ঢাকা,শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪

কক্সবাজারের কাঁকড়া বিশ্বের ১৮ দেশে রপ্তানি হচ্ছে

কাকড়া,নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার :::

উপকূলীয় জেলা কক্সবাজারে কাঁকড়া চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সাগর বেষ্টিত কক্সবাজারের উপকূলীয় অঞ্চলে রয়েছে এর বিশাল ভান্ডার। সূত্রে প্রকাশ, জেলার উপকূলবর্তী এলাকা সদরের পোকখালী, ইসলামপুর, ভারুয়াখালী, চৌফলদন্ডী, মহেশখালীর ধলঘাটা-মাতারবাড়ি, পেকুয়া, টেকনাফের হোয়াইক্যং-লম্বাবিল, উখিয়ার বালুখালি, রহমতের বিল ও আঞ্জুমানপাড়াসহ আট উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ সম্ভাবনাময় এ পেশাকে জীবিকা নির্বাহের একমাত্র মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারী পৃষ্টপোষকতা এবং অনুকুল পরিবেশ নিশ্চিত করা গেলে সম্ভাবনাময়  এ খাত থেকে প্রতি বছর কয়েক হাজার কোটি টাকার সমপরিমান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও আধুনিক পদ্ধতিতে কাঁকড়া চাষ সম্পর্কে চাষীদের হাতে কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান করা গেলে এটি হয়ে উঠতে পারে দারিদ্র বিমোচনের একটি শক্তিশালী খাত। সংশ্লিষ্টরা জানান, জেলার উপকুলীয় অঞ্চল সমুহের চিংড়ি ঘের, নদীর মোহনা ও সমুদ্রের আশপাশের এলাকা থেকে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠা কাঁকড়া সংগ্রহ করে থাকেন তারা। বর্তমানে বানিজ্যিক ভিত্তিতেও জেলার অনেক স্থানে কাঁকড়ার চাষ করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রগুলো জানিয়েছে। ইসলামপুরের কাঁকড়া ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম জানান, তৃণমূল আহরণকারীদের নিকট হতে ওজন ভেদে প্রতি কেজি ২শ থেকে ৪শ টাকা দরে ক্রয়ের পর সেগুলো চট্টগ্রামের রপ্তানিকারকদের নিকট ৩শ থেকে ৫শ টাকা দরে তারা বিক্রি করে  থাকেন। অত:পর রপ্তানিকারকেরা সেগুলো বিদেশে রপ্তানি করে থাকেন।

জানা যায়, বাংলাদেশে উৎপাদিত কাঁকড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ সমুহ, উত্তর আমেরিকার দেশ, দক্ষিণ কোরিয়া, মিশর, জাম্বিয়া, ঘানা, চীন, জাপান, হংকং এবং থাইল্যান্ডসহ বিশ্বের প্রায় ১৮ টি দেশে রপ্তানী হয়ে থাকে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ কাঁকড়া রপ্তানি করে প্রায় ২শ দশ মিলিয়ন টাকা আয় করে। যার সিংহভাগই কক্সবাজার জেলায় উৎপাদিত কাঁকড়া থেকে প্রাপ্ত। চাষকৃত চিংড়ি সংগ্রহ শেষে ঘের যখন পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে এবং ঘের সংলগ্ন খালি জায়গা, নদীর মোহনাসহ অব্যবহৃত ও পরিত্যক্ত লবনাক্ত ভুমিতে কাঁকড়া চাষ করা যেতে পারে। কারণ বাচ্ছা কাঁকড়া পূর্নাঙ্গ কাঁকড়ায় রুপান্তরিত হতে সময় লাগে মাত্র  ১৫-২০ দিন। স্বল্প পুঁজি ও অল্প পরিশ্রমে অধিক লাভবান হওয়া যায় বলে উপকুলীয় এলাকা সমুহে কাঁকড়া চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বলে জানালেন ভারুয়াখালীর তৃণমুল কাঁকড়া আহরণকারী বিপুল কান্তি দে। তিনি জানান, প্রতিদিন তিনি ৩-৪ কেজি কাঁকড়া সংগ্রহ করে থাকেন। কাঁকড়া বিক্রি করে তার সংসার ভালোভাবে চলছে বলেও তিনি জানান। তার মতে তৃণমূল পর্যায়ের সংগ্রহকারীদের মধ্যে প্রায় ৯০% সনাতন ধর্মাবলম্বী। সংসারের সমস্ত খরচ বাদ দিয়ে কাঁকড়া বিক্রি করে তার প্রতিমাসে ২-৩ হাজার টাকা উদৃত্ত থাকে।

পোকখালীর কাঁকড়া ব্যবসায়ী আহমদ করিম জানান, কাঁকড়া ব্যবসা করে প্রতি মাসে তার ২৫-৩০ হাজার টাকা আয় হয়। তিনি আরো জানান, স্থানীয় ও বিদেশের বাজারে মেয়েলী কাঁকড়ার প্রচুর চাহিদা রয়েছে। ২৫০ -৪৫০ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি মেয়েলী কাঁকড়া ৮৫০-৯০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। তিনি মন্তব্য করেন জেলা মৎস্য সম্পদ অফিস বা বেসরকারী  এনজিও সংস্থার উদ্যোগে যদি কাঁকড়া চাষ ও মার্কেটিং লিংকেজ কর্মশালার আয়োজন করে চাষী, ডিপো মালিক ও ব্যবসায়ীদের উদ্বুদ্ধ করা যেত তবে সংশ্লিষ্টরা কাঁকড়া চাষে আরো বেশী উৎসাহিত হতেন বলে তার ধারনা।

এছাড়া সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করা গেলে নতুন নতুন অনাবাদী ও পরিত্যক্ত জমি কাঁকড়া চাষের আওতায় আনা সম্ভব হত এবং ভুমির সর্বোত্তম সদ্বব্যবহার হত। তৃণমুল আহরণকারী এবং স্থানীয় চাষীদের কাঁকড়া চাষে উৎসাহিত করতে জেলা মৎস্য অফিস থেকে কোন ধরনের সহায়তা প্রদান করা  হয়েছে কিনা জানতে চাইলে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জানান, জেলা মৎস্য অফিসের পক্ষ আজতক এ ধরনের কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি তবে ভবিষ্যতে কাঁকড়া চাষীদের উন্নয়নে সম্ভব সব ধরনের সহায়তা প্রদান করা হবে।

পাঠকের মতামত: