ঢাকা,সোমবার, ৭ অক্টোবর ২০২৪

চকরিয়ায় পরিকল্পিতভাবে দেয়া আগুনে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি

Mostafa Kamal 01স্টাফ রিপোর্টার, চকরিয়া :
চকরিয়ায় পরিকল্পিতভাবে দেওয়া আগুনে পুড়ে যাওয়া মালুমঘাট বাজারের ৫৬টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জায়গা দখলে নিয়ে রাতারাতি অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের তোড়জোড় চালাচ্ছে কথিত মালুমঘাট বাজার কমিটির সংশ্লিষ্টরা। এজন্য আগুন দেওয়ার একদিন না পেরুতেই অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের জন্য খুটিসহ নানা নির্মাণ সামগ্রী মজুদ করা হয়েছে। তবে গতকাল বুধবার খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে কাজ বন্ধ করে দেন।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা যাতে নতুন করে ওই জায়গায় কোন দোকান নির্মাণ করতে না পারে সেজন্য ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার রাতে থানায় উল্টো মামলা দায়ের এবং একজনকে গ্রেপ্তার করার ঘটনায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে এলাকায়। গ্রেপ্তার আতঙ্ক ছড়িয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের মাঝে। গত ২৪ ঘন্টায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও কথিত বাজার কমিটির লোকজনের মধ্যে দেশিয় অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয় সেখানে।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা বলছেন, মালুমঘাট বাজারটি বনবিভাগের জায়গায় স্থাপন হলেও দীর্ঘ একযুগ ধরে তারা সেখানে ব্যবসা করে আসছেন। কিন্তু কথিত বাজার কমিটি নাম দিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি চক্র তাদেরকে সমূলে উচ্ছেদ করে পুরো জায়গা তাদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে আসছিল। এনিয়ে বিরোধ দেখা দেয় উভয়পক্ষে। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার রাতে পরিকল্পিতভাবে আগুন দেওয়ার একসঙ্গে ৫৬টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছাই হয়ে যায়। এতে এসব ব্যবসায়ীর কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, নতুন করে দোকান খুলে আবারো ব্যবসা শুরু করার মতো অবস্থা নেই। তার ওপর বিভিন্ন এনজিও ও মহাজনের কাছ থেকে নেওয়া দাদন কিভাবে পরিশোধ করবেন তা নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন তারা। এসব কিছুর পরেও কথিত বাজার কমিটির সভাপতি মনজুর আলম বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে। এতে গ্রেপ্তার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে ব্যবসায়ীদের মাঝে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে যেকোন মুহূর্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
পুলিশ জানায়, মালুমঘাট বাজার কমিটির সভাপতি মনজুর আলমের উপর হামলার ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। মামলায় আসামী করা হয়েছে ১৪জনকে। তন্মধ্যে ৯জন ব্যবসায়ীর নাম রয়েছে। অন্যদের অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পুলিশ অভিযান চালিয়ে আমির হোসেন নামের একজনকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজন ব্যবসায়ী অভিযোগ করেছেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে বাজার কমিটির নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে দুই দফা হামলা চালায় ব্যবসায়ীদের উপর। কিন্তু এখন ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে উল্টো থানায় মামলা করেছে বাজার কমিটির সভাপতি। এক্ষেত্রে পুলিশকে ম্যানেজ করা হয়েছে। তাই পুলিশও এনিয়ে বাড়াবাড়ি শুরু করেছে।
চকরিয়া থানার ওসি মো. জহিরুল ইসলাম খান বলেন, ‘মালুমঘাট বাজার কমিটির সভাপতি উপর হামলার ঘটনায় থানায় এজাহার দিলে মামলা রুজু করা হয়। এখানে আসামীরা ব্যবসায়ী কি-না তা আমার জানা নেই। ঘটনা ঘটলে মামলা হবে, পুলিশ আসামীও গ্রেপ্তার করবে এটি স্বাভাবিক বিষয়।’
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘অগ্নিকা-ে পুড়ে যাওয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জায়গা দখলে নিয়ে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের খবর পেয়ে সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ছাড়া অন্য কেউ যাতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করতে না পারে সেজন্য সার্বক্ষণিক দৃষ্টি রাখছি।’

পাঠকের মতামত: