ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় বিক্রি হচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ কোমল পানীয় ও যৌন উত্তেজক ওষুধ

চকরিয়া প্রতিনিধি :
চকরিয়া উপজেলায় দুই শতাধিক দোকানে দেদারছে বিক্রি হচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ কোমল পানীয় ও যৌন উত্তেজক ওষুধ। বেশিরভাগ পন্য নাম সর্বস্ব কোম্পানির। কমদামে ও সহজলভ্য হওয়ায় কোমল পানীয় হিসাবে নিমিষেই এটি পান করছে সব শ্রেণির পেশার মানুষ। রোববার বিকালে পৌরশহরের ২নং ওয়ার্ডের হালকাকারা বিমানবন্দর পাড়ায় গাড়ি নিয়ে মেয়াদ উর্ত্তীন ব্লাক হর্স বিক্রি করার সময় বিক্রেতাদের ধাওয়া করেছে স্থানীয় লোকজন।
জানা যায়, চকরিয়া উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ ষ্টেশন ও পৌরশহরের বিভিন্ন দোকানে অবাধে বিক্রি করছেন হরেক নামের কোমল পানীয় এনার্জি ড্রিংক’স। যুবকদের অতিরিক্ত চাহিদার কারণে প্রত্যেক দোকানে থরে থরে সাজিয়ে রেখেছে পন্যটি। পৌরশহর চিরিঙ্গায় অর্ধশতাধিক সহ উপজেলার বদরখালী, ইলিশিয়া, হারবাং, খুটাখালী, ডুলাহাজারা, ভেন্ডিবাজার, মালুমঘাট, ছিকলঘাট, জিদ্দাবাজার ও মগবাজার এলাকায় আরও দেড় শতাধিক দোকানে বিক্রি করছেন এনার্জি ড্রিংক’স ও যৌন উত্তেজক ওষুধ। ওইসব দোকানে নাম সর্বস্ব কোম্পানি এসব পণ্য সরাসরি দোকানে সরবরাহ করছেন চিরিঙ্গার কয়েকটি ডিলার। এসব ডিলার গুলো পুরো উপজেলায় সরবরাহ করে। একশ’ এমএল, আড়াইশ’ থেকে তিনশ’ এমএল আকারের এসব ড্রিংক খুচরা দোকানে বিক্রি করা হয়।
গত রোববার আল মদিনা নামক এক ডিলারের নিজস্ব পরিবহন নিয়ে চকরিয়া পৌরএলাকার বিমানবন্দরপাড়ায় ২০টাকা মূল্যের ব্লাক হর্স ১০টাকা দরে বিক্রি করছেন। ওইসময় বিভিন্ন শিক্ষা া৩য় পৃষ্ঠার ৩ কলামে দেখুনা
চকরিয়ায় বিক্রি হচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ
(১ম পৃৃষ্ঠার পর)
প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী সহ যুবকরা ব্লাক হর্স কিনে পান করছেন। এসময় বোতলের মোডকে দেখা যায় ব্লাক হর্সের মেয়াদ নেই। এতে হইচই করে গাড়ি সহ ধরে ফেলে স্থানীয়রা। ওইসময় বিক্রেতারা চিরিঙ্গার আল মদিনা নামক এক ডিলারের মালিক মেয়াদ উত্তীর্ন ব্লাক হর্সটি বিক্রি করতে বলেছেন বলে তারা জানান। পরে ওই এলাকায় আর বিক্রি করবে না বলে চলে যায়।
পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ নেতা নুরুল আমিন জানান, আল মদিনা নামক একটি ডিলারের পক্ষ থেকে একটি নিজস্ব গাড়ি নিয়ে ২০টাকার ব্লাক হর্স ১০টাকা মূল্যে বিক্রি করছেন। ব্লাক হর্সের মোডকে দেখি মেয়াদ উত্তীর্ন হয়ে গেছে। পরে স্থানীয় এলাকাবাসি তাদেরকে ধাওয়া করলে তারা গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যায়।
এদিকে চকরিয়া পৌরশহরের বিভিন্ন দোকানে অবাধে বিক্রি করছেন নেশা ও যৌন উত্তেজন জাতীয় পানীয় এনার্জি ড্রিংক’স। বিএসটিআই ও প্রশাসনের কোন ধরনের তদারকি না থাকায় আরও বেপরোয়া হয়ে বিক্রি করছেন এ পন্যটি। এরমধ্যে জিনসিং প্লাস, জেন্ট স্টার, হর্স ফিলিংস, থ্রি-হর্স, টু-হর্স ফিলিংস, ফাস্ট ফিলিংস, এ্যাপি ফিজসহ কোম্পানির নেশা জাতীয় এনার্জি ড্রিংকস এখন পাইকারী থেকে খুচরা বাজারের সর্বত্রই পাওয়া যাচ্ছে।
কয়েকজন ক্রেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, এসব পন্যের মধ্যে বেশিরভাগ যৌন উত্তেজক ও নেশা জাতীয়। কোমল পানীয় বলে বিক্রি করছেন। সহজলভ্য ও কমদামে বিক্রি করায় সহজেই কিনে নিচ্ছেন একশ্রেণির যুবকরা।
চকরিয়া সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. ছাবের আহমদ জানান, এ জাতীয় ড্রিংকসের গুণগতমান দেখার দায়িত্ব আমাদের নয় মুলত পৌর কর্তৃপক্ষের। এনার্জি ড্রিংকের মান খারাপ না ভালো বুঝা মুশকিল। বিভিন্ন টেলিভিশনে দেখা যায়, বড় বড় তারকারা এসব কৌমল পানীর বিজ্ঞাপন করছেন। এজন্য ক্রেতারা সেদিকে ঝুকছেন বেশি।
তিনি আরও বলেন, বেশকিছু কোমল পানীতে নেশা জাতীয় অ্যালকোহেল রয়েছে। সামান্য অ্যালকোহেলে ক্ষতি না করলেও তবে খোলা বাজারের যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট বা কৌমল পানীর মান একেবারে খারাপ। ক্রেতারা নেওয়ার সময় মান যাচাই বাচাই করা না। এনার্জি ড্রিংস সেবনে ক্ষুধা মন্দা, খাবারে অরুচি, গ্যাস সমস্যা, নানা ধরনের রোগের শঙ্কা রয়েছে বলে তিনি জানান।
টিআইবি’র চকরিয়ার এরিয়া ম্যানেজার জসিম উদ্দিন বলেন, চকরিয়া পৌরশহরে আশঙ্কাজনক ভাবে বেড়ে চলছে মাদক। যুব সমাজ ধাবিত হচ্ছে মাদকের দিকে। পৌরশহরের বিভিন্ন দোকানে অবাধে বিক্রি করছেন যৌন উত্তেজনক ওষুধ। একধরণের কোমল পানীর মতো দেখতে। যুবকরা কিনে খাচ্ছেন এসব ওষুধ বা কৌমল পানীয়।
তিনি আরও বলেন, বিএসটিআই ও উপজেলা প্রশাসনের কোন তদারকি বা নিয়ন্ত্রণ না থাকায় তারা অবাধে বিক্রি করছেন। ফলে অধপতন হচ্ছে যুব সমাজ। ক্ষতিকারক দ্রব্য মেশানো এসব এনার্জি ড্রিংক বিক্রি করা ভোক্তা অধিকার আইনে মারাত্মক অপরাধ। এটি পান করলে স্বাস্থ্যহানি ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
এব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: সাহেদুল ইসলাম বলেন, মেয়াদ উর্ত্তীন কোমল পানীয় কোথায় বিক্রি করছে সেটা আমার জানা নেই। মুলত এগুলো পৌরসভার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দেখাশোনা করে। অনুমোদনহীন এ জাতীয় এনার্জি ড্রিংকস বিক্রি করা হলে এসব বিক্রেতার বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পাঠকের মতামত: