চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের মাঝে গতিশীলতা আনার লক্ষ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর থেকেই অস্থির হয়ে পড়েছে ক্যাম্পাস। বন্ধ হয়ে গেছে সকল ধরনের ক্লাশ ও একাডেমিক কার্যক্রম। দু’একটি বিভাগে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও স্থগিত করা হয়েছে অধিকাংশ বিভাগেরই পূর্ব নির্ধারিত পরীক্ষা। কমিটিতে পদ না পেয়ে পদবঞ্চিতরা ঘোষণা দিয়েছে লাগাতার অবরোধের। প্রতিহতের লক্ষ্যে ক্যাম্পাসে আনন্দ মিছিল করছে পদপ্রাপ্তরা। এরমধ্যে দু’পক্ষের মধ্যে মধ্যরাতে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় আতংকিত ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এখন ছাত্রলীগের ভেতর, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মন্তব্য ছাত্রলীগের গতিশীলতার অর্থ কি তবে অচল ক্যাম্পাস?
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১৯ জুলাই আলমগীর টিপুকে সভাপতি ও ফজলে রাব্বী সুজনকে সাধারণ সম্পাদক করে চবি ছাত্রলীগের এক বছর মেয়াদী কমিটি ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় সংসদ। ২০১৬ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি সভাপতি–সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় কমিটি স্থগিত করে কেন্দ্রীয় সংসদ। দীর্ঘ দিন ধরে স্থগিত থাকায় সংগঠনটির নেতা–কর্মীদের প্রাণের দাবি ছিল পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা। তাদের বক্তব্য ছিল, দলের শৃঙ্খলা ও গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রয়োজন। সর্বশেষ চলতি মাসের ১৮ জুলাই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দু’সদস্যের কমিটি ঘোষণার বছর পূর্ণ হওয়ার দু’দিন বাকী থাকতে সহ–সভাপতি পদে ২৬ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে ৯ জন ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ৯ জনসহ ২০১ সদস্যের কমিটির নাম প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় কমিটি। সকালে অনুমোদন দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ক্যাম্পাসের মূল গেইটে তালা ঝুলিয়ে দেয় পদবঞ্চিতরা।
পাশাপাশি দুপুর আড়াইটার শহরগামী শাটল ট্রেনটিও আটকে রাখে তারা। প্রায় ৩০ মিনিট পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি এসে মূল ফটকের তালা খুলে দেন। পরদিন মঙ্গলবার থেকে অবরোধের ঘোষণা দেয় পদবঞ্চিতরা। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অবরোধ বহাল রেখেছে তারা। এরমধ্যে শাটল ট্রেনের চালককে ধরে নিয়ে যাওয়া, শাটল ট্রেনে হামলা, পুলিশকে আহত করা এবং পদবঞ্চিত ও পদপ্রাপ্তদের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা পর্যন্ত ঘটেছে। কার্যত অচল হয়ে পড়েছে ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাসে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অপরদিকে পরিস্থিতি জানতে কেন্দ্রে তলব করা হয়েছে চবি ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে। কিন্তু পদবঞ্চিতরা বলছে কেন্দ্র থেকে তাদের অভিযোগ শোনার জন্য কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি তাই অবরোধ চলতে থাকবে।
আন্দোলনকারী দুই নেতা রেজাউল হক রুবেল ও আবদুল মালেক বলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে আমাদের দাবীর বিষয়ে এখনো যোগাযোগ করা হয়নি। তাই আমরা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি।
অপরদিকে সিনিয়র সহ–সভাপতি মনসুর আলম বলেন, কেন্দ্রীয় সংগঠন দীর্ঘদিন পর চবি ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করেছেন। আমরা তাদের এ সিদ্ধান্তকে ধন্যবাদ জানিয়েছি ও ক্যাম্পাসে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছি। তবে সংগঠনের কয়েকজন নেতা–কর্মী আন্দোলনে নেমেছেন। আশা করি এ বিষয়ে অতিদ্রুত সমাধান আসবে।
ক্যাম্পাসে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার বিষয়ে চবি প্রক্টর মো. আজগর আলী চৌধুরী বলেন, এটি একটি সংগঠনের নিজস্ব সমস্যা। কিন্তু এ তাদের ভেতরের সমস্যার কারণে এর প্রভাব পড়ছে ক্যাম্পাসের শিক্ষার পরিবেশের উপর। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে দলটির নেতৃবৃন্দকে সমস্যার সমাধানের জন্য অনুরোধ করেছি। এছাড়া আর এক মুহূর্তের জন্যও যেন ক্যাম্পাসের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত না হয় তার জন্য আইন–শৃঙ্খলা বাহিনীকে ক্যাম্পাসের তাদের সর্বোচ্চ দায়িত্বশীল ভূমিকার পরিচয় দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, চবি ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করার পর থেকে গত তিনদিন ধরে বন্ধ রয়েছে ক্লাশ ও একাডেমিক কার্যক্রম। সর্বশেষ বুধবার মধ্যরাতে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির পর থেকে আতংকে রয়েছে ক্যাম্পাসে হল ও কটেজগুলোতে বসবাসরত শিক্ষার্থীরা। বন্ধ রয়েছে শাটল ট্রেন চলাচল।
পাঠকের মতামত: