কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বদরখালী বাজার থেকে আওয়ামীলীগ নেতা নুরুল হুদা(৬০)কে কথাকাটির এক পর্যায়ে অপহরণ নিয়ে জবাই করে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। অপহরণের প্রায় ২০মিনিটের মাথায় তাকে জবাই করা হয়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি ।গত ৩০ জুন রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঘটেছে এ ঘটনা। হত্যাকারীরা জামাত বিএনপি’র বলে দাবী করছেন, নিহতের পরিবারের সদস্যরা। নিহত নুরুল হুদা বদরখালী ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের মগনামাপাড়ার মৃত আবুল আহমদের পুত্র। তিনি বদরখালী বাজারের মা মণি ক্লথ ষ্টোরের মালিক ও বদরখালী ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ড আওয়ামলীগের সহ সভাপতি। আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ জানান; তিনি প্রায় ১৮ বছর ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদের দায়ীত্ব পালন করেছেন। বদরখালী পুলিশ ফাঁড়ির ৫শত গজের মধ্যে ঘটেছে এ ঘটনা।
নিহত নুরুল হুদার ছেলে মোঃ শাহাজাহান জানান; আমার পিতা ৩০জুন রাত ১১টার দিকে আমার পিতা নুরুল হুদা বদরখালী বাজারের ফেরী ঘাটে হোটেল মজিদিয়া নামের একটি চায়ের দোকানে চা খাওয়ার সময় আড্ডায় মন্তব্য করেন ‘রাজাকারেরা দেশের শত্রু, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা কোন রাজাকারকে রেহায় দেবেন না’ এ সময় একই এলাকার নুর আহমদের ছেলে জামায়াত কর্মী আবু বক্কর ছিদ্দিক প্রকাশ লম্বা ছিদ্দিক নুরুল হুদার সাথে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। কথাকাটির এক পর্যায়ে জামায়াত কর্মী আবু বক্কর ছিদ্দিকসহ আরও ৫/৬জন সন্ত্রাসী তাকে দোকান থেকে বের করে জোর পূর্বক একটি সিএনজি চালিত অটো রিক্সায় তুলে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এসময় নুরুল হুদার আত্মীয় স্বজন পাশের পুলিশ ফাঁড়িতে খবর দেয়। তাৎক্ষনিক নুরুল হুদার আত্মীয়স্বজন পুলিশ নিয়ে অপহরণকারীদের ধাওয়া দেয়। অপহরণের প্রায় ২০মিনিটের মধ্যে তাকে বদরখালীর ৩ ব্লকের টোটিয়াখালী এলাকার (বাজার থেকে প্রায় ১কিলোটির দুরে) কিল্লায় নিয়ে জবাই করে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই নুরুল হুদা মারা যায়। খবর পেয়ে রাতেই চকরিয়া সদর সার্কেলের এ.এস.পি, চকরিয়া থানার ওসি(তদন্ত) কামরুল আযম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পরে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান।
প্রত্যক্ষদর্শী নিহতের ভাতিজা বুলবুল জানান; তাকে প্রকাশ্যে বাজার থেকে একটি সিএনজি চালিত অটো রিক্সায় তুলে নেয়ার সময় আমরা সাথে সাথে পাশের পুলিশ ফাঁড়িতে যায়। কিন্তু পুলিশ নিয়ে তাদের খুঁজে বের করতে প্রায় ২০-২৫ মিনিট সময় লেগে গেছে। এ সময়ের মধ্যে টোটিয়াখালী কিল্লায় গিয়ে তার জবাই করা রক্তাক্ত নিথর দেহ দেখা যায়। তিনি জানান, আবু বক্কর ছিদ্দিক প্রকাশ লম্বা ছিদ্দিক, তার দুই ভাই কাইয়ুম ও মানিক এবং সোহায়েদ, রাসেল বাহাদুর অপহরণে সময় অংশ নেয়। তারা বাজারের শতশত মানুষের সামনে থেকে তাকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। নাম প্রকাশে অনিশ্চুক এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, অপহরণের ঠিক আগ মূহুর্তে বিএনপি নেতা আহসানুল কাদের সাব্বিরকে ঘটনার অদুরে দাঁড়িয়ে আবু বক্কর ছিদ্দিকের সাথে কথা বলতে দেখা গেছে। আবু বক্কর ছিদ্দিক প্রকাশ লম্বা ছিদ্দিক বিএনপি নেতা আহসানুল কাদের সাব্বিরের ভাইজি’র জামাই।
এলাকাবাসি জানান; গত ইউপি নির্বাচনে নিহত নুরুল হুদার ভাতিজা হেফাজ সিকদার স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন। ওই নির্বাচনের তাকে মাত্র কয়েকটি ভোটে পরাজিত দেখানো হয়েছে। এ নিয়ে বর্তমানে মামলাও চলছে। ওই নির্বাচন চলাকালীন সময় এবং নির্বাচন পরবর্তী সময়ে এই দু’পক্ষের মধ্যে বেশ কয়েকবার হামলাসহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এলাকাবাসীদের মতে শুধু রাজনৈতিক মন্তব্যের কারণে তাৎক্ষনিক এ ঘটনা ঘটেনি। তাদের মধ্যে ইউপি নির্বাচনের বিরোধও চলে আসছে। একটি সুত্র জানিয়েছে; নিহত নুরুল হুদা ও আবু বক্কর ছিদ্দিক পরস্পর চাচা ভাতিজা। নুরুল হুদা আওয়ামীলীগ নেতা এবং আবু বক্কর ছিদ্দিক প্রকাশ লম্বা ছিদ্দিক জামায়াত কর্মী। ইউপি নির্বাচনের নুরুল হুদা স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ভাতিজা হেফাজ সিকদারের পক্ষে এবং আবু বক্কর ছিদ্দিক প্রকাশ লম্বা ছিদ্দিক শশুর সাবেক শিবির নেতা বিএনপি প্রার্থী আহসানুল কাদের সাব্বিরের পক্ষে কাজ করেছেন। ঘটনার ব্যাপারে জানার জন্য আহসানুল কাদের সাব্বিরের মুঠো ফোনে বললে তিনি জানান, এ ঘটনায় আমার দূরতম সম্পর্ক নেই। আমি নির্বাচনের পর থেকে ঢাকায় ছিলাম। মাত্র কয়েকদিন আগে এলাকায় এসেছি। পুলিশের ফোন পেয়ে আমিও অপহরণ কারীদের ধাওয়া করে আটকের চেষ্টা করেছি। আহসানুল কাদের সাব্বির জানান, আবু বক্কর ছিদ্দিক জামায়াত করেন। তিনিও চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ার হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। শেষে আমার পক্ষে কিছুদিন প্রচারণায় অংশ নেয়ার পর শেষের দিকে আর আমার পক্ষে কাজ করেননি।
এ ব্যাপারে চকরিয়া থানার ওসি জহিরুল ইসলাম খান জানান, পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেছেন। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশি অভিযান অব্যাহত আছে। এ ব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে তিনি জানান। #
পাঠকের মতামত: