ঢাকা,সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

ঈদগাঁওর প্রতিটি ঘরবাড়ি পানিবন্দি: দূর্ভোগ চরমে: বেড়িবাধ বিলীন: নৌকা দিয়ে পারাপার

এম আবু হেনা সাগর ঃ নিজস্ব প্রতিনিধি, ঈদগাঁও ::_20170725_102412

কয়েকদিন ধরে জেলার অন্যান্য স্থানের ন্যায় বৃহত্তর ঈদগাঁওতে প্রবল বর্ষণ আর পাহাড়ী ঢলে ২য় বারের মত বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে পড়েছিলো ঈদগাঁও বাজার সহ বিশাল এলাকার নিমাঞ্চল। এমনকি বৃহত্তর এলাকা প্রত্যান্ত গ্রামগঞ্জে শতকরা ৮৫ ভাগ ঘরবাড়ি পানি বন্দি হয়ে দূর্ভোগ আর দূর্গতির চরম পর্যায়ে পৌছেছে। বৃষ্টিপাত না কমানোর ফলে জেলা সদরের বৃহত্তর ঈদগাঁও তথা ছয় ইউনিয়নের নিমাঞ্চলে প্রচন্ড পরিমান বন্যা ও বৃষ্টির পানি একাকার হয়ে পড়েছে। তবে বেড়েছে দূর্ভোগ। এদিকে ঈদগাঁও ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী বৃহত্তর মাইজ পাড়ার নাসি খালের কাঠের ব্রীজটি গেল বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় জন ও যানচলাচল বন্ধ বললেই চলে। সরেজমিনের দেখা যায়, গেলো দু’দফা বন্যার ঢলের পানিতে বিশাল এলাকার লোকজন হাবুডুবু খাচ্ছে। গ্রামীণ যোগাযোগ সড়ক ভেঙ্গে যাওয়ার পাশাপাশি চলাচল অনিচ্ছিত হয়ে পড়ে। এতে করে নিদারুন কষ্টে দিনযাপন করছে বন্যা কবলিত এলাকার মানুষজন। পানিবন্দি এলাকার লোকজন এখনো পর্যন্ত চুলাই আগুন জ্বালাতে পারেনি। অনেকে অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে। আবার বহুজন খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনও কাটাচ্ছে। বাড়ির গুছালো জিনিসপত্র বন্যার পানিতে তছনচ হয়ে পড়ে। তবে সাধারণ লোকজনের দূর্ভোগ আর দূর্গতি বেড়েছে অনেকাংশ। অপরদিকে ঈদগাঁও ইউনিয়নের পালপাড়া, ভোমরিয়া ঘোনা, মাইজ পাড়া, চান্দের ঘোনা, কালিরছড়া সহ বিভিন্ন গ্রামঞ্চল পানি বন্দি বললেই চলে। পাশাপাশি বৃহত্তর মাইজ পাড়া হয়ে ঈদগাঁও বাজার, বাসষ্টেশন সহ বিভিন্ন এলাকায় যোগাযোগের আরেক অন্যতম মাধ্যম ঐতিহ্যময় নাসি খালের উপর নির্মিত কাঠের সাঁকোটি গেল বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এই নিয়ে বৃহত্তর এলাকাবাসী চলাচলের ক্ষেত্রে নিদারুন কষ্ট পাচ্ছে। যে ব্রীজ দিয়ে প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থী, চাকুরিজীবি, কর্মজীবি ও শত শত পথচারী অনায়াসে যাতায়াত করত। কিন্তু সম্প্রতি সাঁকোটি ভেঙ্গে যাওয়ায় দুরর্বতি স্থান হয়ে দ্বিগুন টাকা খরচ করে প্রয়োজনীয় কাজকর্মে যেতে হয়। তবে এলাকাবাসীর যোগাযোগের সুবিধার্থে দ্রুত সময়ে এই সাকোঁটি নির্মাণের জোর দাবী জানান এলাকাবাসী। অন্যদিকে জালালাবাদ ইউনিয়নে গেল বন্যার ন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবারও। রাবারড্যাম পয়েন্টের বেড়িবাঁধ ভাঙ্গন আর ঈদগাঁও ফরাজী পাড়ার প্রধান যোগাযোগ সড়কের লরাবাক এলাকায় রাস্তা ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে ঐ সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ। গত বন্যার পর থেকে উক্ত ভাঙ্গনকৃত বেড়িবাধটি ১৫ হাজার বালির বস্তা আর ৬শতটি বাঁশ দিয়ে দ্রুত গতিতে বেড়িবাধ সংস্কারের কাজ চলছিল। তৎমূহুর্তে প্রচন্ড বৃষ্টিপাত আর আবারো বন্যার পানিতে ঐ বেড়িবাধটি তলিয়ে নিয়ে যায়। এদিকে শিক্ষার্থী সহ এলাকাবাসী নৌকায় পারাপার হচ্ছে। যার ফলে বন্যার পানি ইউনিয়নের জলদাস পাড়া, তেলিপাড়া, বাজারপাড়া, লরাবাক, পালাকাটা, বটতলী পাড়া, মোহনভিলা সহ নানা গ্রামাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়ে। ঐ সব এলাকার মানুষজন ব্যাপক কষ্টে দিনপার করেছে। ঠিক একই ভাবে পোকখালী, চৌফলদন্ডী, ইসলামপুর এলাকায় বন্যার পানিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি বাড়িঘর প্লাবিত হয়ে পড়েছে। অবিলম্বে বৃহত্তর ঈদগাঁওবাসীর দিকে সু-নজর দেওয়ার প্রতি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেন অসহায় এলাকাবাসী।

———————————-

প্রচুর বৃষ্টিপাতে এখনো ঈদগাঁওতে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস

॥এম আবু হেনা সাগর ঃ নিজস্ব প্রতিনিধি, ঈদগাঁও॥

কক্সবাজার সদর উপজেলার বৃহত্তর ঈদগাঁওর পাহাড়ী এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে বসবাস করছে লোকজন। দেখার কেউ না থাকায় পাহাড়ের উপরি অংশে বসবাসকারীরা চরম আতংকে রয়েছে। জানা যায়, বৃহত্তর ঈদগাঁওর ইসলামপুর,ইসলামাবাদ,ঈদগাঁও ইউনিয়নের বিভিন্ন পাহাড়ী এলাকায় লোকজন নানা কষ্টের বিনিময়ে বসবাস করে যাচ্ছে। প্রচন্ড বাতাস আর বৃষ্টি হলে পাহাড়ী এলাকায় বসবাসকারী লোকজন পাহাড় ধসের আতংকে থাকে প্রতিনিয়ত। আবার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, অনেকে বর্তমানে পাহাড় কেটে সমতল ভূমিতে পরিণত করেছে। তারা পাহাড় কেটে বসতবাড়ী ও করছে। এছাড়াও প্রায়’শ পাহাড় কাটা অব্যহত থাকায় পাহাড়ের নিচে থাকা জমি গুলো বালি ও মাটিতে ভরে যাচ্ছে। এদিকে পাহাড়ের পার্শ্ববর্তী লোকজনের আরো ব্যাপক অসুবিধা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে অব্যাহত এ প্রবল বৃষ্টিতে কাটা পাহাড়ে ফাটল সহ পাহাড় ভেঙ্গে নিচে গড়িয়ে আসার আশংকা ও প্রকাশ করছেন এলাকার সচেতন মহল। এ ভাবে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের লোকজনকে যদি প্রবল বৃষ্টিপাতে অন্যত্রে সরিয়ে নিয়ে না যায় তা হলে রাঙ্গামাটি,বান্দরবান,চট্টগ্রামের মত পাহাড় ধসের মত পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। পাহাড় ধসের

আতংকে থাকা এলাকা হচ্ছে ঈদগাঁওর কালিরছড়া মুরাপাড়া, ভূতিয়াপাড়া, মেহেরঘোনা, মাছুয়াখালী, ফকিরাবাজার, গজালিয়া সহ ইসলামপুরের বিভিন্ন পাহাড়ী এলাকায়। এদিকে পাহাড় কাটা অপরাধ হলেও অনেকে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে পাহাড় কাটা অব্যাহত রেখেছে। অপরদিকে পাহাড়ের উপরে বসবাবসরত পরিবার গুলো রয়েছে চরম ঝুঁকিতে। চলতি এ বর্ষাকালে তদুপরী যে কোন মুহুর্তে যে পাহাড় ধসের মত ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে বলে জানান গ্রাম গঞ্জের সচেতন লোকজন। স্থানীয় কালিরছড়া এলাকার এক মহিলার মতে, গেল প্রচন্ড বৃষ্টিপাত আর বাতাস হলে নির্ঘূম রাত কাটাতে হয়। কিছুদিন আগে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে তার বাড়ীর উপরে পাহাড় থেকে মাটি নিচে নেমে এসে বাড়ীর দেওয়ালের সাথে ধাক্কা লাগে বলে জানান। আবার পাহাড়ের উচুতে বসবাসকারী পরিবার ঐ সময় উপর থেকে নিচে নেমে এসে আত্মীয়স্বজনের বাড়ীতে আশ্রয় নেয়। পাহাড় কর্তকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবী জানিয়েছে এলাকার সুশীল সমাজ। এ ব্যাপারে ঈদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের এমইউপি কামাল উদ্দিনের সাথে কথা হলে তিনি তার এলাকায় শতকরা নব্বই ভাগ লোকজন পাহাড়ের উপর বসবাস করে চলছে বলে জানান। অন্যদিকে ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমানের মতে, মেহেরঘোনা এলাকায় শতকরা আশি ভাগ লোক পাহাড়ের উপরি অংশে বসবাস করে যাচ্ছে। পাশাপাশি ঝড়-বৃষ্টি হলে প্রতিনিয়ত পাহাড় ধসের আতংকে থাকে তারা। ঈদগাঁও মেহেরঘোনার রেঞ্জ কর্মকর্তার মতে, তার অফিসের আওতাধীন পাহাড়ের উপর ঝুঁকিপূর্ন ভাবে বসবাসকারী লোকজনদেরকে অন্যত্রে সরিয়ে যাওয়ার জন্য বার বার বলা হয়েছে।

পাঠকের মতামত: