কক্সবাজার প্রতিনিধি ::
সরকারি চাকরীর ক্ষেত্রে কক্সবাজার জেলার কোটায় চাকরী পাচ্ছে ভিন্ন জেলার প্রার্থীরা। বিশেষ করে কক্সবাজারে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে স্থানীয়দের কোটায় বাইরের জেলার চাকরী প্রার্থীরা চাকরী নিয়ে যাচ্ছে। ইতি পূর্বে ২৭৪ জন ভিন্ন জেলার চাকরী প্রার্থীরা কক্সবাজারের কোটায় চাকরী পেয়েছে। তবে তারা কেউই বর্তমানে কক্সবাজারে নেই। সবাই নিজ জেলায় বদলী হয়ে চলে গেছেন। এতে এক দিকে কক্সবাজারের ছেলে মেয়েরা সরকারি চাকরী বঞ্চিত হচ্ছে অন্যদিকে স্কুল গুলোতেও শিশুরা শিক্ষা বঞ্চিত হচ্ছে। তবে কর্তৃপক্ষের দাবী সরকারি ভাবে নিয়োগ বিধি মালায় ৭(১)ক ধারার আলোকে কক্সবাজার থেকে যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে বাইরের জেলা থেকে সেই পদ পূরণ করার নিয়ম আছে সেই আলোকে বাইরের জেলার চাকরী প্রার্থীরা চাকরী পাচ্ছে।
কক্সবাজার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১১ মে কক্সবাজারের সহকারী শিক্ষক পদে ৪১১ জন প্রার্থীর বিপরীতে ৬ হাজার ৭৫০ প্রার্থী অংশ নেয়। এখনো ফলাফল হয় নি। তবে এখানে কক্সবাজারের স্থানীয় নাগরিক হতে হবে সেটা বাধ্যতামুলক। কিন্তু এখানে সবাই যে কক্সবাজারের ছেলেমেয়েরা চাকরী পাবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই কারন অতীতেও কক্সবাজারের কোটায় ২৭৪ জন (২০০৯ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত) চাকরী নিয়ে গেছে ভিন্ন জেলার প্রার্থীরা। আলাপকালে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ ওসমান গনি বলেন, ১১ মে হয়ে যাওয়া নিয়োগ পরীক্ষায় বাইরের জেলার কেউ আবেদন করার কোন সুযোগ নাই। তবে নিয়োগ বিধিমালা ৭(১)ক ধারা মতে কক্সবাজারে যদি যোগ্য প্রার্থী যাওয়া না যায় তাহলে সেক্ষেত্রে ভিন্ন জেলা থেকে সেই পদ পূরন করা যাবে।
কিন্তু এই নিয়মের চরম বিরোধীতা করে জেলা আইনজীবি সমিতির সদস্য এড. নাছির উদ্দিন বলেন এটা কোন মতে মেনে নেওয়া যায় না। কক্সবাজারে ৪১১ টি সহকারী শিক্ষকের পদের বিপরীতে আবেদন করেছিল প্রায় ১২ হাজার। যেহেতু ২০১৪ সালের সেই নিয়োগ পরীক্ষা অনৃুষ্টিত হয়েছে ২০১৮ সালে তাই এর মধ্যে অনেকের ভিন্ন জায়গায় চাকরী হয়ে গেছে,বেশির ভাগের চাকরীর বয়স শেষ হয়েছে সব মিলিয়ে এবারো অংশ নিয়েছে ৬ হাজার ৭৫০ জন। তবুও এর মধ্যে কি ৪১১ জন প্রার্থী যোগ্য নাই? মূলত আমি মনে করি এটা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং কোটা পদ্ধতির কুফল। ফলে কক্সবাজারের স্থানীয়রা সরকারি চাকরি বঞ্চিত হচ্ছে আর বড় বড় নেতাদের আত্বীয় স্বজন কক্সবাজারের কোটা দিয়ে চাকরী নিয়ে যাচ্ছে এটা দ্রুত বন্ধ করতে হবে।
এ ব্যাপারে জানলে চাইলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার মৌখিক পরীক্ষায় প্যানেল সদস্য অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন,মুলত মুক্তিযোদ্ধা কোটা,পোষ্য কোটা,পাহাড়ি কোটা,প্রতিবন্ধি কোটা সহ অনেক কোটা আছে যেখানে কক্সবাজারের অনেক পদখালী থাকে কিন্তু দেখা গেছে অন্যজেলায় সেই সব পদ পূরন হওয়ার পরেও অনেক প্রার্থী অপেক্ষমান আছে পরে সরকারি ভাবে সেখান থেকে তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়। তবুও এর ফলে কক্সবাজারের ছেলে মেয়েরা বঞ্চিত হচ্ছে আমি এটা তীব্র সমালোচনা করি।আসলেই কোটা পদ্ধতির কারনে অনেক সমস্যা হচ্ছে এটা পরিবর্তন হওয়া দরকার।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্যানেল সদস্য জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, যে কারনেই হউক কক্সবাজারের ছেলে মেয়েদের নাম্বার কম দেওয়া হয়েছে এতে অনেক ছেলেমেয়ে চাকরী বঞ্চিত হয়েছে। এবার যদি আমি থাকি সেই বিষয়ে কড়া নজরদারী করা হবে। আসলেই নানান কারনে আমরা বঞ্চিত হয়ে পড়ি যা কেউ কোন দিন বলতে দেয় না।
কক্সবাজার সরকারি কলেজের সদ্য অনার্স পাস করা ছাত্র রাসেদুল ইসলাম বলেন, শুধু প্রাথমিকে নয় সব খেত্রে কক্সবাজারের ছেলেমেয়েরা বঞ্চিত। এখানে কোন সরকারি অফিসে একজন পিয়ন দরকার হলেও সেই অফিসের কর্মকর্তার গ্রামের বাড়ি থেকে কর্মচারী নিয়ে এসে চাকরী দেয়। আর কোটার কারনে আমরা সব সময় বঞ্চিত হচ্ছি কোটা পদ্ধতি বাতিল হওয়া খুব জরুরী। এতে প্রকৃত মেধাবিরা সব সময় বঞ্চিত হয়ে আসছে।
কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর একেএম ফজলুল করিম চৌধুরী বলেন, কক্সবাজারের কোটায় বাইরের জেলা ছেলেমেয়েরা চাকরী পাবে এটা কোন ভাবে মেনে নেওয়া যায় না। আর বর্তমান সময়ে কক্সবাজারে যোগ্যপ্রার্থী পাওয়া যাচ্ছেনা এই কথা আমি বিশ্বাস করি না। তবে সরকারি কোন নিয়ম থাকলে সেটা ভিন্ন কথা।
পাঠকের মতামত: