চকরিয়া উপজেলার বদরখালী ইউনিয়নে চিংড়ি ব্যবসায়ী রফিক উদ্দিন হত্যাকান্ডের জড়িত তিন আসামিকে তিনদিনের রিমান্ডে নিয়েছে সিআইডি পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কক্সবাজার সিআইডি পুলিশের এসআই জাহাঙ্গীর উদ্দিন আহমদ সোমবার চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। আদালত শুনানী শেষে তিন আসামির বিরুদ্ধে তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। আসামিরা হলেন, আসামি আবদুল আজিজ, আজবাহার বেগম ও নাছির উদ্দিন।
জানা গেছে, চলতিবছরের ১৭আগষ্ট রাতে সিন্ডিকেট ব্যবসার বিরোধের জেরে উপজেলার বদরখালী ইউনিয়নের ৮নম্বর ওয়ার্ডের মৃত আবু ছৈয়দের ছেলে চিংড়ি ব্যবসায়ী রফিক উদ্দিনকে (৪৮) পিটিয়ে ও অন্ডকোষ চেপে ধরে শ^াসরোধে হত্যা করে। ঘটনার পর সকালে স্থানীয়দের খবরের ভিত্তিতে স্বজনরা নিহতের লাশ ইউনিয়নের ৩নম্বর ব্লকের বদরখালী সমিতির মালিকানাধীন বড় মাঠ লবণ ও চিংড়ি প্রকল্প এলাকা থেকে উদ্ধার করে।
নিহতের স্বজনরা জানান, রফিক উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে বদরখালী বাজারস্থ সিন্ডিকেট অফিসের মাধ্যমে লবণ ও চিংড়ি মাছের ব্যবসা করে আসছিলেন। নিজের টাকা বিনিয়োগ করার পাশাপাশি রফিক আরো একাধিক আত্মীয় স্বজন এবং বন্ধু-বান্ধব থেকে টাকা নিয়ে সিন্ডিকেট অফিসে দেন।
নিহতের ভাই মাষ্টার ওয়াজ উদ্দিন অভিযোগ করেছেন, তার ভাই রফিক উদ্দিন সিন্ডিকেট অফিস থেকে পাওনা প্রায় এক কোটি ৭০লাখ টাকা ফেরত দাবি করেন। মুলত ব্যবসার বিরোধের জের হিসাব করার সময় সিন্ডিকেট অফিস থেকে বাইরে নিয়ে রাতের আঁধারে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
হত্যার এ ঘটনায় নিহতের ভাই মাষ্টার ওয়াজ উদ্দিন বাদি হয়ে চকরিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এতে অভিযুক্ত করা হয় চারজনকে। তাঁরা হলেন চিংড়ি প্রকল্পের কেয়ারটেকার আবদুল আজিজ, তার ছেলে সাদ্দাম হোসেন, রাশেদ ও ঘটনাস্থল থেকে আটক করা প্রতিবেশি নারী আজবাহার বেগমকে। বর্তমানে আবদুল আজিজ ও আজবাহার বেগমকে জেলহাজতে রয়েছেন।
নিহতের ভাই মাষ্টার ওয়াইজ উদ্দিন জানান, চকরিয়া থানায় মামলাটি রুজু হওয়ার পরপর তদন্তের দায়িত্বভার নেন কক্সবাজার সিআইডি পুলিশ। এরই মধ্যে তিনি ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে আরো ৬জনকে আসামি করে চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে একটি সম্পুরক মামলার এজাহার দায়ের করেন। এতে আসামি করা হয় বদরখালী ইউপি চেয়ারম্যান ও সিন্ডিকেট ব্যবসার প্রধান খাইরুল বশর, পরিষদের মেম্বার কুতুবউদ্দিন, চেয়ারম্যানের ভাই আবুল বশর, তাদের সহযোগি হাজী রিদুয়ান, আগের মামলায় গ্রেফতার হওয়া আবদুল আজিজের স্ত্রী রেহেনা বেগম ও নাছির উদ্দিনকে।
আদালত তার সম্পুরক মামলার এজাহারটি খারিজ করে দেন। এরপর তিনি এব্যাপারে আপীল করেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে। আদালত তার আবেদন আমলে নিয়ে সম্পুরক মামলাটি এজাহার হিসেবে গন্য করে তা তদন্তের জন্য সিআইপি পুলিশের কাছে ন্যস্ত করেন। এরই মধ্যে সিআইডি পুলিশ অভিযান চালিয়ে সম্পুরক মামলার এজাহারনামীয় আসামি নাছির উদ্দিনকে গ্রেফতার করেন। মামলার বাদি জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে আদালতের কাছে রফিক উদ্দিনকে হত্যার ঘটনায় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন এসে পৌছেছে। প্রতিবেদনে অন্ডকোষ চেপে ধরে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে এমন আলামত পাওয়া গেছে।
বাদি পক্ষের আইনজীবি চকরিয়া উপজেলা আদালতের এডভোকেট লুৎফুর কবির বলেন, মামলার তদন্তের প্রয়োজনে সোমবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কক্সবাজার সিআইডি পুলিশের এসআই জাহাংগীর উদ্দিন আহমদ চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে গ্রেফতারকৃত তিন আসামির বিরুদ্ধে পাঁচদিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। আদালত শুনানী শেষে তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। #
পাঠকের মতামত: