ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

ঈদগাঁওর ৬ ইউনিয়নের ভোটযুদ্ধ কাল : চেয়ারম্যান প্রার্থী ৫২ জন, শেষ মুহুর্তে কালো টাকার ছড়াছড়ি : উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ভোটাররা

All-Candidates_1সেলিম উদ্দিন, ঈদগাঁও (কক্সবাজার ) প্রতিনিধি ::
শেষ ধাপে ৪ জুন কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁওর ৬ ইউনিয়নের ৫২ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীর ভোট যুদ্ধ কাল, এ ভোট উৎসবকে ঘিরে বৃহত্তর এলাকার পাড়া-মহল¬ার ভোটার সমাজের মাঝে অন্যরকম উৎসাহ ও উদ্দীপনা দেখা দিলেও কিছু কিছু কেন্দ্রে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
জানা যায়, পক্ষকাল ধরে চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্য প্রার্থীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ভোট ভিক্ষায় ব্যস্ত ছিল। পাশাপাশি নির্বাচনের শেষ সময়ে প্রতিটি ইউনিয়নের পাড়া-মহল¬ায় নির্বাচনী আমেজে ভরপুর ছিল। যে যার যার অবস্থান থেকে ভোটারদের সাথে মত বিনিময়, গণসংযোগসহ কৌশলাদি চালিয়েছিল। পর্যটন শহর কক্সবাজার সদরের প্রবেশদ্বার খ্যাত বৃহত্তর ঈদগাঁওতে এবার আওয়ামীলীগ-বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ছাড়াও স্বতন্ত্র কিংবা বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে নির্বাচনী লড়াই তুঙ্গে। এদিকে বৃহত্তর ঈদগাঁওর ছয় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য প্রার্থীরা তাদের কাঙ্খিত ভোট আদায়ের লক্ষ্যে মাঠে নেমেছে কোমর বেঁধে। অন্যদিকে বৃহত্তর ঈদগাঁওতে চেয়ারম্যান পদে ৫২ জন, সাধারণ সদস্য পদে ২৮০ জন ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ৭৪ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। তন্মধ্যে দুয়েকজন চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করলেও বাকী প্রার্থীরা মাঠ-ঘাট চষে বেড়িয়েছিল দীর্ঘদিন ধরে। তন্মধ্যে- ঈদগাঁওতে ৭ জন, জালালাবাদে ৫ জন, ইসলামাবাদে ৪ জন, পোকখালীতে ৭ জন, ইসলামপুরে ৪ জন ও চৌফলদন্ডীতে ৩ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী বর্তমানে মাঠে রয়েছেন। আবার ঈদগাঁও ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছৈয়দ আলম (মোটর সাইকেল), আ’লীগ মনোনীত প্রার্থী সোহেল জাহান চৌধুরী, বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান ফরিদুল আলম, স্বতন্ত্র প্রার্থী হুমায়ুন তাহের হিমু (চশমা), নুরুল হক নুর (ঘোড়া), নুরুল ইসলাম বাঙ্গালী (টেলিফোন), জাসদ মনোনীত নুরুচ্ছফা (মশাল)। জালালাবাদ আ’লীগ মনোনীত প্রার্থী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইমরুল হাসান রাশেদ, বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সাবেক যুবদল নেতা আলমগীর তাজ জনি, স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যবসায়ী জসিম উল¬াহ মিয়াজী (আনারস), সেলিম উল¬াহ জিহাদী (মোটর সাইকেল), জাসদ মনোনীত রাশেদুল করিম (মশাল)। ইসলামাবাদ ইউনিয়নে আ’লীগ মনোনীত প্রার্থী নুরুল হক, বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মোজাম্মেল হক, স্বতন্ত্র প্রার্থী নুর ছিদ্দিক (মোটর সাইকেল), তৈয়ব (ঘোড়া)। পোকখালী ইউনিয়নে আ’লীগ মনোনীত প্রার্থী মহিদুল¬াহ, বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সেলিম উল¬াহ, স্বতন্ত্র প্রার্থী কারাবন্দী রফিকুল ইসলাম (ঢোল), এম. আবদুল¬াহ খান(আনারস), শামসুল আলম মেম্বার (টেবিল ফ্যান), মৌলভী ফরিদুল আলম (অটোরিক্সা)। ইসলামপুর ইউনিয়নে আ’লীগ মনোনীত প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান মনজুর আলম, বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আবুল কালাম, স্বতন্ত্র প্রার্থী দেলোয়ার হোছাইন (মোটর সাইকেল), মাষ্টার আবদুল কাদের (আনারস)। চৌফলদন্ডী ইউনিয়নে আ’লীগ মনোনীত প্রার্থী ওয়াজ করিম বাবুল কোম্পানী, স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান নুরুচ্ছবিহ (ঘোড়া) ও নুরুল ইসলাম (আনারস)। তবে পোকখালীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে কারাগার থেকে এবার নির্বাচন করছেন ঢোল প্রতীক নিয়ে রফিকুল ইসলাম। পাশাপাশি তার পক্ষে স্ত্রী, ছেলেমেয়েসহ এলাকাবাসী নির্বাচনী মাঠে ছিল। তবে বৃহত্তর এলাকার প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জের কৌতুহলী ভোটারদের মতে, দলীয় প্রার্থীদের ডিঙ্গিয়ে হয়ত শেষ মুহুর্তে চমক দিতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। আবার একাধিক ভোটার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচনের জোর দাবী জানান। অপরদিকে বিভিন্ন ইউনিয়নের সচেতন লোকজনের সাথে কথা হলে তারা স্ব স্ব ইউনিয়নের কিছু কিছু কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে বলে জানান। তন্মধ্যে ইসলামপুরে নাপিতখালী হাইস্কুল, ডুলাফকির সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পশ্চিম খাঁন ঘোনা কেন্দ্রটি ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান চৌধুরী। ইসলামাবাদে গজালিয়া, বোয়ালখালী, পাঁহাশিয়াখালী, ইয়াকুব আলী প্রাইমারী, ওয়াহেদর পাড়া প্রাইমারী স্কুল কেন্দ্রটি ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানান চেয়ারম্যান প্রার্থী নুর ছিদ্দিক। আবার পোকখালী ইউনিয়নে আবু তাহের হেলালী জানান, পূর্ব, পশ্চিম গোমাতলী, গাইট্যা খালী, পোকখালী হাইস্কুল কেন্দ্রটি ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যদিকে ঈদগাঁও ইউনিয়নে আলমাছিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্র, ভাদিতলা কেন্দ্র, কালিরছড়া কেন্দ্র ও ভোমরিয়াঘোনা কেন্দ্র সমূহ চরম ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়েছেন অনেকে। তারা এসব কেন্দ্রে পুলিশী টহল জোরদার করার দাবী জানান।
এদিকে নির্বাচনে ব্যাপক হারে বেড়েছে কালো টাকার ছড়াছড়ি। বিশেষ করে জনপ্রিয়তাহীন কিছু চেয়ারম্যান প্রার্থী টাকার বিনিময়ে ভোট কেনার অপকৌশল হিসাবে প্রতি মুহুর্তে নির্বাচনী আচরণ বিধি লংঘন করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে বেশির ভাগ প্রার্থী উড়ে এসে জুড়ে বসা। তাই কালো টাকা বিলিয়ে নিজেদের বাজারজাত করার চেষ্টা করছে অনেক প্রার্থী। যারা আওয়ামীলীগ, বিএনপি কিংবা অন্য কোন দলের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ব্যানারে লক্ষ লক্ষ টাকার মিশন নিয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।
সচেতন মহলের অভিযোগ, এসব বিষয়ে নির্বাচন কমিশন কিংবা সংশি¬ষ্ট দায়িত্ব প্রাপ্ত রিটার্নিং অফিসারগণকে মৌখিকভাবে জানানো হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ধরণের আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় হতাশ হয়ে পড়েছেন অপরাপর প্রার্থীরা। বিশেষ করে ঈদগাঁওর ৬ ইউনিয়নের মধ্যে পোকখালী, ইসলামপুর ও ইসলামাবাদে কালো টাকার ছড়াছড়ি আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ভোটার জানান। এদিকে ঈদগাঁও, জালালাবাদ, চৌফলদন্ডীতে ইউপি নির্বাচনে কয়েকজন চেয়ারম্যান প্রার্থীর ভোট কেনার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে উপরোক্ত চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বিষয়টি অসত্য বলে দাবী করেন। জালালাবাদ ও ইসলামপুর ইউনিয়নে জামায়াত শিবির নাশকতা ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অন্যদিকে সহজ-সরল ভোটারদের অসহায়ত্বের সুযোগে টাকা দিয়ে চেয়ারম্যান পদ কেনার স্বপ্ন দেখছেন জনবিচ্ছিন্ন চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। ইউনিয়নগুলোতে নির্বাচন পরবর্তী কিংবা চলাকালীন সময়ে বড় ধরণের নাশকতা ঘটানোর আশঙ্কা এড়িয়ে দিচ্ছে না বোদ্ধামহল।
এসব বিষয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, কোন রাজনৈতিক সংগঠনের ক্যাডার বাহিনীর হাতে নির্বাচন পরবর্তী ও চলাকালীন কোন ধরণের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে বিষয়ে প্রশাসন হার্ড লাইনে রয়েছে।

পাঠকের মতামত: