ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

কক্সবাজার ভুমি অধিগ্রহণ এল.এ শাখায় ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্ণীতির অভিযোগ

dআবদুর রাজ্জাক, কক্সবাজার-

কক্সবাজারে ভুমি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল কর্মকর্তার কার্যালয়ে (এল.এ শাখা) ব্যাপক অনিয়ম,দুর্নীতি ও কমিশন বানিজ্যর ডিপোতে পরিনত হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বলতে গেলে এই অফিসের সব দূর্ণীতি ও অনিয়মই যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। এই শাখায় মোটা অংকের উৎকোচ না দিলে কোন ফাইল নড়েনা বলে জানান ভুক্তভোগীরা। প্রকৃত জমির মালিক ও চাষীরা অধিগ্রহণকৃত ভুমি ও অবকাঠামোর ক্ষতি পুরণের টাকা উত্তোলনের জন্য ভুমি অধিগ্রহন কর্মকর্তা,জেলা প্রশাসকের কার্যালয়,কক্সবাজারের নিকট আবেদন করলেও তাদের দাবীকৃত মোটা অংকের উৎকোচ দেয়া না হলে আবেদনগুলি দিনের পর দিন মাসের পর মাস ফাইল বন্দি হয়ে আটকে থাকে। ফলে ক্ষতিপুরনের টাকা পাওয়া বড় কটিন হয়ে পড়ে । সরকারী কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে এই অপকর্ম প্রকাশ্যে চালিয়ে যাচ্ছে উক্ত অফিসে কর্মরত (এল.এ শাখায়) দুর্ণীতিবাজ সার্ভেয়ার মাহবুবুর রহমান ও মো: মুজিবের নেতৃর্ত্ব সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট ও তাদের নিয়োজিত দালাল চক্ররা। দালালদের সাথে তাদের সখ্যতা বেশী থাকায় অফিসের গুরুত্বর্পূণ ফাইল তারা বাইরে নিয়ে গিয়ে কাজ করে। ফলে অফিসের অনেক গোপনীতা ফাসঁ হওয়ার আশংকা রয়েছে। এমনকি ওই দূণীতিবাজ সার্ভেয়ারা মোটা অংকের বিনিময়ে উক্ত অফিসের বিভিন্ন গুরুত্বর্পূণ ও মূল্যবান ফাইল তাদের কক্সবাজার কলাতলীস্থ হোটেল সী-প্যালেচের সামনে তাদের বিলাশ বহুল বাসায় নিয়ে গিয়ে কাজ করে। তারা এই অপকর্ম প্রকাশ্যে চালিয়ে গেলেও এই ব্যাপারে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ এখনো পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় তারা আরো বেপরোয়া হয়ে প্রকাশ্যে জনসম্মুখে ঘুষের টাকা গ্রহণ করছে। অপরদিকে তাদের সাথে বিভিন্ন ভুমিদস্যু ও মাফিয়া চক্রের সাথে রয়েছে সু-সর্ম্পক । ফলে তারা বিভিন্ন নীরহ লোকজনের অধিগ্রহণকৃত ভুমির ক্ষতিপুরনের টাকা উক্ত মাফিয়া চক্রের সাথে আতাঁত করে মোটা অংকের বিনিময়ে তাদের নামে চেক সই করে দেয়। উক্ত সিন্ডিকেট চক্রটির রয়েছে ইউনিয়ন ভিত্তিক নিয়োগকৃত দালাল। মুলত ওই দালালদের মাধ্যমে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর তাদের কক্সবাজার কলাতলীস্থ বাসায় লক্ষ লক্ষ টাকা লেন দেন হয় । বলতে গেলে উক্ত সিন্ডিকেট ও তাদের নিয়োজিত দালাল চক্ররাই পুরো অফিস নিয়ন্ত্রণ করেন। উক্ত সিন্ডিকেটের নিয়োগকৃত দালালরা হলেন,উপজেলার হোয়ানক হরিয়ার ছড়ার নুরুল হকের পুত্র আমান উল্লাহ,কেরুণতলীর আ¦দুল মাবুদের পুত্র মোসলেম উদ্দিন, হোয়ানক কালাগাজির পাড়ার মো: শামশুর পুত্র মো: সোহেল, হোয়ানক খোরশা পাড়ার মো: নুরুর পুত্র মো: হাবিব,কালারমারছড়া মোহাম্মদ শাহ ঘোনার আবদুল খালেকের পুত্র মো: জসিম উদ্দিন,মো: আলী,হোয়ানক বড়ছড়া এলাকার মৃত গোলাম কুদ্দুসের পুত্র মো: শহিদুল্লা,মাতারবাড়ির মুরাদ,সাইফুল,চত্তার,বাবর ও তার ছোট ভাই ওয়ালিদ এবং ইনানী মেরিন ড্রাইভ এলাকার জামাল,শাহাবউদ্দিন। এক কথায় বলতে গেলে উক্ত সিন্ডিকেট চক্র এবং তাদের নিয়োজিত দালালদের হাতে জিম্মী হয়ে আছেন ভুমি অধিগ্রহণ এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিক ও চাষিরা । এই সিন্ডিকেট চক্রটি বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্ণীতির মধ্যমে ভুমি অধিগ্রহণ এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিক ও চাষিদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। অপরদিকে উক্ত চক্রটি মোটা অংকের বিনিময়ে একজনের ভুমি অধিগ্রহণ ও অবকাটামোর টাকা অন্যজনকে প্রদান করছে। ফলে মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক,কালারমারছড়া,ধলঘাটা ও মাতারবাড়ি ইউনিয়ন এবং কক্সবাজার সদরের ইনানীতে বসবাসরত ভুমি অধিগ্রহণ এলাকার প্রকৃত জমির মালিক ও চাষিরা তাদের জমির ক্ষতিপুরনের জন্য কক্সবাজারের ভুমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তার নিকট আবেদন করলেও উক্ত সিন্ডিকেটকে তাদের দাবীকৃত টাকা না দেওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থরা তাদের জমির ক্ষতিপূরণের টাকা না পেয়ে বর্তমানে তাদের পরিবার পরিজনদের নিয়ে চরম মানবেতর জীবণ যাপন করছে।

এদিকে ভুমি অধিগ্রহণ এলাকার প্রকৃত জমির মালিক ক্ষতিগ্রস্থ উপজেলার হোয়ানক হরিয়ারছড়ার আজিজুর রহমানের পুত্র আলী মিয়া, একই এলাকার মৃত আবদুল কাদেরের পুত্র মফিজুর রহমান ও হোছন আলীর মেয়ে দিলোযারা বেগম কন্নাজড়িত কণ্ঠে এই প্রতিনিধিকে জানান, অধিগ্রহণকৃত ভুমি ও অবকাঠামোর ক্ষতিপুরণের টাকা পাওয়ার জন্য বিগত ৪/৫ মাস আগে ভুমি অধিগ্রহন কর্মকর্তা,জেলা প্রশাসকের কার্যালয় কক্সবাজারের নিকট লিখিত আবেদন করেও উক্ত সিন্ডিকেট ও দালাল চক্রের দাবীকৃত টাকা না দেওয়ায় ফাইল আটকে থাকায় এখনও পর্যন্ত তারা তাদের ক্ষতিপুরনের টাকা পায়নি। ফলে তারা তাদের পরিবার পরিজনদের নিয়ে চরম মানবেতর জীবণযাপন করছে। টাকা ছাড়া কোন ফাইল নড়েনা বলে জানান ক্ষতিগ্রস্থরা।

এদিকে উক্ত দূণীতিবাজ সার্ভেয়ার মাহমুদুর রহমান ও মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য গত ২৯/০৮/২০১৬ ইংরেজী তারিখ কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের নিকট লিখিত আবেদন করেন প্রকৃত জমির মালিক হোয়ানক বড়ছড়া এলাকার মৃত শের আলীর পুত্র মো: ইউনুছ (যাহার আবেদন নং-৯৮৯/৯৯০)ও একই এলাকার মৃত আবদুল কাদেরের পুত্র মফিজুর রহমান (যাহার আবেদন নং-৫১৬/৫৫৩) ।

অপরদিকে সার্ভেয়ার মাহমুদুর রহমান ও মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে অধিগ্রহণকৃত ভুমি ও অবকাঠামোর ক্ষতি পুরণের টাকা আতœসাৎ’র অভিযোগে এনে গত ০২/০৯/২০১৬ ইংরেজী তারিখ কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের নিকট লিখিত আবেদন করেন উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের মৃত হামিদুর রহমানের পুত্র জাফর আলম। (যাহার আবেদন নং-১০০২/১১৯২/১১৯৩)

জানা যায়,কক্সবাজারকে একটি ‘উন্নতমানের বিশেষ’ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং পরিপূর্ণ পর্যটননগরী হিসেবে গড়ে তুলতে বর্তমান সরকারের ‘রূপকল্প ২০২১’ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে কক্সবাজারের মহেশখালীর ‘মাতারবাড়ি তাপভিত্তিক কয়লা বিদ্যুেকন্দ্র’ এলএনজি ও কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুেকন্দ্র, মাতারবাড়ীতে ৭০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড নতুন বিদ্যুৎ প্রকল্প, ইজিসিবি লিমিটেড কর্তৃক ১২০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণ, মহেশখালী-আনোয়ারা গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন স্থাপন, অর্থনৈতিক জোন স্থাপন, ইন্টলেশন অব সিঙ্গেল মুরিং (এসপিএম) প্রকল্প, কক্সবাজার ফ্রি ট্রেড জোন, মহেশখালী অর্থনৈতিক জোন-১, মহেশখালী অর্থনৈতিক জোন-২ ও মহেশখালী অর্থনৈতিক জোন-৩ প্রকল্প স্থাপনের জন্য মহেশখালী দ্বীপের হোয়ানক, হেতালিয়া, করইয়ারদিয়া, কালারমারছড়া ও পানিরছড়া ধলঘাটা ঘটিভাঙা, সোনাদিয়া, কুতুবজোম মৌজা এবং কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ ইনানী মৌজায় সর্বমোট ২১ হাজার ৪’শত ৭২ একর জমি সরকার ভুমি অধিগ্রহণ করে এবং উক্ত এলাকার জমির মালিক ও ক্ষতিগ্রস্থ চাষীদেরকে ক্ষতিপূরণের জন্য টাকা ছাড় করা হলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের চরম অবহেলা ও দূর্ণীতির কারণে এখনো পর্যন্ত তারা তাদের ক্ষতিপূরনের টাকা পাওয়ায় সচেতন মহলের মাঝে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পে জালিয়াতি করে ২১ কোটি টাকা সরকারি অর্থ আত্মসাতের মূলহোতা জমির উদ্দীনকে (৩৬) গত ০৩ মে মঙ্গলবার বিকালে চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ থেকে দুদকের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কর্মকর্তা আবদুল আজিজ ভুইয়্যা নেতৃতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর একটি টিম তাকে গ্রেফতার করে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম নাজমুল হোসেন চৌধুরীর আদালতে হাজির করা হলে আদালতে বিজ্ঞ বিচারক তার জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে প্রেরণ করেন।এছাড়া আদালতের আদেশ সংক্রান্ত নথি কক্সবাজারের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন বিচারক।

মামলায় অভিযোগ সূত্রে জানা যায়,জমির উদ্দিন ২০১৪ সালে মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পে নিজেকে ক্ষতিগ্রস্থ চিংড়ি ব্যবসায়ী হিসেবে উল্লখ করে ভূয়া অরেজিস্ট্রিকৃত কাগজপত্র দাখিল করে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নিকট ক্ষতিপূরণের আবেদন করেন। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নিকট হতে ২০১৪ সালের ২৭ জুলাই ক্ষতিপূরণ বাবদ চেকমূলে সরকারের তহবিল থেকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ২ কোটি ৪ লক্ষ ১ হাজার ৪৭৭ টাকা গ্রহণ করেন।পরে এই বিষয়ে অভিযোগ উঠার পর তার দাখিলকৃত কাগজপত্র পর্যালোচনা করে ভূয়া প্রমাণিত হওয়ায় গত ২০১৪ সালের ৭ ডিসেম্বর কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি হুকুম দখল কর্মকর্তা এম এম মাহমুদুর রহমান ব্যবসায়ী জমিরের বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ৪২০, ৪০৬, ৪৬৭, ৪৬৮ ও ৪৭১ ধারায় কক্সবাজার সদর আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে মামলাটি তদন্তের জন্য দুদকের কাছে হস্তান্তর করেন। এসময় মামলার আরেক আসামী রফিকুল ইসলাম প্রকাশ ভেন্ডার রফিক কৌশলে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে চিংড়ি প্রকল্পের ক্ষতিপূরণে ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে ২১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন জমির উদ্দীনসহ একটি সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটের অন্য সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন রফিকুল ইসলাম প্রকাশ ভেন্ডার রফিক, কালারমারছড়ার ঝাপুয়ার মাওলানা সেলিম উদ্দীন (বর্তমানে কক্সবাজার শহরের থানা মার্কেটে দোকান করেন), ছালেহ আহমদসহ আরো ২০জন মতো। এই ঘটনায় মাতারবাড়ির কায়সারুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি বাদি হয়ে তৎকালীন জেলা প্রশাসক রুহুল আমিন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জাফর আলম, জমির উদ্দীন, ভেন্ডার রফিক, মাওলানা সেলিম উদ্দীনসহ ২১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলাটি তদন্তের জন্য দুদককে হস্তান্তর করেন আদালত।

এদিকে অভিযুক্ত সার্ভেয়ার মাহমুদুর রহমান ও মুজিবুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে উল্লেখিথ অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবী করে মোবাইল ফোনের লাইন কেটে দেন।

এব্যাপারে ভুমি অধিগ্রহণ এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ প্রকৃত জমির মালিক ও চাষীরা দূণীতিবাজ সার্ভেয়ার মাহমুদুর রহমান ও মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন পূর্বক অভিলম্ভে তাদের ভুমি/অবকাঠামোর ক্ষতিপুরণের টাকা প্রদান করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কতৃপর্ক্ষের নিকট আকুল আবেদন জানান।

পাঠকের মতামত: