চকরিয়ায় সিনজেনটা কোম্পানির নিন্মমানের হাইব্রিড টমেটো বীজ বিপুল প্লাস রোপন কৃষকরা আর্থিকভাবে দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম হয়েছে। উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নে প্রায় তিনশতাধিক কৃষক জমিতে এ জাতের টমেটো চাষ করে ফলন বিপর্যয় হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। ইউনিয়নের অন্তত দুইশত একর জমিতে ফলন পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন ভোক্তভোগী কৃষকরা।
সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নের লতাবনিয়া পাড়া, খাতুর বাপের পাড়া, মৌলভী পাড়া, সিকদার পাড়া ও ছড়াপড়া এলাকার প্রায় তিন শতাধিক কৃষকের মধ্যে অধিকাংশরা এবছর সিনজেনটা কোম্পানির বিপুল প্লাস জাতের টমেটো বীজ রোপন করেছেন জমিত। অভিযোগ উঠেছে, কোম্পানির মাঠ কর্মীদের যোগসাজসে নিয়োগপ্রাপ্ত ডিলাররা বিক্রিকালে এ বীজ নিয়ে প্রতারণা করেছে কৃষকের সাথে। এমনকি চড়া দামে বীজ কিনে জমিতে রোপন করার পর কাঙ্ক্ষিত ফলন পাচ্ছেনা কৃষকরা। সরেজমিনে দেখা গেছে, যেসব জমিতে এসবসিনজেনটা কোম্পানির বীজ রোপণ করা হয়েছে সেসব জমির ফসলে বিভিন্ন পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা দিচ্ছে। বাধ্য হয়ে কৃষকদেরকে একই কোম্পানির কীটনাশক ও মিশ্র সার ব্যবহার করতে হচ্ছে। পোকার আক্রমণের ফলে ফলনও কম হচ্ছে। অনেক কৃষকের পুরো ফসলই নষ্ট হওয়ার কারণে কৃষকেরা দেওলিয়া হয়ে পড়েছেন।
চলতি মৌসুমে কোনাখালী ইউনিয়নে বিপুল প্লাস টমেটো বীজ রোপন করে যাঁরা পথে বসার উপক্রম হয়েছেন তাহের উদ্দিন, জাফর আলম, মো.ইলিয়াছ, এনামুল হক ও নাজেম উদ্দিন সহশতাধিক কৃষক।
ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক তাহের উদ্দিন বলেন, চার বছর ধরে বিভিন্ন জাতের টমেটো বীজ নিয়ে চাষাবাদ করে আসছি জমিতে। কিন্তু চলতি মৌসুমে সিনজেনটা কোম্পানির মাঠকর্মীর প্রলোভনে পড়ে নতুন বীজ টমেটো বীজ বিপুল প্লাস রোপনের কারণে বড় ধরণের ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। আমি চলতি মৌসুমে ২৫শতক জমিতে ওই বীজ রোপন করি। এতে লক্ষাধিক টাকা ব্যয় হয়েছে। কৃষি বিভাগের হিসাবনুযায়ী ৪৫দিনের ফলন হওয়ার কথা থাকলেও ৯০দিন সময় অতিক্রম হচ্ছে। তারপরও তেমন ভাল মানের ফলন দেখা যাচ্ছেনা। তাহের উদ্দিন বলেন, আমার মতো শতাধিক কৃষক ওই বীজ ক্রয় করে সিনজেনটা কোম্পানির কাছে প্রতারণার শিকার হয়েছে। অপর কৃষক জাফর আলম বলেন, টমেটো চাষে অন্যান্য বছর ভাল ফলনের ফলে এবছরও আমি ৬০শতক জমিতে কোম্পানির মাঠকর্মীর নির্দেশে বিভিন্ন দেনা ধার করে বিপুল প্লাস জাতের চমেটো চাষ করি। বর্তমানে ক্ষেতের ফলন দেখে ধারনা করছি এবছর ফলন না হওয়ায় আমার কমপক্ষে ৫ থেকে ৬ লক্ষটাকার ক্ষতি পোষাতে হবে। এ অবস্থার কারনে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা ওই কোম্পানির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
সিনজেনটা কোম্পানির চকরিয়া উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত মাঠ পরিদর্শক মো.মহিউদ্দিন বলেন, আবহাওয়া ভাল না থাকার কারণে ও তাপমাত্রার আদ্রতার ফলে হয়তো কিছু কিছু ক্ষেতে বিরূপ প্রভাব হতে পারে। কোম্পানির টমেটো বীজ রোপনের কারণে ক্ষেতের ফলন ভাল হয়নি এই ধারণা সম্পুর্ণ ভূল। সঠিক পরিচর্যা করলে কৃষকরা ভাল ফলন পেতে পারে।
চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.আতিক উল্লাহ বলেন, সিনজেনটা কোম্পানীর বিপুল প্লাস জাতের টমেটো বীজ রোপন করে কৃষকরা ফলন বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছেন ঘটনাটি সত্য। বিষয়টি আমাকে অনেক কৃষক ও জনপ্রতিনিধি জানিয়েছেন। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্ত কোম্পানী ও ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে যাতে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা ক্ষতিপুরণ ফেরত পায়।
পাঠকের মতামত: