সেলিম উদ্দিন, ঈদগাঁও (কক্সবাজার) প্রতিনিধি ::
ঘুর্ণিঝড় মোরা ও পরবর্তী বর্ষণে দুর্ভোগ পিছু ছাড়ছে না কক্সবাজার সদরের পোকখালী ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্থ গোমাতলীবাসীর। গোমাতলী গ্রামীণ জনপথের মানুষের দুর্ভোগ ব্যাপক আকার ধারন করেছে। দুটি ভাঙন দিয়েই জোয়ারের পানি ঢুকে পুরো গোমাতলীর ৮ গ্রাম পানিতে প্লাবিত হচ্ছে।
গ্রামীণ রাস্তা ঘাট ভেঙ্গে-চুরে ক্ষত বিক্ষত হয়ে পড়েছে। ঘুর্ণিঝড় মোরায় ক্ষতিগ্রস্ত গোমাতলীর ২ হাজার পরিবার কোনরূপ সরকারী-বেসরকারী ত্রাণ সহায়তা ছাড়াই ঘুরে দাঁড়ানো চেষ্টা চালাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনদের মাঝে সরকারের সহযোগীতার আশ্বাসের ফুলঝুড়িতে নিরব ক্ষোভ বিরাজ করতে দেখা গেছে। এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের ২০ দিন পেরিয়ে গেলেও রাস্তা ঘাট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো মেরামত বা পুণ:নির্মাণে কোন উদ্যোগ নেই।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, সাম্প্রতিক প্রবল বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে গোমাতলীর প্রায় সর্বত্র গ্রামীণ যাতায়াত ব্যবস্থার ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। ইউনিয়নের পশ্চিম গোমাতলীর হামিজ্জিঘোনা, দক্ষিন ঘোনা, সোজার ঘোনা, বিরাশি ঘোনা, বোরাকঘোনা, কাটাঘোনা, মেজর ঘোনা, আব্দুল্লাখানের ঘোনা, এ ব্লক, ডি ব্লক, ও সি ব্লক ঘোনা জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেঙ্গে গেছে বাড়ি ঘর, গাছপালা। পানি বন্দী রয়েছে ২-৩ হাজার মানুষ। জোয়ারের পানির তোড়ে এসব গ্রামীণ সড়কসহ আরো অনেক সড়কের এইচবিবি বা বিছানো ইটের অনেকাংশ ভেঙ্গে চুরমার হয়ে উঠে গিয়ে পাশ্ববর্তী খাদে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। জরুরী মেরামত ও সংস্কার না হওয়ায় উপড়ে পড়া এসব ইট স্থানীয় কতিপয় লোকজন রাতের অন্ধকারে চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ৩০ মে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় মোরার আঘাতে ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের তৈরীকৃত তালিকা অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ী প্রায় ১ হাজার পরিবার কোন ধরনের উল্লেখযোগ্য সাহায্য সহযোগীতা পায়নি।
সরেজমিন এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, ইউনিয়নের ১শ মিটার ভাঙ্গনকৃত বেড়ীবাঁধ সংস্কার না হওয়ায় জোয়ার ভাটার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে গোমাতলী ইউনিয়নের শত শত পরিবার। যার কারণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে রয়েছে। উদ্বেগ আর উৎকন্ঠায় রয়েছে অভিভাবক মহল। গত বছর ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে এলাকার ৬ নং ¯ুইস গেইটের বেড়ীবাঁধটি ভেঙ্গে যায়। সংস্কার না হওয়ায় পূর্ণিমার জোয়ারে লবণ মাঠ, চিংড়ি ঘের, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও চলাচল রাস্তা তলিয়ে যায় প্রতিনিয়ত। শিক্ষার্থীরা যেতে পারে না স্কুল মাদ্রাসায়। ক্ষতিগ্রস্থ ¯ুইস গেইট দিয়ে জোয়ারের পানি নিয়মিত প্রবেশ করার কারণে বিস্তীর্ণ এলাকার ডি ব্লক, এ ব্লক, রিয়াইজ্যাকাটা ও বারডইল্যা ঘোনায় চলছে জোয়ার ভাটা।
লবণাক্ত পানি ঢুকে মানুষের ঘরবাড়ি, ফসল, বীজতলা, চিংড়িঘের,ও রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। পরিকল্পিত বেড়ীবাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ জনগণ বৃষ্টি ও আকাশের মেঘ কালো হলেই ভয়াবহ ঘুুর্ণিঝড়ের আতঙ্কে রীতিমত ভয়ে থাকেন। শীঘ্রই অরক্ষিত এ বেড়ীবাঁধ নির্মাণের জোর দাবী জানান স্থানীয়রা। ১৯৯১ সালে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া এ বেঁড়িবাধ ও স্লুইস গেইটসমুহ সংস্কারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে টেকসই কোন পরিকল্পনা গ্রহণ না করার ফলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে এলাকার বিভিন্ন মহলের ধারনা। ইউপি চেয়ারম্যান রফিক আহমদ জানিয়েছেন, মোরা পরবর্তী ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের মাঝে ১ হাজার করে টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
এদিকে জোয়ারের পানির পাশাপাশি ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সব শ্রেনিপেশার মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে আগের চেয়ে আরো কয়েকগুন। বিধ্বস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ির অধিকাংশ নেহায়েত অতিদরিদ্র পরিবারের একমাত্র সম্পদ কাঁচা ঘর। যেগুলো মেরামত বা জরুরী সংস্কারের সামথ্য অনেকের নেই। কক্সবাজার সদর এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোরা ও জোয়ারের পানির তোড়ে গোমাতলীর প্রায় গ্রামীণ রাস্তা ঘাটের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যেগুলো জরুরী ভিত্তিতে সংস্কার ও পুর্নবাসন করা খুবই জরুরী।
পাঠকের মতামত: