কক্সবাজার প্রতিনিধি ::
কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী বুধবার । আর আজ সোমবার রাতেই শেষ হচ্ছে নির্বাচনী প্রচারণা। তাই শেষ মুহুর্তের নির্বচনী প্রচারণা ও গণসংযোগে এখন মহাব্যস্ত প্রার্থীরা। নির্বাচনকে ঘিরে পুরো কক্সবাজারে এখন উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। ভোট গ্রহণ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার জন্য মাঠে নামছে প্রায় এক হাজার জন নিরাপত্তা কর্মী।
গতকাল রোববার বিকেলে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জেলা আইনশৃংখলা কমিটির সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। সভায় তিনি কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘সামনেই জাতীয় নির্বাচন। এই জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে স্থানীয় সরকারের প্রতিটি নির্বাচনকেই আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখছি। সংশ্লিষ্ঠ সকলের সহযোগীতা নিয়ে আমরা কক্সবাজারে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে চাই। এ ক্ষেত্রে সকলের আন্তরিক সহযোগীতা প্রয়োজন।’
সভায় কক্সবাজারের পুলিশ সুপার ড. ইকবাল হোসেন বলেন, ‘নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে যা যা করা দরকার তার সবই আমরা করবো। নির্বাচনে প্রায় এক হাজার জন নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন থাকবে। এখানে বিভিন্ন ক্যাটাগরীতে চার স্তুরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।’
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো: মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘কক্সবাজারে তপসীল ঘোষনার পর থেকে অত্যন্ত সুন্দরভাবে আমরা আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছি। প্রত্যেকটি সংস্থা, প্রার্থী, জনগণ, রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে আমরা সহযোগীতা পেয়ে আসছি। কক্সবাজার পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডে ৩৯টি ভোটকেন্দ্র। সবগুলো কেন্দ্রকে আমরা সেন্সিটিভ হিসেবে নিয়েছি। নির্বাচন কমিশনও এটাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে সেভাবেই আইনশৃংখলা বাহিনী মোতায়েনের ব্যবস্থা করেছেন। আমারা ইতোমধ্যে ১২ ওয়ার্ডের ৩৯টি কেন্দ্রের জন্য নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে ১২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পেয়েছি। প্রত্যেকটি ওয়ার্ডের জন্য একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট। আমরা একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পেয়েছি। ২ প্লাটুন বিজিবি সদস্য আমাদের দেওয়া হয়েছে। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এর ৬টি দল দিয়েছে। বিজিবির বিষয়ে আজকেও একজন উপ-সচিব আমাকে জানিয়েছেন, আমরা যদি চাই বিজিবির আরও একটা টিমকে আমার নিতে পারবো। প্রত্যেক কেন্দ্রে ১২ থেকে ১৪ জন পুলিশ থাকবে। প্রতি দুইটি কেন্দ্রের জন্য একটি করে স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘সকল পক্ষ যদি আন্তরিকতার সাথে ২৫ জুলাই পর্যন্ত সহযোগীতা করে, তাহলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস ২৫ জুলাই সুন্দর একটা নির্বাচন আমরা উপহার দিতে পারবো।’
কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনের সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শিমুল শর্মা বলেন, ‘এবার নির্বাচনে ৩৯টি ভোটেকেন্দ্রে ৩৯ জন প্রিসাইডিং অফিসারের তত্ত্বাবধানে ২২৪ জন সহকারি প্রিসাইডিং অফিসার ও ৪৪৮ জন পোলিং এজেন্ট অফিসার পালন করবেন।’
জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, ভোটগ্রহনের নির্ধারিত দিনের পূর্ববর্তী মধ্যরাত থেকে অর্থাৎ আগামীকাল ২৪ জুলাই দিবাগত মধ্যরাত ১২ টা থেকে ২৫ জুলাই মধ্যরাত ১২ টা পর্যন্ত বেবী টেক্সি/অটোরিক্সা, ট্যাক্সি ক্যাব, মাইক্রোবাস, জীপ, পিকআপ, কার, বাস ট্রাক ও টেম্পো চলাচল করতে পারবে না। এছাড়াও গতকাল রোববার দিবাগত মধ্যরাত ১২ টা থেকে মোটর সাইকেল চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। ভোট গ্রহনের পরদিন অর্থাৎ ২৬ জুলাই সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে। তবে রিটার্নিং অফিসারের অনুমতি সাপেক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী/তাদের নির্বাচনী এজেন্ট, দেশি/বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা শিথিলযোগ্য (পরিচয়পত্র থাকতে হবে)। তাছাড়া নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত দেশি/বিদেশি সাংবাদিক (পরিচয়পত্র থাকতে হবে), নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, নির্বাচনের বৈধ পরিদর্শক এবং কতিপয় জরুরী কাজে যেমন, এ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ডাক, টেলিযোগাযোগ ইত্যাদি কার্যক্রমে ব্যবহারের জন্য উল্লেখিত যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না।
সূত্রমতে, ২৫ জুলাই পৌর এলাকার ১২টি ওয়ার্ডের মোট ৩৯টি কেন্দ্রে একযোগে ভোটগ্রহন করা হবে। ওইসব কেন্দ্রে মোট ভোট কক্ষ থাকবে ২২৪টি। অস্থায়ী কক্ষ থাকবে ১১টি। নির্বাচনে ৮৩ হাজার ৭২৮ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছে ৪৪ হাজার ৩৭৩ জন ও নারী ভোটার রয়েছেন ৩৯ হাজার ৩৫৫ জন।
প্রসঙ্গত, এবারের পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে পাঁচ জন, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১৭ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৬৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
পাঠকের মতামত: