ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪

চকরিয়ার ১৮ ইউপি বেশির ভাগ জেনারেটর ও ফটোকপি মেশিন বিকল

মাহমুদুর রহমান মাহমুদ, চকরিয়া ::
জন্মনিবন্ধন, মৃত্যু, উত্তরাধিকার (ওয়ারিশ) সনদসহ নানা আবেদন অনলাইনে নিরবচ্ছিন্ন করার উদ্দেশ্যে কক্সবাজারের চকরিয়ার ইউনিয়ন পরিষদগুলোয় জেনারেটর কেনা হয় এক যুগ আগে। একই সঙ্গে কেনা হয়েছিল ফটোস্ট্যাট মেশিন ও প্রজেক্টর। এর কয়েক বছর পর ইউপি কার্যালয়গুলোতে কেনা হয় এলইডি টেলিভিশন। তবে অযত্ন-অবহেলায় এসব যন্ত্রের অধিকাংশই অকেজো। ফলে কোটি কোটি টাকার যন্ত্র জনসাধারণের কোনো কাজে আসছে না।

সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদ সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইউপি সচিবের ভাষ্য, এসব উপকরণ ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তারা ব্যবহার করতেন। তাদের আয় থেকে জেনারেটর খরচ বহনের নিয়ম। তবে বেশির ভাগ উদ্যোক্তা জেনারেটর খরচের জন্য পরিষদের দিকে চেয়ে থাকতেন। এ ছাড়া ফটোকপিয়ার মেশিনের টোনার কার্ট্রিজ শেষ হয়ে গেলে এর ব্যয়ভারও পরিষদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতেন। কিন্তু এসব খাতে খরচের তহবিল পরিষদে নেই। বর্তমানে বিদ্যুতের সমস্যাও আগের মতো নেই। ফলে অব্যবহৃত অবস্থায় গুদামে এসব মূল্যবান যন্ত্র পড়ে আছে।

এ বিষয়ে মন্তব্য করতে সংশ্লিষ্ট অনেকেই নাম না প্রকাশের শর্ত দেন। বেশির ভাগ ইউপি সচিব বলেন, অন্তত ১২ বছর আগে কেনা জেনারেটর, ফটোস্ট্যাট মেশিন যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের অভাবে বিকল হয়ে আছে। একই অবস্থায় পড়েছে এলইডি টিভিও। একজন সচিবের ভাষ্য, এলইডি টিভি বেশির ভাগ ইউনিয়ন পরিষদে ব্যবহৃতই হয় না। জমি কেনাবেচার জন্য ইউপি এক শতাংশ হারে যে কমিশন পায়, ওই টাকা থেকেই কেনা হয়েছিল যন্ত্রগুলো।

বমুবিলছড়ি ইউপি সচিব অনিল কান্তি সুশীলের দাবি, ওই পরিষদের টাকায় কেনা জেনারেটর, এলইডি টিভি ও ফটোস্ট্যাট মেশিন সচল আছে। খুটাখালী ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখানের মেশিনগুলোও মোটামুটি কাজে লাগছে।

ঢেমুশিয়া ইউপি সচিব ফয়সাল উদ্দিন জানিয়েছেন, ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ান পার্সেন্টের টাকায় ২০১১ সালে জেনারেটর, ফটোস্ট্যাট মেশিন, প্রজেক্টর কেনা হয়। এ ছাড়া ২০১৮ সাল নাগাদ পরিষদে কেনা হয় এলইডি টিভি। তাঁর মতে, বর্তমানে হাতেগোনা কয়েকটি পরিষদ ছাড়া অধিকাংশ পরিষদেই জেনারেটর, ফটোস্ট্যাট মেশিন, প্রজেক্টর ও এলইডি টিভি নষ্ট।

এসব কারণে সেবাগ্রহীতারা কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত। বিদ্যুৎ না থাকলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পরিষদে অবস্থানের পর বাড়ি ফিরছেন।

এ তথ্য জানিয়ে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের বাসিন্দা আশরাফ উদ্দিন সাজিদ বলেন, ওই পরিষদে জেনারেটর, ফটোস্ট্যাট মেশিনসহ অন্যান্য উপকরণ নষ্ট দীর্ঘদিন। ফলে তাঁর মতো সেবাগ্রহীতারা প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

বদরখালী ইউনিয়ন পরিষদেও জেনারেটর, ফটোস্ট্যাট মেশিন, প্রজেক্টর বিকল। বিষয়টি স্বীকার করে ইউপি চেয়ারম্যান নূরে হোসেন আরিফ জানিয়েছেন, বিকল এলইডি টিভিটি মেরামতের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইউপি সচিব জানিয়েছেন, উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে চার-পাঁচটি পরিষদে মোটামুটি কাজ চলছে। বাকি সব ইউনিয়নে জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য কেনা এসব উপকরণ নষ্ট হয়ে গেছে।

কাকারা ইউপি চেয়ারম্যান শাহাব উদ্দিন নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই দেখছেন জেনারেটর ও এলইডি টিভি বিকল। এগুলো পরিষদেই আছে জানিয়ে তিনি বলেন, জনস্বার্থে এসব যন্ত্র সচল করতে জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার শাখার পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, ইউপিতে এসব যন্ত্র যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি। সেবাগ্রহীতাদের দুর্ভোগের বিষয়টি জেনেছেন। তা বিবেচনায় নিয়ে যন্ত্রগুলো মেরামতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন।

 

পাঠকের মতামত: