে এনামুল কবির নামে এক পথচারীসহ ৮ জন আহত হয়েছেন। আহতদেরকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।কোতোয়ালী মোড়ে বেলা ১টার দিকে সিএনজি ট্যাক্সির উপর গাছ পড়ে এক যাত্রী আহত হয়েছেন। এসময় সিএনজিটি দুমড়ে মুচড়ে যায়। এছাড়া চকবাজার এলাকায় সুপ্রভাত বাংলাদেশের সাংবাদিক দেব চক্রবর্তীর ঘরের দেয়াল ভেঙে খাটের ওপর পড়লে তিনি আহত হন। গতকাল শনিবার সকাল থেকে দুপুরে এসব ঘটনা ঘটে।
পতেঙ্গা নেভাল একাডেমি সড়কের বেহাল দশা ঃ ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে নগরীর পতেঙ্গা নেভাল একাডেমি সড়কের প্রায় দুই কিলোমিটার জুড়ে কার্পেটিং উঠে গেছে। ভেঙে গেছে বেড়ি বাঁধের রিটেইনিং ওয়াল। ফলে যানচলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে সড়কটি। সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সড়কের দক্ষিণ পাশে বাটারফ্লাই পার্কের সামনে থেকে নেভাল একাডেমির গেইট পর্যন্ত সড়কের অধিকাংশ স্থানে কার্পেটিং উঠে গিয়ে কোথাও কোথাও গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কর্ণফুলীতে ধসে পড়েছে সড়কের পাশের দেওয়াল। সড়কের যে অবস্থা তাতে যানচলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। হেঁটে চলাও দায়। এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, দ্রুত সড়কটির মেরামত কাজ না করলে দুর্ভোগে পড়তে হবে। পাশাপাশি বিমানবন্দরে যাওয়া–আসার ক্ষেত্রেও সমস্যা হবে। ঘূর্ণিঝড় শুরু হলে জোয়ারের পানি বঙ্গোপসাগর ও কর্ণফুলী নেভাল একাডেমি সড়ক দিয়ে আঁচড়ে পড়ে। পানির আঘাতে বিমানবন্দর থেকে নেভাল একাডেমি ও পতেঙ্গা সি বিচ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
উত্তাল ঢেউয়ে চরে উঠে গেছে ইন্দোনেশিয়ার জাহাজ ঃ ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে দিক হারা হয়ে গভীর সাগর থেকে উত্তাল ঢেউয়ে পতেঙ্গা নেভাল একাডেমি সড়কের বেড়ি বাঁধের চরে উঠে গেছে ইন্দোনেশিয়ার পতাকাবাহী একটি জাহাজ। উত্তাল ঢেউয়ে জাহাজটি চরে আটকে গেলে জাহাজের ১০জন ক্রু উদ্ধার করে নৌবাহিনী। পরে তাদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো.জাফর আলম জানান, ইন্দোনেশিয়ার পতাকাবাহী এএসটি লিজেন্ট জাহাজটি উত্তাল সাগরের ঢেউয়ে দিক ভুলে পতেঙ্গা নেভাল এলাকায় বেড়ি বাঁধের কাছে চরে উঠে যায়। পরে বিষয়টি নৌবাহিনীকে জানানো হলে তারা জাহাজের ১০জন ক্রুকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায়।
চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ২৫ : ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’র প্রভাবে সৃষ্ট দুর্ঘটনায় নগরীর বিভিন্ন স্থানে আহত ২৪ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক।
আহতরা হচ্ছেন– জানে আলম (৩৫), রিপন দাশ (১৩), ওসমান গণি (৪০), এয়াকুব আলী (৩৫), মো. আজাদ (১৩), এনামুল কবির (৪০), আবদুর রহিম (৫০), বেলাল হোসেন (২৫), ফণী ধর (২০), স্মৃতি রুদ্র (২৩), আনসার উদ্দিন (২৪), মো. সিরাজ (৩২), বিবি ফাতেমা (২৬), মিজানুর (৫০), মো. সাইফুল (৩৫), রুবেল (২৬), মো. মনা (২৫), তপন জলদাশ (৪০), মঈন উদ্দিন (২৩), বেলাল (২৪), মো. তৌহিদুল ইসলাম (১৬), সুমন (২৮), নাসরিন সুলতানা (১০) এবং ওমর গণি (৪৫)। এর মধ্যে এনামুল কবিরের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
চমেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এস. আই জহির দৈনিক আজাদীকে বলেন, আহতদের মধ্যে এনাম, বেলাল, রহিম, ফণী ধর ও সাইফুলকে আগ্রাবাদ থেকে আনা হয়েছে। আগ্রাবাদেও একটি বিল্ডিংয়ের কাঁচ ভেঙে পড়লে তারা আহত হন। তৌহিদকে আনা হয়েছে পতেঙ্গা থেকে। ঘরের টিন পড়ে আহত হন তিনি। বাকিদের নগরীর বিভিন্ন স্থান আনা হয়েছে।
দুপুর ১২ টার দিকে সরেজমিনে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘরে দেখা গেছে, রাস্তায় মানুষের আনাগোনা একেবারেই কম। বিভিন্ন সড়কে গাড়ি চলাচল করলেও তা অন্যান্য দিনের তুলনায় নগণ্য। চট্টগ্রামের উপকূলে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু আঘাত হানতে শুরু করলে এর ফলে প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়ায় নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গাছপালা ভেঙে পড়তে দেখা গেছে। বিভিন্ন জায়গায় ভেঙে পড়েছে সীমানা প্রাচীর। বেলা ১২টার দিকে নগরীর কোতোয়ালীর মোড়ে রাস্তার ওপর তিনটি গাছ পড়ে যার চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। এর মধ্যে নগরীর নন্দনকান এলাকায় একটি বাড়ির সীমানাপ্রাচীরসহ গাছ উপড়ে পড়েছে। মাস্টারপুল এলাকার কাজেম আলী মাস্টার বাড়িতে ২টি আম গাছ, দেওয়ানবাজার মাজার গলিতে রাস্তায় গাছ পড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। সার্কিট হাউজের সামনে, লাভলেইন নেভালের সামনে, ফকির হাট, নেভাল রোড়ে অনেক গাছ পড়ে রাস্তা বন্ধ হয়ে পড়েছিল, কাজির দেউড়ি এলাকায় দুটি কাঠবাদাম গাছ রাস্তার ওপর উপড়ে পড়েছে। সিটি মেয়র সকাল থেকে এই এলাকায় উপস্থিত থেকে নিজে তাৎক্ষণিকভাবে লোক দিয়ে তা অপসারণ করেছেন।
পানিবন্দী বিভিন্ন এলাকা ঃ এদিকে নগরীর খলিফাপট্টি, মাস্টার পুল, কালামিয়া বাজার, চকবাজার, শোলকবহর, পাঁচলাইশ, কাতালগঞ্জ, কেবি আমান আলী রোড, ডিসি রোড, বগারবিল, মিয়াখান নগর, বৌবাজার, ইচাইক্যার পুল, আগ্রাবাদ বনানী কমপ্লেক্স, এয়ারপোর্ট রোড, কাপ্তাই রাস্তার মাথা, পাথরঘাটা, মধ্যম হালিশহর, হালিশহরের ধোপপুল, ঈমান মিস্ত্রি হাট, এক নম্বর সাইট পাড়া, আদর্শ পাড়া, পতেঙ্গা মাইজ পাড়া, মুন্সি পাড়া, নিশ্চিন্তা পাড়াসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জোয়ারের পানিতে ডুবে গেছে। দোকান–ঘর সময় জায়গায় পানি আর পানি। বাসা–বাড়িতে পানি উঠে ঘরের আসবাবপত্র ভিজে গেছে অনেকের। পাথরঘাটা সিএন্ডবি আবাসিক এলাবার বাসিন্দা জলি গোমেজ জানান, বৃষ্টির আগে বাবার বাসায় গিয়েছিলাম। বিকালে বাসায় এসে দেখি বাসার সব আসবাবপত্র পানিতে ভিজে গেছে। কোমর সমান পানি।
উপকূলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি :
রোয়ানুর প্রভাবে চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বাঁশখালীতে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। এ সময় ওইসব এলাকায় সাধারণ জনগণের খাবার সামগ্রী থেকে শুরু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়। প্রবল ঝড়ো বাতাসে সারা বাঁশখালী জুড়ে অসংখ্য ঘর–বাড়ির চালা উড়ে যায় এবং গাছপালা ভেঙে পড়ে। তাছাড়া দুই দিন যাবৎ বিদ্যুৎ না থাকায় স্বাভাবিক জীবন যাত্রা অনেকটা অচল হয়ে পড়ে।
রাউজানের বিভিন্নস্থানে বহু গাছপালা ভেঙে পড়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক যোগাযোগ দীর্ঘ সময় বন্ধ ছিল। মাথায় গাছের ডাল পড়ে অন্তত তিন নারী পুরুষ আহত হয়েছেন। জোয়ারের বর্ধিত পানিতে হালদা ও কর্ণফুলী নদীর তীরবর্তী এলাকার রাস্তাঘাট ডুবেছে। উপজেলার বিভিন্নস্থানে নিম্ন ও মাঝারি ক্ষমতার বিদ্যুৎবাহী তার ছিঁড়ে ও খুঁটি ভেঙে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
মহেশখালীতে বেড়িবাঁধ ভেঙে ফসলি জমি এবং কাঁচা ঘরবাড়ি রাস্তা ঘাট বিলীন হয়ে পড়েছে। উপজেলার ধলঘাট ও মাতার বাড়ীতে হাজারো মানুষ পানিবন্দি ও গৃহহীন হয়ে পড়েছে। বেড়িবাঁধ ভেঙে সাগরের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে পানি বন্দি হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। মাতারবাড়ী ইউনিয়নে বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করে ব্যাপক ক্ষয়–ক্ষতি হয়েছে।
আনোয়ারায় জলোচ্ছ্বাসে তিনটি ইউনিয়ন রীতিমত লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। ভেসে গেছে কয়েকশ’ বসতঘর। প্রাণহানি না ঘটলেও গ্রামে গ্রামে ভেসে উঠেছে রোয়ানুর ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ। প্রবল বাতাস আর জলোচ্ছ্বাসে লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে এখানকার তিন ইউনিয়নের ১০ সহস্রাধিক মানুষের সহায়–সম্বল। জলোচ্ছ্বাসের পানি ভাটার টানে কমলেও এখনও ভাসছে রায়পুর, জুইদণ্ডি, বারশতের বিস্তীর্ণ এলাকা। প্রবল বাতাসে উড়ে গেছে প্রায় ৪ হাজার বাড়িঘর। ভেঙে পড়েছে অসংখ্য গাছ। প্রথম দিকে ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ তুলনামূলক দুর্বল মনে করা হলেও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ব্যাপক।
সন্দ্বীপে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে উপকূলীয় বেড়িবাঁধ। বিভিন্ন পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ছিঁড়ে ও অনেক স্থানে বেড়িবাঁধ উপচে সাগরের লোনা পানিতে কম–বেশি প্লাবিত হয়েছে পৌরসভা ও সন্দ্বীপের ১৫টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলসমূহ। এ সময় প্রায় ৬০ কিলোমিটার বেগে প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়ায় দ্বীপের প্রায় ১০ হাজার ঘর–বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। রাস্তা–ঘাট, শত শত মৎস্য খামার, ফসলী জমিসহ ব্যাপক ক্ষয়–ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে কোন প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি।
মীরসরাই উপজেলার উপকূলীয় এলাকাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে ঘরবাড়ি, বৈদ্যুতিক খুঁটি, ফসলি জমি এবং গাছপালা রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জনমানবসহ বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি না হলেও উপকূলীয় এলাকার মঘাদিয়া, সাহেরখালী ও ইছাখালী অঞ্চলের বেশ কিছু কাঁচা ঘরবাড়ি পড়ে গেছে। পাহাড়ি ঢলে ডুবে গেছে অনেক গ্রামীণ সড়ক।
চকরিয়া ও পেকুয়ায় ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়েছে জনপদ। বিশেষ করে উপকূলীয় ইউনিয়নগুলোতে এই তাণ্ডবের চিত্র বেশি। কোথাও গাছপালা উপড়ে পড়েছে বসতবাড়ির উপর। আবার কোথাও ঘরের চালা উপড়ে গেছে। দুই উপজেলায় কম করে হলেও হাজারো বসতবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।
টেকনাফে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানোর প্রভাবে সাগর ও নাফ নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে নিম্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে । শনিবার ভোররাত থেকে গোটা টেকনাফ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সেন্টমার্টিন উপকূলে নোঙর অবস্থায় বাতাসের বেগে ভেসে গিয়ে ৩টি ফিশিং বোট নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
– See more at: http://www.dainikazadi.org/details2.php?news_id=2273&table=may2016&date=2016-05-22&page_id=1&view=0&instant_status=0#sthash.FInDcZCj.dpuf
পাঠকের মতামত: