ঢাকা,রোববার, ১০ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়ার প্রয়াত সাংবাদিক এবিএম ছিদ্দিকের পরিবারের সদস্যদের মানবেতর জীবন-যাপন:খোঁজ রাখেনা কেউ!

abm chiddik famili harbangমুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া :::

সাংবাদিক এবিএম ছিদ্দিক। চকরিয়া ও পেকুয়া উপকূলীয় এলাকার একজন সাহসী ও নির্লোভ সাংবাদিকের নাম। তিনি মৃত্যু অবধি এ জনপদের সু:খ ও দু:খের কথা পত্রিকায় লেখনির মাধ্যমে জাতীর সামনে উপস্থাপন করেছিলেন। পুরো জীবন-যৌবন কাটিয়ে দিয়েছেন মফস্বল এলাকায় চারণ সাংবাদিক হিসেবে পত্রিকায় লেখালেখি করে। পুরো চকরিয়া ও পেকুয়া অঞ্চলের একজন জনপ্রিয় সাংবাদিক ছিলেন। লোভ লালসায় কোনদিন স্পর্শ করতে পারেনি তাকে। দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনে নানা সময়ে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজেকে সামলিয়ে কাজ করে গেছেন। সাহসী ও নির্ভীক এ কলম সৈনিক বিভিন্ন সময়ে প্রভাবশালীদের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে সত্যের পক্ষে লিখে গেছেন নিরন্তর…। এই সাহসী সাংবাদিকের বাড়ি চকরিয়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী হারবাং ইউনিয়নের বৃন্দাবন খিল গ্রামে। তার পিতার নাম মৃত আলতাফ মিয়া।

 গত বছরের ৮ আগষ্ট সাংবাদিক এবিএম ছিদ্দিক চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গতকাল শুক্রবার (১৩ মে) সকালে এ প্রতিবেদকসহ আরো কয়েকজন সংবাদকর্মী পেকুয়া থেকে প্রয়াত সাংবাদিক এবিএম ছিদ্দিকে বাড়ী যান। এসময় সাংবাদিকদের দেখে এবিএম ছিদ্দিকের পরিবারের সদস্যরা আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন।

 সাংবাদিক ছিদ্দিকের স্ত্রী জানান, তার স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে তাদের খোঁজ এলাকার কোন এমপি, জনপ্রনিধি, প্রশাসন ও সাংবাদিকেরা নেয়নি। পরিবারের একমাত্র উপার্যনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে চার সন্তানকে নিয়ে নির্বাক পয়ে পড়েছেন তিনি। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। এরপর তার এক ছেলে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় হারবাং ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে উত্তীর্ণ হয়েছেন। এক মেয়ে দশম শ্রেণীতে পড়ে। ছোট এক ছেলে পড়ে ২য় শ্রেনীতে। সাংবাদিক ছিদ্দিকের স্ত্রী আরো জানান, স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে খুব কষ্টে এলাকাবাসী ও আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে ধার কর্য্য করে সংসার চালাচ্ছেন। একটাকার সঞ্চয়ও তার স্বামী তাদের জন্য রেখে যেতে পারেনি। এখন সন্তানদের নিয়ে তিনি ভবিষ্যত অন্ধকার দেখছেন। সাংবাদিক এবিএম ছিদ্দিক মারা যাওয়ার পর চকরিয়া ও পেকুয়ার বহু সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধিরা তার পরিবারকে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও কেউ তার পরিবারের সহায়তায় এগিয়ে আসেনি।

 সাংবাদিক ছিদ্দিকের বড় ছেলে মারুফ বলেন, আব্বু মারা যাওয়ার পর থেকে খুব কষ্টে তারা দিনাতিপাত করছেন। খেয়ে না খেয়ে অর্ধাহারে তারা দিনাতিপাত করছেন। এ বারের এসএসসি পরীক্ষায় পাশ করেছি। এখন টাকার অভাবে কলেজে ভর্তি হতে পারবো কিনা জানিনা। অভাব যেখানে নিত্যসঙ্গী; সেখানে কলেজে ভর্তি হয়ে কিভাবে পড়ালেখা চালিয়ে যাবো।

 জানা গেছে, প্রয়াত সাংবাদিক এবিএম ছিদ্দিক অধুনালুপ্ত জাতীয় দৈনিক পত্রিকা মিল্লাত, দৈনিক পূর্বকোণ, দৈনিক পূর্বকোণ, দৈনিক খবরপত্র ও দৈনিক ডেসটিনি পত্রিকাসহ আরো বহু পত্রিকা ও সাময়িকীতে পালাক্রমে দীর্ঘ ৩০ বছরেও বেশি সময় ধরে পেকুয়া ও চকরিয়া উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। মৃত্যুর পূর্বে তিনি দৈনিক খবরপত্র ও দৈনিক ডেসটিনির পেকুয়া প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। এছাড়াও সাংবাদিক এবিএম ছিদ্দিক পেকুয়া উপকূলীয় প্রেস ক্লাবের সহ-সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। বিভিন্ন সময়ে তিনি পেকুয়া ও চকরিয়ার বহু সামাজিক ও সাংবাদিক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিল। রাজনীতিতে তেমন সক্রিয় না থাকলেও এবিএম ছিদ্দিক জাতীয় পার্টির হারবাং ইউনিয়ন শাখার সহ-সভাপতিও ছিলেন।

 সরেজমিনে সাংবাদিক ছিদ্দিকের বাড়ীতে গিয়ে দেখা গেছে, জরাজীর্ণ একটি বাড়ীতে অতিকষ্টে বাস করছেন তার স্ত্রী ছেলেমেয়েরা। সাংবাদিক এবিএম ছিদ্দিক জীবিত থাকাকালে এতদ: অঞ্চলের মাঠি ও মানুষের কথা বলে গেছেন। ন্যায়ের পক্ষে হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে নিরন্তর সংগ্রাম করে গেছেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। সমাজের এ আলোকিত মানুষটির পরিবারের সহায়তায় কি আমরা কিছু করতে পারিনা? সাংবাদিক ছিদ্দিকের স্ত্রী মানণীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা চেয়েছেন। এছাড়াও পেকুয়া চকরিয়া ও কক্সবাজারের সাংবাদিক সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দদের কাছেও সহায়তা কামনা করেছেন।

পাঠকের মতামত: