ঢাকা,বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪

পর্যটন শিল্পে অশনিসংকেত

অবরোধে ফাঁকা কক্সবাজারের হোটেল-মোটেলের ৯০ শতাংশ রুম

ফাইল ছবি
জেলা প্রতিনিধি, কক্সবাজার :: ২৮ অক্টোবর সমাবেশ পণ্ডের পর ২৯ অক্টোবর বিএনপি-জামায়াতের হরতাল ও ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত টানা তিনদিনের অবরোধের প্রভাব পড়েছে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে। ২৯ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত বুকিং থাকা রুমগুলো বাতিল করেছেন বেশিরভাগ পর্যটক। এতে হোটেল-মোটেলের প্রায় ৯০ শতাংশ রুম ফাঁকা পড়ে রয়েছে। ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২০০ কোটি টাকার।

মৌসুমের শুরুতে অনাকাঙ্ক্ষিত হরতাল, অবরোধ কর্মসূচিকে পর্যটনের জন্য অশনিসংকেত হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে অবরোধে কক্সবাজারের সড়কে তেমন প্রভাব ফেলেনি বলে জানা গেছে। সচল রয়েছে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-পথও। এ পথে দুটি পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল নিয়মিত চলাচল করেছে।

জেলা সদর থেকে মাইক্রোবাস ও সিএনজি টেক্সিসহ অন্যান্য ছোট যানবাহন উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিনা বাধায় চলাচল করেছে। টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-পথেও চলাচলকারী তিনটি জাহাজের মধ্যে দুটি পর্যটকবাহী জাহাজ সচল রয়েছে। জাহাজ দুটিতে প্রায় সাতশ পর্যটক সেন্টমার্টিন আসা-যাওয়া করেছে বলে জানান সী-ক্রুজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (স্কোয়াব) সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর।

কক্সবাজার বিমান বন্দরের ব্যবস্থাপক গোলাম মর্তুজা জানান, বিমান বন্দরে ঢাকা থেকে ২২টি ফ্লাইট আসা-যাওয়া সচল রয়েছে। এসব ফ্লাইটে প্রতিদিন দেড় থেকে দুই হাজার যাত্রী যাতায়াত করছেন।

কক্সবাজার জেলা রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি ও জেলা জাসদ সভাপতি নঈমুল হক চৌধুরী টুটুল বলেন, অবরোধের কারণে দূরপাল্লার বাস চলাচল কমে যাওয়ায় পর্যটন শিল্পে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। সোমবার (৩০ অক্টোবর) ৯০ শতাংশ পর্যটক কক্সবাজার ত্যাগ করেন। ফলে লোকসান গুণছেন সাগরপাড়ের রেস্তোরাঁগুলো। অবরোধ চলাকালে পুলিশ প্রহরায় বাস চলাচল বাড়ানো গেলে পর্যটন সচল থাকতো। আমরা প্রশাসনের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করছি।

কক্সবাজার ট্যুরিজম সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, অবরোধের কারণে পর্যটন শিল্পে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। ভরা মৌসুমে হোটেল-মোটেলের প্রায় ৯৫ শতাংশ রুম ফাঁকা যাচ্ছে। মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) আমার হোটেলের (হোটেল ডায়মন্ড) মাত্র তিনটি কক্ষে পর্যটক ছিল।

একই দাবি করেন হোয়াইট অর্কিড হোটেলের মহাব্যবস্থাপক রিয়াদ ইফতেখার।

কলাতলীর তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইসের পরিচালক আবদুল কাদের মিশু বলেন, অবরোধ ঘোষণার পর মঙ্গল থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত যা বুকিং ছিল সব বাতিল করেছেন পর্যটকরা। তারকা হোটেলে থাকা পর্যটকের সিংহভাগই বাসে আসেন।

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, পর্যটন জোনের প্রায় প্রতিটি হোটেলের ব্যবসা খুবই মন্দা যাচ্ছে। প্রায় হোটেলের মাত্র ৫-১০ শতাংশ রুম ভাড়া হয়েছে। হরতাল, অবরোধের কারণে চলতি সপ্তাহে পর্যটন অনুষঙ্গ সব সেক্টর মিলিয়ে কম করে হলেও ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

ওশান প্যারাডাইস হোটেলের ফ্রন্ট অফিস ম্যানেজার আবদুল হান্নান বলেন, সব হোটেলের কর্মজীবীরা অলস সময় পার করছেন। পর্যটক থাকলেই হোটেলের কর্মজীবীরা আনন্দ পায়। রাজনৈতিক পরিস্থিতি যা-ই হোক, সবার প্রতি অনুরোধ পর্যটনকে সব ধরনের ঝামেলার বাইরে থাকার ব্যবস্থা করুন। নইলে সম্ভাবনাময় শিল্পটি মুখ থুবড়ে পড়বে।

পাঠকের মতামত: