নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: কক্সবাজারের চকরিয়ায় মাতামুহুরী নদীর ভরে যাওয়া একটি শাখা খালের নাম বুরামাতামুহুরী। এই খালের অবস্থান কোনাখালী ও ঢেমুশিয়া ইউনিয়নে। খালটির কারণে বিচ্ছিন্ন ছিল দুই ইউনিয়নের অন্তত ১৩টি গ্রাম। প্রায় ৩২ বছর আগে লোহার অ্যাঙ্গেল দিয়ে কাঠের তক্তা বিছিয়ে সেতু নির্মাণ করে এসব গ্রামের মানুষের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করা হয়।
সেতুটির উপকারভোগীরা জানান, দুই ইউনিয়নের মানুষের মধ্যে সংযোগ স্থাপনে উদ্যোগটি নিয়েছিল বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কারিতাস বাংলাদেশ। ১৯৯১ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার পর সেতুটি নির্মাণ করে সংস্থাটি। এরপর থেকে নির্বিঘ্নে এসব গ্রামের লাখো মানুষ প্রতিনিয়ত সেতুটি ব্যবহার করে আসছেন। এতে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে শুরু করে গ্রামীণ অর্থনীতিতেও অবদান রাখতে শুরু করে এই সেতুটি। সেতুটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়লে কয়েক বছর আগে থেকে মানুষের দুর্ভোগের শুরু হয়। এই অবস্থায় ব্যবহারকারীরা জরাজীর্ণ হয়ে পড়া সেতুটি সংস্কারের দাবি তুললেও কাজ হয়নি।
সাম্প্রতিক বন্যায় ৬০ মিটার দৈর্ঘ্যের নড়বড়ে সেতুটি ভেঙে পড়ে। পারাপার করতে গিয়ে আহত হয়েছে শিশু, নারীসহ ১০ জন ব্যক্তি। এরপর থেকে ৩২ বছর আগের অবস্থায় ফিরে গেছে এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা। এতে সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন ১৩টি গ্রামের লাখো মানুষ। সেতুটির কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন মৌলভীপাড়া, লতাবুনিয়া পাড়া, খাতুর বাপের পাড়া, ডিয়ার পাড়া, সিকদার পাড়া, মুছার পাড়া, জমিদার পাড়া, নোয়াপাড়া, বাজার পাড়া, আম্মার ডেরাসহ ১৩টি গ্রামের মানুষ।
ভুক্তভোগীরা জানান, ঢেমুশিয়া ও কোনাখালী ইউনিয়নের ১৩টি গ্রামের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম ছিল লোহার অ্যাঙ্গেলের ওপর কাঠের তক্তার এই সেতু। এটির ওপর দিয়ে মোটরসাইকেল, রিকশা, ভ্যানসহ হালকা যানবাহন চলাচল করতে পারত। কিন্তু কয়েক বছর আগে সেতুটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় শুধুমাত্র পায়ে হেঁটে চলাচল করা যেত। কিন্তু বর্তমানে সেই সেতুটি একেবারে ভেঙে গেছে। এখন হেঁটে পার হওয়ারও সুযোগ নেই।
ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মাঈন উদ্দিন চৌধুরী বলেন, সম্প্রতি এই সেতুটি ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পরপর বিষয়টি লিখিতভাবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলীকে অবহিত করা হয়েছে। এরপর উপজেলা প্রকৌশলী সেফায়াত ফারুক চৌধুরী সরেজমিনে পরিদর্শন করে গেছেন। তিনি আশ্বস্ত করেছেন, এখানে পাকা সেতু নির্মাণের। এজন্য প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করা হবে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তরের চকরিয়া উপজেলা প্রকৌশলী সেফায়াত ফারুক চৌধুরী বলেন, আমি নিজে পরিদর্শন করে এসেছি ওই সেতু। এমনকি নৌকায় করে এপার থেকে ওপারে গিয়ে নানা তথ্য–উপাত্তও সংগ্রহ করেছি। যাতে এখানে একটি স্থায়ী পাকা সেতু নির্মাণ করা যায়। তিনি বলেন, যেহেতু স্থায়ী পাকা সেতু নির্মাণের বিষয়টি যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ। তাই কয়েক লাখ টাকা জরুরি বরাদ্দ দিয়ে আপাতত কাঠের সেতুটি সংস্কার করা হবে। এজন্য ঢেমুশিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা হয়েছে। পাশাপাশি স্থায়ী পাকা সেতু নির্মাণের জন্য প্রকল্প প্রস্তাবনা, ব্যয় নির্ধারণসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করে কয়েকদিনের মধ্যে ঢাকায় এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীর কাছে প্রেরণ করা হবে। আশা করছি, কয়েক মাসের মধ্যেই এই স্থানে স্থায়ী পাকা সেতু নির্মাণের তোড়জোড় শুরু হয়ে যাবে।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, ঢেমুশিয়া এবং কোনাখালী ইউনিয়নের ১৩ গ্রামের মানুষ যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন, তা অবগত রয়েছি। এখানে একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে এলজিইডি একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরি করার কাজ চালাচ্ছে। একইসাথে ভেঙে পড়া কাঠের সেতুটি মেরামত করার জন্যও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই মেরামতের কাজ শুরু করা হবে।
সংসদ সদস্য ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম বলেন, সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনসহ ত্রাণ বিতরণের সময় এই সেতুটির অবস্থা প্রত্যক্ষ করেছি। তখনই এখানে স্থায়ীভাবে পাকা সেতু নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে উপজেলা প্রকৌশলীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপর থেকে কাজ শুরু করে দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি অস্থায়ীভাবে যাতে জনগণ চলাচল করতে পারে সেজন্য ভেঙে পড়া সেতুটি সংস্কার করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
পাঠকের মতামত: