ঢাকা,সোমবার, ৭ অক্টোবর ২০২৪

নিলাম দেখিয়ে ভাগ করে নিলেন দুই ইউপি চেয়ারম্যান!

চকরিয়ায় চিংড়িজোনে মৎস্য অধিদপ্তরের ২৭টি স্লুইস গেট জলদস্যু দখলে!

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার অবস্থিত সুন্দরবনে কালো সোনা নামে খ্যাত চিংড়িজোনে তৈরী করা মৎস্য অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের মালিকানাধীন ২৭টি স্লুইস গেট জবরদখলের ঘটনা ঘটেছে। গত চারদিন আগে উপকূলীয় অঞ্চলের একটি জলদস্যু চক্র প্রকাশ্যে চিংড়িজোন এলাকায় অস্ত্রের মহড়া দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে দায়িত্বরত লোকজনকে সরিয়ে দিয়ে স্লুইস গেটগুলো দখলে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

চিংড়িজোনের ভুক্তভোগী মৎস্যঘের মালিক ও চাষীদের দাবি, জবরদখলে নেওয়া স্লুইস গেট (জলকপাট) গুলো মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে শুক্রবার নিলামের মাধ্যমে বহিরাগত লোকজনের মাঝে বরাদ্দ দিয়েছেন স্থানীয় সাহারবিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নবী হোছাইন চৌধুরী। নিলামের আগে ২৭টি স্লুইসগেটের মধ্যে সাহারবিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নবী হোছাইন চৌধুরী ২১টি ও চিরিঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জামাল হোছাইন চৌধুরী ৬টি মিলেমিশে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। নিলামে একটি স্লুইস গেট দুই লাখ টাকা থেকে তিন লাখ টাকায় হাতবদল হয়েছে বলে দাবি করেন চিংড়ি ঘের মালিক ও চাষীরা।

এ ব্যাপারে সাহারবিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নবী হোছাইন চৌধুরী বলেন, তার নেতৃত্বে কোন ধরণের স্লুুইস গেট দখল করা হয়নি। চিরিংগা ইউনিয়নের সওদাগরঘোনা এলাকার দুটি অস্ত্রধারী গ্রুপ এসব স্লুইস গেট গুলো দখল করেছে। তবে আমার ইউনিয়নে স্লুইস গেট গুলো হলেও বিগত চেয়ারম্যানের আমলে হাতছাড়া হয়েছে। সেই থেকে অস্ত্রধারীরা এসব স্লুইস গেট গুলো নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে জানান তিনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চকরিয়া উপজেলার উপকূলীয় অঞ্চলের চিংড়িজোনে কক্সবাজার মৎস্য অধিদপ্তরের মালিকানাধীন ২৪টি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩টি স্লুইস গেট রয়েছে। এসব স্লুইস গেট দিয়ে যুগের পর যুগ ধরে সামুদ্রিক লবণ পানি ঢুকিয়ে মৎস্য চাষ করে আসছেন মৎস্য চাষীরা।

জানা গেছে, স্লুইস গেট লাগোয়া ২০-২২টি মৎস্য ঘেরের মালিকরা কমিটি গঠনের মাধ্যমে নীতিমালার আলোকে পাউবো ও মৎস্য অধিদপ্তর থেকে অনুমতিপত্র (একসনা লিজ) নিয়ে প্রতিবছর প্রতিটি স্লুইস গেট গুলো রক্ষণাবেক্ষণ করে বৈধভাবে পরিচালনা করে আসছেন। তাতে এতদিন ঘের মালিক ও স্লুইস গেট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোনধরনের জোট ঝামেলা হয়নি।

ভুক্তভোগী মৎস্য ঘের মালিক ও চাষীরা বলছেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে তাঁরা এতদিন শান্তিপূর্ণ ভাবে স্লুইস গেট গুলো রক্ষণাবেক্ষণ করে আসলেও গত চারদিন আগে হঠাৎ করে একদল জলদস্যু চিংড়িজোনে এলাকায় অবৈধ অস্ত্রের মহড়া দিয়ে আমাদের লোকজনকে বিতাড়িত করে স্লুইসগেট গুলো দখলে নিয়েছে।

এদিকে চিংড়ি ঘের মালিক ও চাষীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার ৫ অক্টোবর চকরিয়া উপজেলা পরিষদের মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় চিংড়িজোনের স্লুইস গেট গুলো জবরদখল নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে। সভায় চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী চিংড়িজোনের এসব স্লুইস গেট আগের মতো শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ঘের মালিক ও চাষীদের মাধ্যমে রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিতের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তাগিদ দিয়েছেন।

চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফারহান তানজিম বলেন, চিংড়িজোনের এসব স্লুইসগেট স্থানীয় ঘের মালিকরা কমিটি গঠনের মাধ্যমে নীতিমালার আলোকে প্রতিবছর মৎস্য অধিদপ্তর থেকে অনুমতিপত্র নিয়ে রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছেন। কিন্তু সম্প্রতি সময়ে কে বা কারা এসব স্লুইস গেট দখলে নিয়েছে এ বিষয়ে কেউ আমাদের কাছে অভিযোগ করেনি।

তিনি বলেন, ভুক্তভোগী ঘের মালিকরা লিখিত অভিযোগ করলে অবশ্যই মৎস্য অধিদপ্তর সরকারি সম্পদের সুরক্ষা নিশ্চিতে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেপি দেওয়ান বলেন, চিংড়িজোনের স্লুইস গেট গুলো সরকারি সম্পত্তি। যদি কেউ এসব স্লুইস গেট অবৈধভাবে দখল করে থাকে তাহলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, স্লুইস গেট গুলো রক্ষণাবেক্ষণে কারা কিভাবে কাজ করছেন সেটি জানতে মৎস্য অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার পর জবরদখলের সাথে জড়িতদের বরুদ্ধে আইনীগতভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানয়েছেন ।

পাঠকের মতামত: