ঢাকা,বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় ধান ক্ষেতে মাছি পোকার আক্রমণ, দিশেহারা দরিদ্র কৃষিক পরিবারগুলো

dhanketনিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::

সপ্তাহ দুয়েক পর গোলায় উঠবে ধান। এমন মুহূর্তে চারার গোঁড়া থেকে আগা পর্যন্ত এমনকি ধান পরিপূর্ণ হওয়ার আগেই বিভিন্ন ধরণের পোকার আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক মোহাম্মদ আবচার। তাঁর (কৃষক আবচার) রোপিত ২৬ কানি জমির ধান ক্ষেতের মধ্যে পুড়ে বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের নানা পরামর্শে পোকা দমনে কীটনাশক ছিটানো হলেও তেমন কোন ফল আসছে না। এতে ওই কৃষকের কম করে হলেও প্রতিকানিতে ১২ হাজার করে তিন লক্ষ বার হাজার টাকার ক্ষতি গুনতে হবে। অনুরূপভাবে আশপাশের অসংখ্য কৃষকও একই সমস্যার সম্মুখিন হয়ে লোকসানের দায়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের ধানক্ষেতের চিত্র এটি।
সরেজমিন ধানক্ষেত পরিদর্শনে গেলে উপজেলার হারবাং স্টেশনের কৃষক মোহাম্মদ আবচার জানান, নিজের তেমন ধানী জমি না থাকলেও দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে জমি বর্গা নিয়ে ধান চাষ করে আসছেন তিনি। সর্বোচ্চ ৭০ কানি পর্যšত্ম ধান চাষ করে রেকর্ড গড়ে জাতীয়ভাবে অনেক পুরষ্কারও অর্জন করেছেন। এবারের মতো এমন সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়নি ইতোপূর্বে।
কৃষক আবচার জানান, চলতি আমন মৌসুমে তিনি হারবাং ইউনিয়নের কুমাইজ্যারঘোনা, অইল্যারঘোনা, কুমাইজ্যারবিল, হরিণ খাইয়াঘোনা, সিপাহীর বিলসহ আশপাশের অšত্মত ২৬ কানি জমি বর্গা নেন এবার আমন ধান উৎপাদনে। বর্গা নেওয়া, শ্রমিক নিয়োগ, বীজ ক্রয়সহ প্রতিকানিতে খরচ পড়েছে ১২ হাজার টাকা করে।
তিনি বলেন, স্বর্ণালী কম্পানী থেকে হরিজাতের (ভারতীয় পাইজার) বীজ কিনে রোপন করেন শুকনো জমিতে। আর জলাবদ্ধ জমিতে ২২ নম্বর ধান (পানি সহিষ্ণু) রোপন করি। আশা ছিল, প্রতিকানিতে সর্বনিন্ম ২২ মণ থেকে সর্বোচ্চ ২৭-২৮ মণ ধান উৎপাদন হবে। কিন্তু বিভিন্ন পোকার আক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে ২৬ কানির ধানক্ষেতেই। ইতিমধ্যে পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে প্রায় ১০ কানির ধান। বাকী জমির ধান রক্ষা করতে কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে ৫জি-ফুরাডান, বাসুডিন কীটনাশক প্রয়োগ করা হচ্ছে। কিন্তু পোকার আক্রমণ বন্ধ হওয়ার লক্ষণ দেখছিনা।’
উপজেলার কোথাও এমন অবস্থা দেখা না গেলেও হারবাংয়ে কেন পোকার আক্রমণ। এমন প্রশ্নে কৃষক আবচার বলেন, ‘যেসব এলাকায় ধান রোপন করা হয়েছে সেসব এলাকা অনেকটা পাহাড়ি। তাছাড়া সবসময় এখানে নানা পোকা-মাকড়ের আবাসস্থল। সর্বশেষ ভারী বর্ষণের পর পরই পাহাড়ি গাছ-গাছালী থেকে নানা পোকা-মাকড় বের হয়ে পড়ে। আর সরাসরি এসব আক্রমণ শুরু করে ধানক্ষেতে।’
তিনি আরো বলেন, ‘প্রথমদিকে মাজরা পোকা আক্রমণ শুরু করে। এর পর লেদা পোকা ছড়িয়ে পড়ে চারায় চারায়। শেষমেশ দেখা যায় কারেন্ট পোকা। মাজরা ও লেদা পোকা কীটনাশক দিয়ে দমন করা গেলেও কারেন্ট পোকার উৎপাত বন্ধ করা যাচ্ছে না। এই পোকা পিষ্ট করে মারার চেষ্টা করলেও ফের নড়াচড়া করতে থাকে। এই পোকাই বেশি সর্বনাশ করছে কৃষকের।’
আরেক কৃষক রফিক আহমদ জানালেন একই তথ্য। তিনি বলেন, আমিও ৬ কানি জমিতে ধান রোপন করেছি। কিন্তু গোলায় তোলার মুহূর্তে পোকার আক্রমণে ক্ষেতের ধান ক্ষেতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পুড়ে বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে ক্ষেতের পর ক্ষেত।’
রফিক আহমদ জানান, ক্ষেতের এই দুর্দশা দেখে কয়েকটি চারা তুলে দেখতে পান গোড়ালি পর্যন্ত আক্রমণ করেছে কারেন্ট পোকা। এসব চারা ঝাঁকুনি দিলেই বের হয়ে পড়ছে কারেন্ট পোকা। যা দেখতে কালো এবং ছারপোকার মতো। স্থানীয়ভাবে এই পোকা কারেন্ট পোকা হিসেবে কৃষকের কাছে চিহ্নিত।
তিনি বলেন, ‘সচরাচর এই পোকা গাছ-গাছালিতে থাকে। সর্বশেষ ভারী বর্ষণের পর এসব কারেন্ট পোকা গাছ-গাছালি ছেড়ে ধানক্ষেতে আক্রমণ শুরু করে।’
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও ব্লক সুপারভাইজার (হারবাং ও বৃন্দাবনখীল) দিলীপ কুমার দে বলেন, ‘হারবাং ইউনিয়নের ধানক্ষেতে যেসব পোকা আক্রমণ করছে তন্মধ্যে একটি মাছি পোকাও রয়েছে। তবে কৃষক যেভাবে ক্ষতি হচ্ছে বলে দাবি করছে তা সঠিক নয়। এর পরও যেসব ক্ষেতে মাছি পোকাসহ নানা পোকা-মাকড় আক্রমণ করছে তা দমনে কৃষককে বিভিন্ন পরামর্শ এবং কীটনাশক প্রয়োগ করা হচ্ছে। তাছাড়া ওই এলাকাটি পাহাড়ের কাছে হওয়ায় নানা পোকা-মাকড় সবসময় অবস্থান করে।’ তিনি আরো বলেন, ‘কৃষক যাতে কোন অবস্থাতেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকেই নজর রয়েছে আমাদের। আশা করছি পোকার আক্রমণ থেকে ধানক্ষেত রক্ষা পাবে।’
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আতিক উল¯œাহ বলেন, ‘সর্বশেষ ভারী বর্ষণের কারণেই হারবাংয়ে ধানক্ষেতে পোকার আক্রমণ বেড়েছে। তবে পোকার আক্রমণ রোধ করতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষককে পরামর্শসহ নানা বিষয়ে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। তবে ভবিষ্যতে এই পোকার আক্রমণ রোধে কি করা যায় তাও খতিয়ে দেখা হবে।’

পাঠকের মতামত: