২০১৫ সালের ৫ নভেম্বর কক্সবাজারের চকরিয়া ও কুতুবদিয়া উপজেলা থেকে ‘এফবি সাঈদ হোসেন ও এফবি জেড রহমান ’ নামের দুটি ফিশিং ট্রলারে করে সাগরে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন ৫৭জন মাঝি-মাল্লা। তাদের মধ্যে ৫৪ জনের বাড়ি কক্সবাজার জেলার চকরিয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায়। অপর তিনজনের বাড়ি নোয়াখালী জেলায়। কিন্তু সাগরের মাঝপথে ঢুকে পড়ে পথ হারিয়ে ফেলেন দুটি ট্রলারের মাঝি-মাল্লারা। পরে পথ ভুলে তাঁরা ঢুকে পড়েন ভারতের জলসীমায়। এরপর ভারতের কোষ্টগার্ডের সদস্যরা তাদেরকে ফিশিং ট্রলারসহ সৌর্পদ করেন কলকাতার প্যাজারগঞ্জ কোস্টাল থানায়। ওইসময় কোস্টগার্ডের বাদি হয়ে ৫৭ মাঝি-মাল্লা ও ফিশিং ট্রলারের বিরুদ্ধে মামলা করেন থানায়। পরে তাদেরকে পাঠানো হয় দক্ষিন ছব্বিশ পরগুনার আমলী আদালতে।
জানা গেছে, ভারতের আদালত অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে ৫৭মাঝি-মাল্লাকে তিনমাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেন ওইসময়। আদালতের দেয়া এই সাজার মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি। বর্তমানে এসব মাঝি-মাল্লারা কলকাতার অলিপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি অবস্থায় মানবেতন জীপন-যাপন করছেন। এদিকে নিখোঁজ মাঝি-মাল্লাদের সাজার মেয়াদ শেষ হয়ে এলেও ভারতের কারাগার থেকে তাদেরকে দেশে ফেরত আনতে পারবেনা কিনা তা নিয়ে চরম উদ্বেগ ও অনিশ্চিয়তায় রয়েছে তাদের পরিবার ও স্বজনরা।
স্বজনদের দাবি, ইতোমধ্যে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট মন্ত্রানালয়ের নির্দেশে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার আলাদা আলাদা তদন্তের মাধ্যমে আটক এসব মাঝি-মাল্লারা বাংলাদেশের নাগরিক বলে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন স্বরাষ্ট মন্ত্রানালয়ে। কিন্তু সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের ধীরে চলো প্রদক্ষেপের কারনে প্রতিবেদনের ওই কপি এখনো পররাষ্ট্র মন্ত্রানালয়ে পৌঁছেনি। ফলে পররাষ্ট্র মন্ত্রানালয়ও এব্যাপারে কলকাতাস্থ বাংলাদেশ দুতাবাসকে কিছুই জানাতে পারছেনা। সহসা এ অবস্থার উত্তোরণের মাধ্যমে ভারতের কারাগারে আটক এসব মাঝি-মাল্লা ও ফিশিং ট্রলার দুটি ফেরত আনতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে স্বজনদের পাশাপাশি কক্সবাজার জেলা জাতীয় মৎস্যজীবি সমিতি ও ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতি কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পরাষ্ট্রমন্ত্রী ও কলকাতাস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছে আহবান জানিয়েছেন।
জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলার ফিশিং ট্রলার এফ.বি সাঈদ হোসেনের মালিক সেলিম উদ্দিন ও কুতুবদিয়া উপজেলার ফিশিং ট্রলার এফ.বি জেড রহমানের মালিক জিয়াউর রহমান বাবুল বলেন, ইতোমধ্যে ভারতের কারাগারে আটক ৫৭ মাঝি-মাল্লাসহ ফিশিং ট্রলার দুটি দেশে ফেরত আনতে বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারতের কলকাতাস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে আবেদন করা হয়েছে। আবেদনের প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে এসব মাঝি-মাল্লা বাংলাদেশি নাগরিক কি-না বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন। তাঁরা বলেন, গতমাসে সংশ্লিষ্ট থানার মাধ্যমে পুলিশ সুপারের কার্যালয় ঘুরে তদন্ত প্রতিবেদন স্বরাষ্ট মন্ত্রানালয়ে পৌঁছেছে। তবে এই মুহুর্তে পুলিশ হেড কোয়ার্টাসের নির্দেশে ওই তদন্ত প্রতিবেদনটি যাছাই-বাছাই করছেন পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ (ডিএসবি)।
ফিশিং ট্রলার মালিক ও স্বজনদের দাবি, ভারতের আদালতের দেয়া সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে তদন্ত প্রতিবেদনটি কলকাতাস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস হয়ে অলিপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে যথা সময়ে পৌঁছানো না গেলে সাজাভোগরত এসব মাঝিমাল্লাকে দেশে ফেরত আনতে পারবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে। একই সাথে এমন জটিলতার কারনে এখন পানিতে পঁেচ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কোটি টাকা মূল্যের দুটি ফিশিং ট্রলার।
চকরিয়া থানার ওসি (তদন্ত) মো.কামরুল আজম বলেন, স্বরাষ্ট মন্ত্রানালয়ের নির্দেশে ভারতের কারাগারে আটক চকরিয়া উপজেলার ৮জন মাঝি-মাল্লার ব্যাপারে যাছাই-বাছাই করে বকেটি তদন্ত প্রতিবেদন গতমাসে কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপারের কাছে পাঠানো হয়েছে। যতদুর জানি পুলিশ সুপার কার্যালয় থেকে ওই প্রতিবেদনটি ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট মন্ত্রানালয়ে চলে গেছে। #
পাঠকের মতামত: