চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি :
চকরিয়াস্থ জমজম হাসপাতাল (প্রা.) লিমিটেডের বিবাদমান দুইটি পক্ষের মধ্আযে আগামী ৭ সেপ্টেম্বর হাসপাতাল ভবনে সাধারণ সভা ডাকা নিয়ে ফের উত্তেজনা ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কায় রোগী-অভিভাবকেরা । ইতিমধ্যে সভা সফল করতে উভয়পক্ষ নিজ নিজ অবস্থানে থেকে যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়েছে। একপক্ষ হাসপাতালের আশাপাশ এলাকায় বহিরাগত ক্যাড়ারদের জড়ো করেছে। অপর পক্ষ তা প্রতিহত করার ঘোষাণা দিয়েছে। ফলে হাসপাতালে আগত চিকিৎসা সেবা প্রত্যাশি মানুষ ও সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের মাঝে আতঙ্ক এবং উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এতে যে কোন মুহুর্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা ।
গত রোববার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা.এসএম শওকত ওসমান গ্রুপের পক্ষের বেশ কয়েকজন শেয়ারহোল্ডার চকরিয়ায় প্রস্তুতি বৈঠক থেকে যে কোন মূলে শান্তিপূর্ণ সাধারণ সভা সম্পন্ন করতে প্রশাসনসহ সকলের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। শেয়ারহোল্ডার প্রকৌশলী নুর হোসেন এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রস্তুতি সভায় বেশ কয়েকটি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে সাধারণ সভা সফল করতে।
এব্যাপারে প্রকৌশলী নুর হোসেন বলেন, জমজম হাসপাতালের বৈধ পরিচালনা পর্ষদ নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় আগামী শুক্রবার হাসপাতাল ভবনে সাধারণ সভা আহবান করেছে। নীতিমালা অনুযায়ি সব শেয়ারহোল্ডারদেরকে চিঠিও দেয়া হয়েছে কিন্তু সুপ্রীম কোর্টের রায়ে অবৈধ ও স্বঘোষিত ব্যবস্থাপনা পরিচালক দাবিকারী গোলাম কবির একই দিনে সাধারণ সভা আহবান করেছে বলে প্রচারণা চালাচ্ছে। ইতিমধ্যে জমজম হাসপাতালে বহিরাগত ক্যাডারদের জড়ো করছে গোলাম কবির কিন্তু আমরা হাসপাতালে নির্ধারিত দিনে যে কোন কিছুর বিনিময়ে শান্তিপূর্ণভাবে সভা করতে চাই। এতে কিছু হলে তার দায়ভার কেবলমাত্র গোলাম কবির ও এনামুল হক মনজুকেই নিতে হবে বলে জানান তিনি।
হাসপাতালের একাধিক সুত্র জানায়, নানা অনিয়ম, ডাক্তার, নার্স ও সেবা প্রত্যাশি রোগিদের সাথে বার বার দুর্ব্যবহার করার কারণে ২০১৬ সালের ১৩ আগস্ট পরিচালনা পর্ষদ সর্বসম্মতভাবে গোলাম কবিরকে অব্যাহতি দিয়ে বিশিষ্ট চিকিৎসক নাক কান গলা রোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ডা. এসএম শওকত ওসমানকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নির্বাচিত করেন কিন্তু গোলাম কবির গায়ের জোরে ডা.এসএম শওকত ওসমানকে দায়িত্ব হস্তান্তর না করে আদালতে মামলা করেন। উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি প্রশমিত করতে চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আলম বিএ (অনার্স) এমএ জমজমের বিশেষ সাধারণ সভায় বিগত ২৬/১১/২০১৬ গোলাম কবিরকে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক করে উভয়পক্ষের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সমঝোতা করে দেন। গোলাম কবির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কয়েক মাস দায়িত্ব পালন করে ভেতরে ভেতরে হাইকোর্টে মামলা (নং ১৬৯/২০১৬) চালাতে থাকেন। বিগত ০৯/০৫/২০১৭ হাইকোর্টে দোতরফা শুনানী শেষে মামলাটি খারিজ হয়ে গেলে তিনি সুপ্রীম কোর্টে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপীল (নং ২৫২৬/২০১৭) দায়ের করেন। বিগত ১২/০২/২০১৮ আপীলেট ডিভিশনের চারজন বিচারপতি সর্বসম্মতভাবে সেই লিভ টু আপীল শুনানী শেষে খারিজ করে দেন। সর্বোচ্চ আদালতে মামলায় হেরে গিয়েও গোলাম কবির গং প্রভাবখাটিয়ে জোর করে জমজমের চেয়ার ধরে রাখেন। সুপ্রীম কোর্টের রায়ের পর গোলাম কবিরকে একবার বের করেও দেয়া হয় কিন্তু তিনি আবার দলবল নিয়ে চেয়ার দখল করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
জমজমের সাবেক পরিচালক ও সাংবাদিক নেতা জিএএম আশেক উল্লাহ বলেন, সুপ্রীম কোর্টের ফায়সালার পর গোলাম কবিরের বাড়াবাড়ি করা মোটেও উচিত হচ্ছে না। তার উচিত শান্তিপুর্ণভাবে ডা.এসএম শওকত ওসমানকে সম্মান জানিয়ে দায়িত্ব হস্তান্তর করা কিন্তু তিনি তা না করে বাড়াবাড়ির কারণে হাসপাতাল আজ ধ্বংসের পথে বসেছে, লক্ষ লক্ষ টাকা লোপাট হচ্ছে এবং হাসপাতালে শান্তি শৃঙ্খলা ফিরে আসছে না।
এদিকে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম কবির বলেন, উভয়পক্ষেই হাসপাতালের শেয়ারহোল্ডার। সবাইকে চিঠি দিয়ে সভায় ডাকা হয়েছে। এখানে কোন ধরণের সমস্যা বা ঝগড়া হবে না।
শুক্রবারের সভায় ডা: এসএম এসএম শওকত ওসমান সভাপতিত্বে করার সম্ভবনা নেই। তবে শেয়ারহোল্ডারের মধ্যে যে কেউ সভায় সভাপতিত্ব করতে পারবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
পাঠকের মতামত: