নিজস্ব প্রতিবেদক ::
কাউসার উদ্দিন কছির (৪২)। পিতা মৃত ঠান্ডা মিয়া। বাড়ি কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডে কাহারিয়াঘোনা এলাকায়। বর্তমান তিনি চকরিয়া উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। চকরিয়া-পেকুয়া আসনের সাবেক এমপি জাফর আলমের হাত ধরে অল্পদিনে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন যুবলীগ নেতা কছির। তার বিরুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জমি দখল, চিংড়িঘের দখল, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দুবাইতে টাকা পাচার, থানার দালালি সহ সাধারণ মানুষের জায়গা জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও রয়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হলে পালিয়ে যান এই যুবলীগ নেতা।
যে মানুষ নিজের সংসার চালাতে হিমশিম খেতেন। তেমন পড়ালেখাও করতে পারেনি। কিছুদিন ছাত্রলীগ করার সুবাদে নজরে আসেন কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতার। ২০১২সালে ওই নেতার আর্শিবাদে চকরিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হন কছির। এরপর থেকে চাঁদাবাজি, পদবাণিজ্য ও জমি দখলে জড়িয়ে পড়েন তিনি। ওইসময় পদ বাণিজ্য করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এভাবে উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব টাকা ছাড়া স্বাক্ষর করতেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।
পরবর্তীতে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ২০১৫ সালে উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হন কাউসার উদ্দিন কছির। একইভাবে যুবলীগেরও পদবাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। এরপর থেকে আর ফিরে থাকাতে হয়নি তাকে। দ্রুত সময়ে মালিক হয়ে যান গাড়ি-বাড়ির। কক্সবাজার-১ আসনের সাবেক এমপি জাফর আলমের কাছের লোক হওয়ায় চকরিয়া উপজেলা এলজিইডি ও প্রকল্প কর্মকর্তার অফিসের টেন্ডারবাজির নিয়ন্ত্রণ, ঠিকাদারি এবং অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে ফুলে-ফেঁপে উঠতে থাকেন। রাফি এন্টারপ্রাইজ নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে চকরিয়া-পেকুয়া উপজেলার এলজিইডির বেশিরভাগ ঠিকাদারি কাজ বাগিয়ে নিতেন তিনি। কোটি কোটি টাকার কাজের কমিশন নিয়ে সাব কন্ট্রাক্টে বিক্রি করে দিতেন। চকরিয়া সরকারি হাসপাতালে রোগীদের জন্য খাদ্য সরবরাহ করতেন তিনি। ওইসময় খাদ্য সরবরাহ করার সময় ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সরকারি নিয়ম মতো খাদ্য সরবরাহ না করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এভাবে অল্প সময়ের ব্যবধানে শতকোটি টাকার মালিক হয়ে যান কছির। এছাড়াও তার নামে পৌরশহরে চিরিঙ্গায় রাফি এন্টারপ্রাইজ নামে দুই কোটি টাকা মূল্যের টাইলসের দোকান, থানা সেন্টারের পাশে ২ কোটি টাকা মূল্যের ৫টি দোকান, চকরিয়া থানার পাশে ৪২ কড়া জমির উপর নির্মিত ৭ কোটি টাকা মূল্যের ৬ তলা বাড়ি, ইডেনপার্কের পাশে ৪ কোটি টাকা দামের ২ কানি জমি, ঢেমুশিয়া ইউনিয়নে ৫ কোটি টাকা মূল্যের ২৭ কানি জমি, চকরিয়া পল্লী বিদ্যুত অফিসের পাশে ২ কোটি টাকা দামের ৬২ কড়া জমি, দুবাইতে ২ কোটি টাকা দামের দুটি দোকান, কোনাখালী ইউনিয়নে ৬ কোটি দামের অর্ধশত কানি জমি, নিজস্ব ১১ লাখ টাকা দামের একটি জীপ গাড়ি ও ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা দামের একটি মোটরসাইকেল রয়েছে। ক্ষমতাসীনদলের যুব সংগঠনের নেতা হওয়ার সুযোগে চিংড়িজোনে দুটি স্লইচ গেট দখল করে ভোগ করেছেন। এছাড়াও তার বাহিনী দিয়ে রামপুর ও চরণদ্বীপ চিংড়িজোনে প্রায় এক হাজার একর চিংড়িঘের দখল করে অবৈধভাবে দখলে রেখে লুটপাট করেছেন। এভাবে নামে বেনামে শতকোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক বনে যান এই যুবলীগ নেতা কছির।
তার মাত্রাতিরিক্ত অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয় থেকে দুদক তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে। পরবর্তীতে সাবেক এমপি জাফর আলম প্রভাব খাটিয়ে যুবলীগ নেতা কছিরের বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগটি ধামাচাপা দেন। তবে স্থানীয়রা বলছেন, কছির শতকোটি টাকার মালিক হলেও দুদক এসব সম্পদের খোঁজ করেনি। মূলত সাবেক এমপি জাফর আলমের চাপে দুদক তখন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেনি বলে অভিমত তাদের।
স্থানীয়দের অনেকেই অভিযোগ করে জানান, বীর মুক্তিযোদ্ধার কন্যার কোটি টাকার বসতভিটা দখল করে আলোচনায় আসেন এই যুবলীগ নেতা। পরবর্তীতে যুবলীগ থেকেও বহিস্কার হয়েছিলেন। টাকার জোরে পদ ফিরে পেয়ে আরও বেপরোয় হয়ে উঠেন যুবলীগ নেতা কছির।
শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা সার্জেন্ট আবুল কালামের মেয়ে ও চকরিয়া উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাছিনা বেগম জানান, চকরিয়া পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের ভরামুহুরীতে তার ক্রয়কৃত ৩৪ কড়া জমি রয়েছে। সেখানে অর্ধেক অংশে দালান ঘর নির্মাণ করে বসবাস করছি। ২০১৫ সালে যুবলীগ নেতা কছির ভূয়া কাগজপত্র সৃজন করে তার ১ কোটি টাকা দামের বসতভিটা জোরপূর্বক দখল করে নেন। তার বসতভিটা দখল নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অভিযোগ করেছিলাম। এরপ্রেক্ষিতে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। এরপরও তার বসতভিটার দখল ছাড়েনি ওই যুবলীগ নেতা। বর্তমানে বসতভিটায় তার বড় ভাই সাবেক যুবলীগ নেতা আব্বাছ উদ্দিন ও তার পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর কছির আত্মগোপনে চলে যান। ভুক্তভোগিরা এ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে চকরিয়া থানায় কয়েকটি মামলা দায়ের করেছেন।
তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে কাউসার উদ্দিন কছিরের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
পাঠকের মতামত: