ঢাকা,রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় চেয়ারম্যানের হামলায় মাজারের প্রধান খাদেম ও ৪ পুত্র আহত

মনির আহমদ, চকরিয়া ::
চকরিয়ার হারবাং দরগার মসজিদের সভাপতি দাবীর বিরোধকে কেন্দ্র করে বয়োবৃদ্ধ খাদেম ও তার ৪ পুত্রকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠেছে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ সভাপতির বিরোদ্ধে। ৪ মে রাত সাড়ে ৮ টায় চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলামের বাড়ীতে ডেকে মারধরের ঘটনা করেন বলে সাংবাদিকদের নিকট জানিয়েছেন আহত খাদেম ও ৪ পুত্র। আহত খাদেম পিতা- পুত্র  রাতেই চকরিয়া সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা করেছেন।

৫ মে শনিবার সকালে হারবাং হযরত শাহ ছুফি (র:)প্রধান খাদেম মোহাং ফয়েজ আহমদ মাজার সংলগ্ন বসতবাড়ীতে ডেকে সংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে জানান, দীর্ঘ অর্ধশত বছর ধরে তিনি মাজারের দ্বায়ীত্ব পালন করে মাজার সংলগ্ন মসজিদটি নির্মান করে সভাপতির দ্বায়ীত্ব পালন করে আসছেন। মসজিদটি নির্মান করতে গিয়ে সরকারী-বেসরকারী সাহায্য ছাড়াও তার ব্যক্তি মালাকানাধিন পাহাড়ি এলাকার অনেক সহায় সম্পদ বিক্রী করে প্রতিষ্টিত করেন। এমতাবস্থায় হারবাং এর ইউপি’তে  মিরানুল ইসলাম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর মাজার এলাকার মুল্যবান জমির উপর কুদৃষ্টি পড়ে। মাজারের জমি দখলের চিন্তা মাথায় রেখে গত এক বছর আগে খাদেমকে বাদ ররেখে চেয়ারম্যান নিজেকে মাজার মসজিদের স্বঘোষিত সভাপতি বনে যান। তারপর থেকে নুরুল ইসলাম(৫০) নামের এক জামাত কর্মিকে ঈমাম নিয়োগ করেন। তারপর থেকে ওই ঈমামের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকা থেকে মসজিদের নামে চাঁদা তুলে ভাগবাটোয়ারা করে আত্মসাৎ করে আসছিলেন চেয়ারম্যান।
সম্প্রতি ঈমামের পরিবারে কোন সন্তান সন্ততি না হওয়ার পর আলোচনায় বেরিয়ে আসে ওই ঈমাম হিজড়া। খাদেমের দাবী, ঈমাম নুরুল ইসলাম হিজড়া,! এ কথা প্রকাশ হওয়ার পর তার পিছনে নামাজ পড়তে অনিহা প্রকাশ করেন খাদেমের অনুসারী এলাকার মুসল্লিরা। এতে খাদেম হযরত শাহ ছুফি (র:) মাজারের প্রধান খাদেম মোহাং ফয়েজ আহমদ(৯৫) চেয়ারম্যান ও সভাপতি মিরানুল ইসলামের কাছে অভিযোগ করে নতুন ঈমাম নিয়োগের দাবী তুলেন। কিন্তু আজ কাল করে দিনক্ষেপনের কারনে মুসল্লিরা অন্য মসজিদে চলে যাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে গতকাল ৫ মে শুক্রবার রাত ৮ টায় চেয়ারম্যানের বাড়ীতে এক বৈঠকের আয়োজন করেন। চেয়ারম্যানের কথা মতো রাত ৮ টায় হযরত শাহ ছুফি (র:) মাজারের প্রধান খাদেম মোহাং ফয়েজ আহমদ,  তার ৪ ছেলে মিরানের বাড়ীতে যান।  ৮টায়  বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছেলে মৌলানা আবুল হাসেম (২৩) জানান, রাত সাড়ে ৮ টায় তার বয়োবৃদ্ধ পিতা হযরত শাহ ছুফি (র:) মাজারের প্রধান খাদেম মোহাং ফয়েজ আহমদ (৯৫) কে ঘরের ভিতরে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে চেয়ারম্যান বলেন, আমি সভাপতি থাকতে ঈমাম পরিবর্তন করার দাবী করার মজা দেখাই তোদের। এই বলে, চেয়ারম্যান ও তার ৭/৮ জন লাটিয়াল লাটি দিয়ে মারধর করতে থাকেন খাদেমকে। তার শোর চিৎকারে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছেলে মৌ আবুল হাসেম, মোহাং সুলতান (৩৬), জাকারিয়া (২৮) ও সাজ্জাদ হোসেন সাকিব প্রতিবাদ করলে তাদেরকে ও সন্ত্রাসী কায়দায় মারধর করে। খাদেম পুত্র হাসেম কান্না জড়িত কন্ঠে আরো বলেন, “আমার বাবাকে যখন হাসপাতালে নিতে চেষ্টা করি তখন চেয়ারম্যান ও তার লোকজনের বাধায় কোন রিক্সা গাড়ী আমার বাবাকে তুলতে পারেনি। হারবাং ষ্টেশনের সমস্ত অষুধের দোকানকে অষুধ বিক্রি করতে না করায় কোন ফার্মেসি অষুধ ও দেয় নাই। আমি বেশী শোর চিৎকার করলে তারা আমাকে (মৌ আবুল হাসেমকে) ধাওয়া করে চকিদার দিয়ে ধরে রক্তাক্ত জখম করে পুলিশ ফাঁড়িতে ধরে নিয়ে বেঁধে রেখে রাত ১২ টার পর চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আলম বিএ (অনার্স) এমএ, এবং সাবেক মহিলা এমপি আওয়ামীলীগের মহিলা নেত্রী সাফিয়া খাতুনের ফোন পেয়ে ছেড়ে দেয় পুলিশ।” আবুল হাসেম বলেন, বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে নির্যাতনের কথা শুনেছি, কিন্তু মধ্যযুগীয় বর্বরতা কাকে বলে মিরান চেয়ারম্যান আমাদেরকে দেখিয়েছে।”
এ ব্যাপারে হারবাং পুলিশের ওইসময়ের দায়ীত্বপালন কারী এএসআই শাহাদাত,খাদেম পুত্র হাসেমকে গ্রেফতারের ঘটনা স্বীকার  করে বলেন, চেয়ারম্যানের সাথে খারাপ আচরন করায় হাসেমকে গ্রেফতার করা হয়েছিল পরে আপসে মাপ চাওয়ায় রাতেই ছেড়ে দিয়েছি।
এ ব্যাপারে চকরিয়ার হারবাং ইউপি চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলামের কাছে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে, তিনি বলেন, আমি চেয়ারম্যান মানুষ, কত ঘটনা ঘটছে, এসবের হিসাব দেয়া সম্ভব নয় বলে চেয়ারম্যান মিরান ঘটনার কথা এড়িয়ে সময় নাই বলে ফোন কেটে দেন।
এ ঘটনার পর পরই ভোর রাতে চকরিয়া সরকারী হাসপাতালে হযরত শাহ ছুফি (র:)মাজারের প্রধান খাদেম মোহাং ফয়েজ আহমদ (৯৫), বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছেলে মৌ আবুল হাসেম, (২৩) মোহাং সুলতান (৩৬), জাকারিয়া(২৮) ও সাজ্জাদ হোসেন চকরিয়া সরকারী হাসপাতালে ভর্তি হন। এবং চিকিৎসা শেষে বাড়ীতে নিয়ে আসেন বলে জানান এলাকাবাসী ও পরিবারের সদস্যরা।
এ ব্যপারে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন, আহত খাদেম হযরত শাহ ছুফি (র:) মাজারের প্রধান খাদেম মোহাং ফয়েজ আহমদ।

পাঠকের মতামত: