ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় বনের লক্ষ্যাধিক গাছ নিধন, বন কর্মকর্তারা নির্বিকার

ছবির ক্যাপশন: চকরিয়ায় প্রভাবশালীরা সরকারী রিজার্ভ বনাঞ্চলের একশত হেক্টর বনভূমির প্রায় এক লাখ গাছ কেটে সরকারী বাগান সাবাড় করে দিয়েছে।

 Chakaria Pc 05-06-17 (2)

স্টাফ রিপোর্টার, চকরিয়া:

চকরিয়ায় প্রভাবশালীরা সরকারী রিজার্ভ বনাঞ্চলের একশত হেক্টর বনভূমির প্রায় এক লাখ গাছ কেটে সরকারী বাগান সাবাড় করে দিয়েছে। প্রায় ১ কোটি টাকায় গাছ গুলো বিক্রি করে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি ও বনকর্মীরা ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। গাছগুলো কেটে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বন কর্মকর্তারা একেবারে নির্বিকার ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। গত ১৫-১৬ দিন ধরে বনবিভাগের অফিসের সামনের রাস্তা দিয়ে ট্রাকে ট্রাকে গাছ গুলো পরিবহন করা হলেও বনকর্মীরা সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। বরং বনকর্মীদের সামনেই কেটে নেয়া গাছের গোড়া (মোথা) আগুন ধরিয়ে দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়; কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের আওতাধীন নলবিলা বিটের কাকারা মৌজার খেদারবান এলাকায় রিজার্ভ বনাঞ্চলে এখন শুধুই গাছের গোড়া আর গোড়া (মোথা)।

এলাকাবাসি জানায়; গত এক মাস আগেও ওই এলাকায় বনাঞ্চলের ভেতর দিয়ে ঘন গাছ ও লতাগুল্মের জন্য হেটে যাওয়া দুষ্কর ছিল। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে স্থানীয় প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তি দিন দুপুরে প্রায় একশত হেক্টর বনভূমির প্রায় এক লাখ গাছ কেটে নিয়ে গেছে।

প্রত্যক্ষদশীরা জানায়; ওই গাছ গুলো প্রতিদিন ২০-৩০ জন লোক দিয়ে কেটেছে। তারপর বনাঞ্চলের ভেতরে ট্রাক নিয়ে গিয়ে গাছগুলো পরিবহন করে সরিয়ে ফেলেছে।

এলাকাবাসি জানায়; গাছগুলো কেটে নিয়ে যাওয়ার সময় তারা বনবিভাগের কর্মকর্তাদের খবর দেন। কিন্তু বনকর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়েও বন ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। গাছগুলো ট্রাকে ভর্তি করে বনবিট কার্যালয়ের সামনের রাস্তা দিয়ে পরিবহন করা হয়েছে। কিন্তু বনকর্মীরা সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাই নেয়নি। এতে এলাকার মানুষ এক সময় হতাশ হয়ে প্রতিরোধ করতে সাহস করেননি।

চকরিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হাজী বশিরুল আলম জানান; তিনি নিজে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকতার কার্যালয়ে গিয়ে বিষয়টি অবহিত করেছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাৎক্ষনিক ফোন করে ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুল মতিনকে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।

খবর নিয়ে জানা যায়; রেঞ্জ কর্মকর্তা এ পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এমন কি গাছ কেটে নেয়ার ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফোন করে বলার পরও রেঞ্জ কর্মকর্তা বিষয়টি বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকেও অবহিত করেন নি। যেদিন চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তাকে ফোন করে ব্যবস্থা নিতে বললেন তার পরের দিনই কেটে নেয়া গাছের গোড়াগুলো আগুন ধরিয়ে দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আগুনের লেলিহান শিখায় পাশের বনাঞ্চলও পুড়ে গেছে। ঝুপজঙ্গল, লতাগুল্ম কিছুই বাদ যায়নি। বনাঞ্চলে বিচরণকারী প্রাণীকুলও রক্ষা পায়নি। সব কিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ওই এলাকায় পশু পাখির পুড়ে যাওয়া মরদেহের গন্ধ ছড়াচ্ছে। স্থানীয়রা জানায়; গাছ গুলো প্রায় ১ কোটি টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। এসব টাকা স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি ও বনকর্মীরা ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। এখন ওই এলাকাটি দখল নিতে স্থানীয় কিছু ব্যক্তির কাছ থেকেও বনকর্মীরা মোটা অংকের টাকা নিচ্ছে। এব্যাপারে নলবিলা বিট কর্মকর্তা মামুন জানান; বন বিভাগের এ গাছগুলো কেটে নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি বাধা দিয়েছিলেন। কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান; গোপনে হলেও বন নিধনে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে রেখেছি।

এলাকাবাসি জানায়; ওই বনাঞ্চলের অদুরে উত্তর লক্ষ্যারচরের জামাত কর্মী, নিকাহ রেজিষ্টার কাজী ফারুক ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতাকে সাথে নিয়ে গাছগুলো কেটে নিয়ে গেছে। এ ব্যাপারে কাজী ফারুকের সাথে কথা হলে তিনি জানান, ওই গাছগুলো এতোদিন তিনিই পাহারা দিয়ে রেখেছিল। তিনি আরও বলেন; ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতারাই গাছগুলো কেটে নিয়ে গেছে। সেক্ষেত্রে তার কোন সম্পৃক্ততা নেই, গাছ বিক্রির টাকা তাকে কিছু দিবেন বলে শুধুই ঘুরাচ্ছেন, এখনও তার হাতে কোন টাকা আসেনি বলে তিনি জানান।

স্থানীয় সাহাব উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি জানান, ওই বনাঞ্চলের ভেতরে তার দখলে প্রায় ৪ একর বনভূমি ছিল। তার দখলে থাকা ওই বনভূমির গাছ গুলো কাটতে বনকর্মকর্তা ও প্রভাবশালী মহলকে মোটা অংকের টাকা দিতে হয়েছে। তিনি আরও জানান; গাছ কেটে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে আবারও তিনি চারা লাগিয়েছেন। চারা লাগানোর সময়ও বনবিভাগ ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা তার কাছ থেকে ৩৫ হাজার টাকা নিয়েছেন। কাকারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি শওকত ওসমান জানান, গাছগুলো নিকাহ রেজিষ্টার কাজী ফারুকের মালিকানাধীন। যার গাছ তিনিই কেটে নিয়ে গেছেন। এ ব্যাপারে ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুল মতিনের মুঠো ফোনে কথা বলার জন্য বারবার কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাহেদুল ইসলাম জানান; ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তাকে বলার পরও তিনি কোন সাঁড়া দেয়নি। তিনি নিজে হলেও তদন্ত করে দেখবেন বলে জানান। এ ব্যাপারে কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কেরামত আলী মল্লিকের সাথে গত ১ জুন দুপুরে কথা বলা হলে তিনি বলেছেন; এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানিনা। আমার সামনে ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা এখন বসা আছেন। এক লাখ গাছ কেটে নিয়ে গেছে কিনা তা তার কাছ থেকে জেনে দখব বলেই ফোন কেটে দেন।

পাঠকের মতামত: