এম.শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার, ৬ ফেব্রুয়ারী ॥
পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনাময় কক্সবাজারের বিমানবন্দরটি আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরণের কাজ শুরু করেছে সরকার। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক মানে উন্নয়নের প্রথম পর্যায়ের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। এতে করে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে নতুন মাত্রা যোগ হবে, বিশ্বের কাছে আরো একধাপ এগিয়ে যাবে কক্সবাজার। জেলায় চলমান সরকারের বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের জন্যও গেটওয়ে হবে কক্সবাজার বিমান বন্দরটি এমটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। গত বছর ২ জুলাই গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে’র মাধ্যমে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জানা যায়, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ও সরকারের আওতায় প্রথম পর্যায়ে বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ করণের পুরো কাজ শেষ হতে সময় লাগবে ৩০ মাস। বিমান বন্দরের বর্তমান রানওয়ে ৬৭৭৫ বর্গফুট থেকে ৯০০০ ফুটে উন্নীত করা হবে। প্রস্থ বাড়িয়ে ১৫০ ফুট থেকে ২০০ ফুটে উন্নীত করা হবে। স্থাপিত হবে নতুন ডিভিওআর, ডিএমই, আইএলএস, এয়ার ফিল্ড লাইটিং সিস্টেম। রানওয়ের লাইটিং ফ্যাসিলিটিজও বাড়ানো হবে। পাশাপাশি নেভিগেশন এইড বাজানো হবে। উন্নয়ন কাজ সমাপ্ত হলে বড় আকারের ফাইট ল্যান্ডিংয়ের অনুমতি দেয়া যাবে।
এ প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১১২৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা। তৎমধ্যে ৪৪০৯টি ভুমিহীন পরিবারকে বাকঁখালী নদীর পার্শ্বে খুরুস্কুলে পুর্নবাসিত করা হবে। বাকঁখালী নদীর উপর এলজিইডি কর্তৃক নির্মিতব্য সংযোগ সড়কের জন্য ২০০কোটি টাকা ও পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক বাস্তবায়িত পুর্নবাসন প্রকল্পের উন্নয়নের জন্য ২১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।
প্রথম পর্যায়ের এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৭৮ কোটি টাকা। প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের প্রকল্পও ইতোমধ্যে একনেকের সভায় অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
বিমান বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মোঃ আমিনুল হাসিব বলেন, দিনদিন বদলে যাচ্ছে কক্সবাজার বিমান বন্দরের চেহারা। এগিয়ে চলছে উন্নয়ন কাজ। রানওয়ে সম্প্রসারণ, মাটি ভরাট, ভূমি উন্নয়ন এবং ড্রেজিংয়ের কাজ চলছে পুরোদমে। ইতিমধ্যে ২০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্প কাজ মনিটরিং করছে ডিডিসি ( কনসালটেন্ট কোম্পানী) ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে কাজ আর তা নির্দিষ্ট সময়ে আগেই শেষ হবে বলে আশা করলেন ‘হাল্লা-মাহ-সী অকং-জয়েন্ট ভেঞ্চার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মীর আকতার হোসেন লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মানিক কুমার বিশ্বাস।
ব্রিটিশ শাসনামলে নির্মাণ করা হয় এই কক্সবাজার বিমানবন্দর। সময়ের পরিক্রমায় পর্যটন এলাকা হিসেবে দেশী বিদেশে কক্সবাজার হয়ে ওঠে গুরুত্বপূর্ণ। সড়ক যোগাযোগের পাশাপাশি বিমান যোগাযোগের গুরুত্বও বেড়েছে। ফলে এখানকার বিমানবন্দরটিকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার দাবি ছিল দীর্ঘদিন ধরে।
২০০৯ সালের অক্টোবরে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের ‘কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প’ যাত্রা শুরু হয়। প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ ২০১৩ সালের জুন মাসে সমাপ্তির কথা থাকলেও তখন আর হয়ে উঠেনি। সরকারের মহা-পরিকল্পনার আওতায় দ্বিতীয় ধাপের কাজের জন্য ৫০০ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। যা শুরুর কথা ছিল ২০১৩ সালে। ‘ডেভেলপমেন্ট অব কক্সবাজার এয়ারপোর্ট’ প্রকল্প’ নামে ৩০২ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রথম ধাপের কাজ ২০১২ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু নানা কারণে তাও হয়নি। তবে দেরিতে হলেও সরকার এ বিমানবন্দর আধুনিকায়নে উদ্যোগ নেয়। অবশেষে গত বছরের ২ জুলাই গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে’র মাধ্যমে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (প্রথম দফায়) সম্প্রসারণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক মানে উন্নয়নের প্রথম পর্যায়ের কাজ শুরু হয়েছে এবং কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে।
মনোনীত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ‘কোরিয়ান হাল্লা, সী অকং ও বাংলাদেশের মীর আকতার হোসেন (এমএইচ) যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। এতে করে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে নতুন মাত্রা যোগ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। কক্সবাজার পর্যটন শিল্প বিকাশের পাশাপাশি সংযুক্ত হবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে-এমনটাই মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৮ সালে কক্সবাজার বিমান বন্দরে আন্তর্জাতিক বিমানের ফ্লাইট অবতরণ করবে। পর্যটন শিল্পকে বিকশিত করা, সমুদ্রসীমা রক্ষা, কক্সবাজারের উন্নয়নসহ দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সুবিধার্থে সুপরিসর বিমান চলাচল নিশ্চিতকরণে সরকার বদ্ধপরিকর। বাণিজ্যিক গুরুত্বের পাশাপাশি পর্যটনের প্রসারও ঘটবে।
কক্সবাজার বিমানবন্দর ব্যবস্থাপক সাধন কুমার মহন্ত জানান, বিমান বন্দরের নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে আমুল পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমান সরকার কক্সবাজারে যে সব মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে ওই সব প্রকল্পগুলোর গেটওয়ে হচ্ছে বিমান বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প। এটির বাস্তবায়ন হচ্ছে বলে অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মুল্যায়নও হচ্ছে। বিদেশীরা সরাসরি কক্সবাজারে যাতায়ত করতে পারবেন এমনটাই আশা করেন তিনি।
পাঠকের মতামত: