পবিত্র রমজানের শুরু হতে না হতেই উখিয়া উপজেলার হাট বাজার গুলোতে বাজার ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে সাধারণ ক্রেতারা। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নিত্যপণ্য মাছ শাক-সবজিসহ প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়তি। ফলে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া জনসাধারণ। বর্তমানে সবজি দাম যেন, সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। হঠাৎ করে সবজির মূল্য বৃদ্ধিকে ব্যবসায়ীদের কৃত্রিম সংকট বলছেন ক্রেতারা। রমজানে সাধারণ মুসলিম সম্প্রদায় একটু ভাল খাবারের উদ্দেশ্যে ক্রেতারা বাজার মুখী হলেও বাজারে ঢুকে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। রমজান মাসে যেসব পণ্যের চাহিদা বাড়ে সেসব পণ্যের দাম হয়েছে আকাশচুম্বি। বিশেষ করে ছোলা, মসুর ডাল, বুট, বেসন, খেসারির ডাল, বেগুন, পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, আলু, টমেটো, বেগুনসহ বিভিন্ন মাছের মূল্য বেশ ঊর্ধ্বমুখি। চাহিদার তুলনায় বাজারে পণ্য সরবারহ পর্যাপ্ত থাকার পরও দর বাড়ছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। ক্রেতাদের অভিযোগ সরবরাহ বেশি থাকা সত্বেও বেশি দামে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা।
সরেজমিন উখিয়ার কয়েকটি হাট-বাজারে বিশেষ করে উপজেলার ব্যস্থতম স্টেশন উখিয়া দারোগা বাজার, কোটবাজার, পালংখালী বাজার, থাইংখালী বাজার, বালুখালী বাজার, কুতুপালং বাজার, মরিচ্যাবাজার, সোনাপাড়া বাজার সহ বেশ কয়েকটি হাট বাজারে দাম বৃদ্ধি করেছে ব্যবসায়ীরা। অথচ মূল্যবৃদ্ধি না করার জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি প্রশাসনের নিষেধও রয়েছে। তারপরেও কোন আইন বা নির্দেশকে তোয়াক্কা করছেন না ব্যবসায়ীরা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা দরে। যা কয়দিন আগেও ছিল ২৫ টাকা। ভারতীয় পেঁয়াজের দামও বেড়েছে কেজিতে ২ থেকে ৫ টাকা। এদিকে রমজানের অন্যতম প্রয়োজনীয় উপকরণ ছোলা আগের সপ্তাহের চেয়ে তিন থেকে ছয় টাকা বেশি দামে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। প্রতি কেজি ছোলার দাম প্রকারভেদে ৯৫ থেকে ১০০ টাকা, চিনি বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭০ টাকা দরে, কাঁচা মরিচ ৭৫ থেকে ৮০ টাকা, বেগুন ৪০ থেকে ৫০ টাকা, করলা ৩০ থেকে ৪০ টাকা, শশা ৪০ টাকা, টমেটো ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। রমজানের আগেই অস্বাভাবিক হারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ মানুষ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। রমজানে দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তারা প্রশাসনের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। বিশেষ করে রমজানে যে সমস্ত নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র মানুষের নিত্য দিনের প্রয়োজন সে সমস্ত জিনিসের দাম বাড়তে শুরু করেছে। ছোলা প্রতিকেজি ৯৫-১০০ টাকা। রসুন ২২০-২৫০ টাকা, আদা ১৯০-২০০ টাকা, সয়াবিনতেল প্রতি কেজি ওজনের দাম ১০০-১১০ টাকা মসুর ডাল প্রতি কেজি ১৫০-১৬০ টাকা, চিনি প্রতি কেজি ৬৫-৭০ টাকা, গুড়ো দুধ প্রতি কেজি ৭০০-৮০০ টাকা। এদিকে মাছ মাংসের বাজারেও আগুন ধরে আছে। মাংস প্রতি কেজি ৫০০-৫৫০ টাকা, ছাগল ৭৫০-৯০০ টাকা, দেশী মুরগী এক কেজি ৩৫০-৪০০টাকা, ফার্ম মুরগী এক কেজি ১৮০-২২০ টাকা, ছোট মাছ কিনতে গেলে প্রতি কেজি ৩০০ টাকা করে কিনতে হয়। বড় মাছের দামের আগুনে সহজে ধরা যায় না। অপরদিকে তরকারি বাজারেও এখই অবস্থা প্রতিনিয়ত বাড়ছে সবজির দাম। ৭০ টাকার নিচে কোন তরকারি পাওয়া যায় না। আর নতুন তরকারি বাজারে আসলে তো কোন কথাই নেই। প্রতি কেজি ১০০-১৫০ টাকায় বিক্রি হয়। পশ্চিম ডিগলিয়াপালং এলাকার কম্পিউটার অপারেটর মোহাম্মদ ইসমাইল জানান, প্রতি বছর রমজান এলেই পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়া একটি রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। কোনো কারণ ছাড়াই ব্যবসায়ীরা এ সময়টাতে পণ্যমূল্য বাড়িয়ে দেন। এতে আমাদের মতো সীমিত আয়ের মানুষদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। পন্যমূল্য বৃদ্ধির এ প্রবণতা উখিয়ার ব্যস্ততম কোটবাজার, মরিচ্যা, সোনাপাড়া, কুতুপালং, বালুখালী, থাইংখালী এবং পালংখালী একই দাম বিরাজ করছে। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে প্রত্যেক পন্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে অস্বভাবিক হারে। এসব বাজারের ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পন্য মূল্য আদায় করছেন বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন। সচেতন মহলের দাবী জরুরী ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা না করলে সাধরন ক্রেতারা আরও ভোগান্তিতে পড়তে হবে বলে মনে করছেন অনেকেই।
এ ব্যাপারে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাঈন উদ্দিন বলেন, রমজানে যেন বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং ভেজালমুক্ত হয় তার জন্য তদারকিতে মনিটরিং জোরদার থাকবে। তিনি রমজানে ক্রেতাদের সুবিধার্থে ব্যবসায়ীদের সংযত হয়ে ব্যবসা করার আহ্বান করেন। শীঘ্রই ভ্রাম্যমান অভিযান পরিচালনা করা হবে তিনি জানান।
পাঠকের মতামত: